এ বছরের শেষ দিকে ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ানডে বিশ্বকাপ মাথায় রেখে এবারের এশিয়া কাপ ৫০ ওভারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। ২০১৬ সাল থেকে বিশ্বকাপে এই ফরম্যাটটি প্রচলনের সিদ্ধান্ত নেয় আয়োজকরা। এজন্য ২০১৬ এবং ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বছরে এশিয়া কাপ সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। বিশ্বকাপের দলগুলোকে সেরা প্রস্তুতির মঞ্চ তৈরি করে দিতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংবাদ প্রকাশের পাঠকদের জন্য এশিয়া কাপ নিয়ে টুকরো কিছু খবর নিয়ে আমাদের এই প্রতিবেদন।
কত সালে ও কোথায় হয় প্রথম এশিয়া কাপ?
১৯৮৪ সালে প্রথম এশিয়া কাপের আয়োজন করা হয়। আয়োজক দেশ ছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। শারজাহতে অনুষ্ঠিত হয় টুর্নামেন্টটি। প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন সুরিন্দর খান্না। সর্বোচ্চ ১০৭ রান করে টুর্নামেন্ট সেরা হন তিনি। টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন রবি শাস্ত্রী।
কতদিন পর এশিয়া কাপ হচ্ছে?
এমন প্রশ্নের জন্ম হতে পারে আপনার মনেও। কেন? কারণ গতবছরও এশিয়া কাপ হয়েছিল; তবে মনে করে দেখতে পারেন, সেবার এশিয়া কাপ হয়েছিল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে, সামনেও ছিল ২০ ওভারের বিশ্বকাপ। প্রতিবারই সামনের আইসিসি টুর্নামেন্ট বিবেচনায় রেখে বদলে যায় এশিয়া কাপের ফরম্যাট। ৫ অক্টোবরের ওয়ানডে বিশ্বকাপের আগে এবার সেটি হবে এই ফরম্যাটে।
এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ শিরোপা জিতেছে কে?
এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে সফল দল ভারত। ১৫ বারের ভিতর সর্বোচ্চ ৭ বার এশিয়া কাপ জিতেছে দেশটি। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে শ্রীলঙ্কা। তাদের নামের পাশে রয়েছে ৬টি শিরোপা। পাকিস্তান এই টুর্নামেন্টে শিরোপা ঘরে তুলেছে দুইবার। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন না হলেও ৩ বার হয়েছে রানার আপ।
এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক কে?
এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক সানাৎ জয়সুরিয়া। ১২২০ রান করে তালিকায় সবার ওপরে এই শ্রীলঙ্কান। তার পরে আছেন আরেক শ্রীলঙ্কান কুমার সাঙ্গাকারা। তার সংগ্রহ ১০৭৫ রান। তৃতীয় স্থানে ভারতীয় ব্যাটিং ইশ্বর শচীন টেন্ডুলকার। তার সংগ্রহ ৯৭১ রান। ৬৯৯ রান করে বাংলাদেশিদের হয়ে সবার ওপরে মুশফিকুর রহিম। আর তালিকার ৭ নম্বরে তিনি।
এশিয়া কাপে সর্বোচ্চ উইকেট সংগ্রাহক কে?
ব্যাটিংয়ের মতো বোলিংয়েও শ্রীলঙ্কার রাজত্ব। সর্বোচ্চ ৩০ উইকেট নিয়ে তালিকার সবার উপরে লঙ্কান লিজেন্ড স্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন। পেসার লাসিথ মালিঙ্গা আছেন দুইয়ে। তার শিকার ৩০টি উইকেট। বাংলাদেশের আব্দুর রাজ্জাক ২২ উইকেট নিয়ে আছেন বাংলাদেশিদের হয়ে সবার ওপরে। আছেন তালিকার ৬ নম্বরে। সাকিব আল হাসান ১৯ উইকেট নিয়ে আছেন ৯ নম্বরে।
সর্বোচ্চ এশিয়া কাপে অংশগ্রহণকারী দল কোনটি?
এশিয়া কাপে সবচেয়ে বেশি ১৫ বার অংশ গ্রহণকারী দল শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ,পাকিস্তান ও ভারত ১৪ বার করে অংশগ্রহণ করে এই টুর্নামেন্টে।
দলীয় সর্বোচ্চ রান?
এশিয়া কাপে দলীয় সর্বোচ্চ রান ৩৮৫। বাংলাদেশের বিপক্ষে রানটি করে পাকিস্তান।
এবারের আসরে কোন ম্যাচগুলোতে নজর রাখা যেতে পারে?
ভারত-পাকিস্তান তো অবশ্যই। দু দেশের দ্বিপক্ষীয় সিরিজ এখন আর না হওয়ায় আইসিসি ও এসিসির টুর্নামেন্টগুলোই ভরসা তাদের মুখোমুখি লড়াই দেখার। এর বাইরে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের ম্যাচও বেশ উত্তাপ ছড়িয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা ও ভারতের লড়াইও সাম্প্রতিক সময়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও রোমাঞ্চের জন্ম দিয়েছে।
এবারের আসরে বাংলাদেশের ভালো করার সম্ভাবনা কেমন?
এশিয়া কাপ মানেই বাংলাদেশের জন্য হৃদয় ভাঙার গল্প। ২০১২ সালের সেই কান্না হয়তো আপনার স্মৃতিতেও তরতাজা। তবে এবার বাংলাদেশ যাচ্ছে বেশ বড় স্বপ্ন নিয়ে। গত কয়েক বছর ওয়ানডেতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স, সুপার লিগের তৃতীয় সেরা দল হওয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তাদের মাটিতে, ভারতকে ঘরের মাঠে সিরিজ হারানো; এসব থাকছে প্রেরণা হিসেবে।
তবে টুর্নামেন্টের বাড়তি একটা চাপ থাকে, সেটি সামলে ওঠাই বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ইনজুরি, অসুস্থতাও বড় দুশ্চিন্তার নাম। নিজেদের সেরা ফরম্যাটের খেলা তাই টাইগারদের ভালো করার সম্ভাবনা বেশি।
২০১৮ সাল থেকে ওয়ানডে জয়ের পরিসংখ্যান?
২০১৮ সাল থেকে ওয়ানডে ম্যাচের পরিসংখ্যান অনুযায়ী টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণকারী ছয় দলের মধ্যে সবচেয়ে সফল হচ্ছে ভারত ও বাংলাদেশ। বিগত ৫ বছরের পরিসংখ্যানে ভারতের জয়ের হার ৬১ দশমিক ৯০ শতাংশ। এই সময়ে মোট ৮৪টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ভারত জয় পেয়েছে ৫২টি ম্যাচে। অপরদিকে বাংলাদেশের জয়ের হার ৫৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। ৬৬টি ম্যাচ খেলে ৩৯টিতে জয় পেয়েছে টাইগাররা।
৫৭টি ম্যাচে অংশ নিয়ে ৩০ ম্যাচে জয় পাওয়া পাকিস্তানের জয়ের হার ৫২ দশমিক ৬৩ শতাংশ। ৭১ ম্যাচে অংশ নিয়ে শ্রীলংকা জয় পেয়েছে ৩১টি ম্যাচে, জয়ের হার ৪৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আফগানিস্তানের জয়ের হার ৪০ দশমিক ৯০ শতাংশ। তারা ৪৪টি ম্যাচ খেলে জিতেছে ১৮টিতে।