ভারতের কাছে হেরে শুরু। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হেরে খাদের কিনারায় যাওয়া পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত খোড়াতে খোড়াতে উঠেছিল সেমি-ফাইনালে। সেখান থেকে নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়ে প্রথম দল হিসেবে সেমি-ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল বাবর আজমের দল। অপরদিক টুর্নামেন্টের শুরু থেকেই দূর্দান্ত ছন্দে থেকে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ইংল্যান্ড।
১৯৯২ সালেও একই ঘটনার সাক্ষী হয়েছিল ক্রিকেট দুনিয়া। সেবার ফরম্যাট ৫০ ওভারের হলেও একইভাবে সেমি-ফাইনাল পেরিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল দুই দল। তাতেই বারবার ফিরে আসছে ১৯৯২ এর সেই স্মৃতি। শুধু তাই নয়, ফাইনালের মঞ্চও যে একই। সেবারও মেলবোর্ন, এবারও সেই মেলবোর্ন।
৩০ বছর আগে মেলবোর্নে উপস্থিত ৮৭ হাজার দর্শককে কাঁদিয়ে গ্রাহাম গুচের ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ শিরোপা ঘরে তুলেছিল ইমরান খানের পাকিস্তান। এবার অবশ্য দুই দলের কেউই প্রথম শিরোপার জন্য লড়াই করবে না। দুই দলের সামনে নিজেদের ট্রফি কেসে ক্রিকেটের ক্ষুদ্রতম সংস্করণের দ্বিতীয় শিরোপা ঘরে তোলার লক্ষ্য। শেষ পর্যন্ত কে শিরোপা ঘরে তুলবে তা দেখার জন্য চোখ রাখতে হবে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডের ব্যাট-বলের লড়াইয়ে।
অবশ্য এই লড়াইয়ের আগে দর্শকদের জন্য একটি দুঃসংবাদ আছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা আছে রোববার (১৩ নভেম্বর) মেলবোর্নে থাকতে পারে তীব্র বৃষ্টি। সেই বৃষ্টিতে খেলা মাঠে না গড়ালেও অবশ্য কোনো অসুবিধা নেই। আছে রিজার্ভ ডে। সেদিন খেলা গড়াবে মাঠে। শেষ পর্যন্ত তা না হলে যুগ্মভাবে শিরোপা জিতে ঘরে ফিরবে দুই দল।
আইসিসির চেষ্টা অবশ্য খেলা মাঠে রাখার। তাদের চাওয়া ফাইনালে দুই দল অন্তত ১০ ওভার খেলুক। তাই ফাইনালের আগে নিয়মেও এনেছে রদ-বদল। আইসিসি সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ফাইনালে দুই দলকে অন্তত ১০ ওভার খেলতে হবে। তার চেয়ে কম ওভারে ম্যাচ খেলা যাবে না।
ম্যাচের আগে প্রেস কনফারেন্সে পাকিস্তান অধিনায়ককে দেখা গেছে বেশ আত্মবিশ্বাসী। ফাইনালের চাপ নিতে নারাজ তিনি। বরং, সর্বশেষ কয়েকদিনে করা উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখার পক্ষে।
ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে কোচ বাবর আজম বলেন, “রোমাঞ্চ আছে। নার্ভাস খুব একটা নই। গত ৩-৪ ম্যাচে দল হিসেবে আমরা ভালো করেছি। সেই বিশ্বাস আমাদের সঙ্গী। ভালো করার বিশ্বাস আছে এবং ফাইনালেও তাই করতে চাই। চাপ তো আছেই। চাপ থাকবেই। তবে চাপ যতটা কাটিয়ে উঠতে পারব, পারফর্ম করার সম্ভাবনা ততই বাড়বে। দল হিসেবে এবং অধিনায়ক হিসেবে চাওয়া থাকবে শান্ত থাকা এবং বিশ্বাস রাখা। তাতে ফলাফল ভালো হবে আশা করি।”
ম্যাচের আগে সৃষ্টিকর্তার উপর বিশ্বাস রাখতে চান বাবর। তিনি সুযোগ দিয়েছেন বলেই বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলতে পারছেন। এমনটা বিশ্বাস রেখেই মাঠে নামবে পাকিস্তান দল।
এই নিয়ে বাবর আজমের ভাষ্য, “আমাদের বিশ্বাসটাই এরকম যে আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা রাখি এবং বিশ্বাস করি, যা কিছু হচ্ছে, আল্লাহর পক্ষ থেকেই হচ্ছে। আল্লাহ আমাদের সুযোগ দেন, কাজে লাগানোর দায়িত্ব ও চেষ্টা করার দায়িত্ব আমাদের। আমাদের চেষ্টা থাকবে নিজেদের সেরাটা দেওয়ার। ফলাফল আল্লাহর হাতে।”
এদিকে ২০১৯ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের পরই বদলে গেছে রঙিন পোশাকে ইংল্যান্ডের খেলার দর্শন। এরই ধারাবাহিকতায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে নিজেদেরকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে নামবে তারা।
ফাইনালের আগে তারা যে আত্মবিশ্বাসী তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। ভারতের মতো শক্তিশালী দলকে উড়িয়ে দিয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করেছে। ফলে তারা যে কিছুটা নির্ভার হয়েই নামবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
তবে ফাইনালের আগে পেশাদারিত্ব ধরে রাখতে কমতি রাখেননি ইংলিশ কাপ্তান জস বাটলার। তিনি বলেন, “স্বাভাবিকভাবেই দলে রোমাঞ্চের অভাব নেই। দেশের হয়ে বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলতে পারা মানে বিরাট সম্মান। খুবই রোমাঞ্চিত আমরা, দলে দারুণ একটি আবহ বিরাজ করছে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আগের পারফরম্যান্সগুলো আমাদেরকে বিশ্বাস জোগাচ্ছে অবশ্যই। তবে কালকে এসব কিছুই কাজে লাগবে না। নতুন দিন, কঠিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে নতুন খেলা। এটা তো জানা কথা, ট্রফির জন্য লড়াই কখনোই সহজ নয়।”
ফাইনালের আগে পাকিস্তান দলে নেই কোনো চোট সমস্যা। এই নিয়ে অবশ্য একটু ব্যাকফুটে আছে ইংল্যান্ড। ইনজুরির কারণে সেমি-ফাইনালে পায়নি ডেভিড মালান ও মার্ক উডকে। ফাইনালে তারা খেলতে পারবেন কি-না তা নিয়ে এখনও রয়েছে শঙ্কা। দুই ক্রিকেটারের জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে প্রস্তুত ইংলিশ অধিনায়ক। তাদের দুই জনের অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিতভাবেই ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নিবে অনেকটাই।
বাংলাদেশ সময় দুপুর দুইটায় শুরু হবে ইংল্যান্ড-পাকিস্তান মহারণ। এই ম্যাচটি বাংলাদেশে দেখা যাবে টি স্পোর্টস ও গাজী টিভিতে। তবে ইংল্যান্ডে এই ম্যাচটি দেখা যাবে ফ্রি টু এয়ার চ্যানেলে। ফুটবলের দেশে এইভাবে ক্রিকেটের ফাইনাল উন্মুক্ত করে দেওয়াটা বাটলারদের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।
শেষ পর্যন্ত ১৯৯২-র সেই স্মৃতি ফিরবে নাকি ইংল্যান্ড নতুন ইতিহাস গড়বে, তা জানতে চোখ রাখতে হবে টিভি পর্দায়।