বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপটা গুড়িয়ে দেন নিউজিল্যান্ডের তিন স্পিনার। ৯ উইকেটের ৭টি দখলে নেয় তাদের স্পিনাররা। যার ভিতর চার উইকেট গ্লেন ফিলিপসের। প্রথম দুই সেশনে ব্যাট হাতে দারুণ খেলা বাংলাদেশ শেষ সেশনে বিলিয়ে দিয়ে আসে নিজেদের উইকেট। দশম উইকেট জুটিতে দেয়াল হয়ে দাঁড়ালেন শরিফুল-তাইজুল। তাদের ১৯ বলে ২০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে কোনোরকমে দিন পার করেছে স্বাগতিকরা। ফলে প্রথম টেস্টের প্রথম দিন শেষ করে টাইগাররা ৯ উইকেটে ৩১০ রানে। তাইজুল ৮ ও শরীফুল ১৩ রানে অপরাজিত আছেন।
বাংলাদেশের হয়ে ওপেনিং করতে আসা মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির শুরুটা করেন দেখেশুনে। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই রিভিউ নিয়ে বসে নিউজিল্যান্ড। তবে, সেটা ব্যর্থ হয়েছে। কাইল জেমিসনের ডেলিভারি খেলতে গিয়ে প্যাডে লাগান জাকির হাসান। জোড়ালো আবেদন করে কিউইরা। কিন্তু তাতে সাড়া দেননি আম্পায়ার। এরপর রিভিউ নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক টিম সাউদি। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল জাকিরের ব্যাটের ভেতরের কানা ছুঁয়ে গেছে।
ব্যক্তিগত ১ রানের সময় জীবন পাওয়া জাকির নিজের ইনিংসটাকে এরপর বেশি লম্বা করতে পারেননি। স্কোরবোর্ডে তার নামের পাশে আর ১১ রান যোগ করতেই বিদায় নেন তিনি। ম্যাচের ১৩তম ওভারে এজাজ প্যাটেলের অফ স্টাম্পের বল, ব্যাকফুটে গিয়ে কাট করতে চেয়েছিলেন জাকির। কিন্তু বল ঘুরে আঘাত আনে স্টাম্পে।এর আগে ১ চারে ৪১ বলে ১২ রান করেছেন বাঁহাতি ওপেনার। তার বিদায়ে ভাঙল ৩৯ রানের উদ্বোধনী জুটি।
জাকিরের বিদায়ে জয়ের সঙ্গে জুটি গড়েছেন অধিনায়ক নাজমুল শান্ত। দুজন কিছুটা ওয়ানডে স্টাইলে ব্যাটিং করছে। বিশেষ করে অধিনায়ক শান্ত। টাইগার অধিনায়ক ভুলেই গিয়েছেন যে এটা ওয়ানডে বা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ নয়, টেস্ট ম্যাচ। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং দর্শকদের বেশ আনন্দ দিলেও তা বেশিক্ষণ স্থায়ী ছিল না। দলীয় ৯২ রানের সময় ফিরে যান টাইগার অধিনায়ক। গ্লেন ফিলিপসের ফুলটস উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিড-অনে কেন উইলিয়ামসনের তালুবন্দি হয়ে বিদায় নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
এরপর জয়কে সঙ্গ দিতে উইকেটে আসেন মুমিনুল হক। লাঞ্চের কিছুক্ষণ পরেই এই জুটি পঞ্চাশ ছাড়িয়ে যায়। এর ফাঁকে ফিফটি তুলে নেন জয়। দ্বিতীয় সেশনের চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে বাউন্ডারি মেরে পঞ্চাশ করেন তিনি।
তবে দ্বিতীয় সেশনটা দারুণ শুরু করার পরও শেষটা হয়েছে বাজেভাবে। চা বিরতিতে যাওয়ার আগে প্রথমে গ্লেন ফিলপসের বলে ক্যাচ আউট হন মুমিনুল হক। ৭৮ বল খেলে ৪ চারে মুমিনুলের ব্যাট থেকে আসে ৩৭ রান। তার পরের ওভারেই ইশ শোধির বলে মিচেলের কাছে ক্যাচ দিয়ে ১৬৬ বলে ৮৬ রান করে ফেরেন মাহমুদুল হাসান জয়।
মুশফিকুর রহিম ও অভিষিক্ত শাহাদাত হোসেন দীপুর ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় দলীয় দুইশ পূর্ণ হয় বাংলাদেশের। তবে এরপরই আবারও ধাক্কা। এবার আঘাত হানলেন এজাজ প্যাটেল। তার অফ স্টাম্পের বাইরের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মারতে গিয়েছিলেন মুশফিক। ধরা পড়ে যান মিড অফে দাঁড়ানো উইলিয়ামসনের হাতে। ২২ বলে ১২ রান করেন মুশফিক।
অভিষিক্ত দিপুকে নিয়ে ইনিংস মেরামতের চেষ্টায় ছিলেন মিরাজ। শেষ পর্যন্ত কাইল জেমিসনের শর্ট বলের এক ডেলিভারিতে আর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারলেন না টাইগার এই অলরাউন্ডার। ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় স্লিপে। ৩০ বলে ২০ রান করেন মিরাজ।
শেষ স্বীকৃত ব্যাটার সোহানও আউট হন ফিলিপসের বলেই, লেগ স্টাম্পের বাইরের বল তার ব্যাটে লাগলে উইকেটরক্ষক ব্লান্ডেল দারুণ এক ক্যাচ নেন। টেস্ট অভিষেকে চার উইকেট পান তিনি।
তার বিদায়ের পর বাংলাদেশের রান তিনশতে নিয়ে যাওয়ার আশা দেখাচ্ছিলেন নাঈম হাসান। কিন্তু তিনিও জেমিসনের বেশ বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন। ৩ চারে ২৭ বলে ১৬ রান করেছিলেন নাঈম। এরপর শেষ উইকেটে প্রতিরোধ গড়ে অলআউট না হয়ে দিন শেষ করে টাইগাররা।