নারী ফুটবল বিশ্বকাপের নবম আসরে রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষে নাটকীয়ভাবে ফ্রান্সকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে উঠেছে স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া। নির্ধারিত সময়ে গোলশূন্য ড্র হলে ট্রাইবেকারে গড়ায় ম্যাচ। পেনাল্টি শুটআউটে যেন উত্তেজনা-রোমাঞ্চের পুরোটাই লুকিয়ে ছিল। দুই দলের ১০টি শট নেওয়ার পর ৭-৬ ব্যবধানে ফরাসিদের হারিয়ে ইতিহাস গড়ে প্রথমবার বিশ্বকাপে শেষ চারের টিকিট পেয়েছে অজিরা। ছেলে ও মেয়েদের ফুটবল মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য।
শনিবার (১২ আগস্ট) তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি হয় স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্স। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তিন নম্বরে থাকা ফরাসিরা স্বাভাবিকভাবে ফেভারিট থেকে ম্যাচ শুরু করে। প্রথমার্ধে একাধিক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি ফ্রান্স।
পুরো ম্যাচ জুড়েই একাধিক সুযোগ কাজা লাগাতে ব্যর্থ হয় ফরাসিরা। স্বাগতিক অস্ট্রেলিয়া ফরোয়ার্ডদের গোল মিসের মহড়ায় লিড নিতে ব্যর্থ হয়। শেষ পর্যন্ত গোলশূন্য ড্র থেকে অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় ম্যাচ। সেখানে ৩০ মিনিটেও ম্যাচের ভাগ্য বদলায় নি।
‘সাডেন ডেথ’ এ গড়ানো টাইব্রেকারে উজ্জীবিত হয়েই ভাগ্যপরীক্ষায় অংশ নেয় দুই দল। আর সেই স্নায়ুক্ষয়ী ভাগ্যপরীক্ষার পরতে পরতে ছিল রোমাঞ্চ।
টাইব্রেকারে ফ্রান্সের ডিফেন্ডার সেলমা বাশার প্রথম শটটিই রুখে দিয়ে ‘অ্যাডভান্টেজ’ আদায় করে নিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার গোলকিপার ম্যাকেঞ্জি আর্নল্ড। এরপর অস্ট্রেলিয়ার হয়ে প্রথম শটে লক্ষ্যভেদ করেন কেইটলিন ফোর্ড। পিছিয়ে পড়া ফরাসিদের স্পটকিকে সমতায় ফেরায় কাদিদিয়াতু দিয়ানি। এরপর ফ্রান্সের গোলকিপার পলিন পেইরু–মাইনিয়াঁ অস্ট্রেলিয়ার স্টেফ ক্যাটলির শট রুখে দিয়ে নিজেদের পক্ষে ‘অ্যাডভান্টেজ’ আদায় করে নেন। কিন্তু আর নাটকের শুরু এখান থেকেই।
এরপর ফ্রান্সের ওয়েন্দি রেনা ও ইউজেনি লে সমার ও অস্ট্রেলিয়ার স্যাম কার ও মেরি ফাউলা স্কোর করলে ফলাফল দাঁড়ায় ৩-৩।
এরপর ফ্রান্সের ইভ পেরিসের শট রুখে দেন অস্ট্রেলিয়ার গোলকিপার আর্নল্ড। এরপর অজি গোলরক্ষক নিজেই যান শট নিতে আসেন। লক্ষ্যভেদ করলেই সেমিফাইনাল। কিন্তু হলো কোথায় শেষ। বিধাতা যে ভাগ্যে লেখে রেখেছে আরও রোমাঞ্চে। ম্যাকেঞ্জি আর্নল্ড বল পোস্টে মারেন। এরপর ম্যাচ গড়ায় ‘সাডেন ডেথ’ এ। অর্থাৎ, পেনাল্টি নেওয়ার তালিকায় যাঁরা ছিলেন না, তাঁদেরও স্নায়ুক্ষয়ী এই পরীক্ষা দিতে হবে!
সাডেন ডেথ এ ফ্রান্সের হয়ে গ্রেস জিয়োরো- সাকিনা কারশাউয়ি- ম্যালে লাকরা সফল লক্ষ্যভেদ করেন। অস্ট্রেলিয়ার হয়েও সফল ছিলেন ক্যাটরিনা গোরি- টামেকা ইয়ালোপ ও এলি কার্পেন্টার।
এরপর আবর একটু নাটক। ফ্রান্সের কেঞ্জা দালির শট রুখে দিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার গোলকিপার ম্যাকেঞ্জি আর্নল্ড। কিন্তু ভিডিও রিপ্লে দেখে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি (ভিএআর) জানিয়ে দেয়, অস্ট্রেলিয়ার গোলকিপার গোললাইন থেকে সামনে এগিয়ে এসেছিলেন। তাই শটটি আবারও নেওয়ার সুযোগ পায় ফ্রান্স।
কিন্তু কেঞ্জা দালি এ যাত্রায়ও ম্যাকেঞ্জি আর্নল্ডকে ফাঁকি দিতে পারেননি। টাইব্রেকারে তখন ৬-৬ গোলের সমতা এবং আবারও নাটক। অস্ট্রেলিয়ার ক্লেয়ার হান্টের শট বাঁ হাত দিয়ে শেষ মুহূর্তে রুখে দেন ফ্রান্সের গোলকিপার পেইরু-মাইনিয়াঁ।
এরপর ফ্রান্সের ১৯ বছর বয়সী নাওমি ফেলার লক্ষ্যভ্রষ্ঠ হলে আবরও সুযোগ আসে অস্ট্রেলিয়ার সামনে জয়ের। এবার আর কোন ভুল করেন নি অসি খেলোয়াড় কোর্টনি ভাইন। লক্ষ্যভেদ পাগলাটে দৌড় দেন তিনি। জয়ের আনন্দে মেতে উঠে স্টেডিয়ামে উপস্থিত দর্শকরা। অসাধারণ এক জয়ে শেষ চারে ওঠার পাশাপাশি ঘরের মাটিতে বিশ্বকাপ জয়ের আশাও জিইয়ে রাখল অস্ট্রেলিয়া।