এবারের এশিয়া কাপের দুর্দান্ত ছন্দে থাকা ভারতকে ৬ রানে হারিয়ে টুর্নামেন্ট শেষ করল বাংলাদেশ। সুপার ফোরের শেষ ম্যাচে রোহিত শর্মাদের মুখোমুখি হয় সাকিব আল হাসানরা। ভারত শেষ চারের প্রথম দুই ম্যাচ জিতে আগেই ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। আর অন্যদিকে টাইগাররা প্রথম দুই ম্যাচ হেরে এই টুর্নামেন্ট থেকে আগেই ছিটকে গিয়েছে। তাই এদিন দুই দলের জন্য ছিল শুধুই নিয়মরক্ষার ম্যাচ। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ আগে ব্যাট করে নির্ধারিত ওভার শেষে ৮ উইকেটে ২৬৫ রান সংগ্রহ করে। জবাবে প্রেমাদাসায় নির্ধারিত ওভারের এক বল বাকি থাকতেই ভারত ২৫৯ রানে গুটিয়ে যায়।
এদিন টস হেরে বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট করতে নামেন অভিজ্ঞ লিটন দাসের সঙ্গে তরুণ তানজিদ হাসান তামিম। এই ম্যাচে জুনিয়র তামিম শুরুটা ভালো করেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। তিনি ১৩ রান করে শার্দূল ঠাকুরের বলে কাটা পড়েন। এর আগে অবশ্য ২ বলে ডাক মেরেছেন লিটন। টাইগারদের ওয়ানডে দলে প্রায় নয় মাস পর দলে জায়গা পাওয়া এনামুল হক বিজয় ব্যাট করতে আসেন তৃতীয় উইকেটে। তিনি নবম বলে ৪ মেরে রানের খাতা খোলার দুই বল পর ঠাকুরের দ্বিতীয় শিকার হয়ে ফেরেন।
বিজয়ের আউটে দলীয় ২৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে টাইগাররা চাপে পড়ে যায়। এরপর সাকিব আল হাসান ও মিরাজ মিলে চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু এর মধ্যে দুবার জীবন পাওয়া মিরাজ ১৩ রান করে আউট হন। তখন ৫৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আরও বেশি চাপে পড়ে যায় বাংলাদেশ। চাপে থাকার মুহূর্তে দিশা দেখালেন তাওহীদ হৃদয়কে সঙ্গে নিয়ে অধিনায়ক সাকিব। এই দুইজনের ব্যাটে স্কোরবোর্ডে ১০১ রান যোগ হয়। ঠাকুরের তৃতীয় শিকারে পরিণত হন ৮৫ বলে ৮০ রান করা সাকিব।
অধিনায়কের বিদায়ের পর শামীম পাটোয়ারী ১ রান করে ফিরে যান। চাপের মুখে ব্যাটিং করে অর্ধশতক তুলে নেন হৃদয়ও। ফিফটির পর ৫৪ রানে তার ইনিংসের সমাপ্ত হয়। হৃদয়ের বিদায়ের পর বাংলাদেশের স্কোর সম্মানজনক জায়গায় নিতে সাহায্য করেন নাসুম আহমেদ ও শেখ মেহেদির জুটি। এই জুটি ৪৫ রান তোলার পর বিদায় নেন নাসুম। ক্যারিয়ার-সেরা ৪৪ রান করা নাসুমকে ফেরান প্রসিদ্ধ কৃঞ্চা। শেষ দিকে শেখ মেহেদির ২৯ ও অভিষিক্ত তানজিম হাসান সাকিবের ১৪ রানের সুবাদে বাংলাদেশ ২৬৫ রানের লড়াকু পুঁজি পায়। ভারতের হয়ে শার্দূল ঠাকুর ৩ উইকেট শিকার করেন।
জবাবে ব্যাট হাতে ভালো শুরু হয়নি ভারতের। তানজিম হাসান সাকিবের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ডেলিভারিতেই রোহিত শর্মাকে শূন্য রানে প্যাভিলিয়ানের পথ দেখান এই পেসার। এরপর পেসার সাকিব ইনিংসের নিজের দ্বিতীয় ওভারে আবারও উইকেট তুলে নেন। এবার তার শিকার ভারতীয় অভিষিক্ত ক্রিকেটার তিলক ভর্মা। অভিষিক্ত তিলক ফেরেন ৫ রানে। বাংলাদেশ ১৭ রানে দুই উইকেট তুলে নিয়ে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করে।
এরপর টাইগারদের ওপর পাল্টা আক্রমণ করেন লোকেশ রাহুল ও শুবমান গিল। এই দুইজনে স্কোরবোর্ডে ৫৭ রান যোগ করার পর মেহেদী থামান ১৯ রান করা রাহুলকে আউট করে। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ ফেরান ৫ রানে থাকা ইশান কিষানকে। রোহিতের দল ১০০ রান তোলার আগেই চতুর্থ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে। এরপর সূর্য কুমার যাদবের সঙ্গে ৪৫ রানের জুটি গড়েন গিল। এই জুটি ভাঙে যাদব ২৬ রান করে আউট হলে। যাদব বিদায় নিলে ৬ষ্ঠ উইকেট জুটিতে রবিন্দ্র জাদেজা ও গিল যোগ করেন ৩১ রান।
জাদেজা বিদায় নিলেও তখনো এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলে যাচ্ছেন ওপেনার গিল। তাকে ফেরানো যাচ্ছিল না কোনোভাবেই। এই ওপেনার ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি তুলে নেওয়ার পর শেখ মেহেদি ১২১ রানে ফিরিয়েছেন তাকে। তার ইনিংসটি সাজানো ছিল ১৩৩ বলে ৮ চার ও ৫ ছক্কায়। এরপর অক্ষর প্যাটেলের ব্যাটে ভারত ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে। কিন্তু মুস্তাফিজের বলে ৪২ রান করে প্যাটেল আউট হলে সে স্বপ্ন ভঙ্গ হয় ম্যান ইন ব্লু দের। প্যাটেলের বিদায়ের পর ভারতের প্রয়োজন ৮ বলে ১২ রান হাতে ১ উইকেট। শেষ পর্যন্ত ইনিংসের এক বল বাকি থাকতে মোহাম্মাদ সামি রান আউট হলে বাংলাদেশ ৬ রানে জয় পায়। এই জয়ে এশিয়া কাপের ১৬তম আসর জয় দিয়ে শেষ করল বাংলাদেশ। টাইগারদের হয়ে মুস্তাফিজ ৮ ওভারে ৫০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন।