ব্যাটিংয়ে নিজেদের শুরুটা ভালো না হলেও বোলিংয়ে বাংলাদেশের শুরুটা ছিল দারুণ। স্কোরবোর্ডে ১৫ রান তুলতেই বাংলাদেশের বোলিং তোপে ৪ উইকেট হারিয়ে বসে ডাচরা। অবশ্য রানের খাতা খোলার আগেই ইনিংসের প্রথম দুই বলে প্যাভিলিয়নে ফেরেন ডাচদের দুই ব্যাটসম্যান। শেষ পর্যন্ত এই ব্যাটিং-ব্যর্থতা থেকে বের হতে পারেনি নেদারল্যান্ডস। সুপার টুয়েলেভের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের জয় ৯ রানের। এই জয়ে ১৫ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটেছে টাইগারদের।
২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাওয়া জয়ই ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ও একমাত্র জয়। ছয় আসর আর ১৫ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে দ্বিতীয় জয় পেল বাংলাদেশ। দুই জয়ের মধ্যে মিল একটিই, দুই ম্যাচেই একাদশেই আছে সাকিব আল হাসানের নাম।
সোমবার (২৪ অক্টোবর) শেষ ওভারে ২৪ রানের লক্ষ্য ছিল নেদারল্যান্ডসের। প্রথম চার বলে ১২ রান তুলে ম্যাচটা এক রকম জয়ের আশাই দেখাচ্ছিল ডাচরা। শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞতার কাছে হেরেছে ডাচরা। শেষ বলে পল ভ্যান মেকরেনকে প্যাভিলিয়নে ফিরিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করেন সৌম্য সরকার।
বেলেরিভ ওভালে ১৪৫ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ইনিংসের প্রথম দুই বলে ফিরে যান যথাক্রমে বিক্রমজিৎ সিং ও বাস ডি লিড। দুজনই আউট হয়েছেন উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দিয়ে। বিক্রমজিৎয়ের ক্যাচ স্লিপে নিয়েছিলেন ইয়াসির আলি রাব্বি। আর বাস ডি লিড খোঁচা দিয়ে বল তুলে দিয়েছিলেন উইকেটের পেছনে দাঁড়ানো নুরুল হাসান সোহানের কাছে।
প্রথম ওভারের ওই দারুণ শুরুর পর ম্যাচে আত্মবিশ্বাস ফিরে পায় বাংলাদেশ। ইনিংসে চতুর্থ ওভারে বোলিংয়ে আসেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার ওই ওভারে দুই দুটি রানআউটে বেশ চাপে পড়ে ডাচরা।
১৫ রানে ৪ উইকেট হারানো নেদারল্যান্ডস ঘুরে দাঁড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টায় ছিল। কলিন অ্যাকারম্যান ও কাপ্তান স্কট এডওয়ার্ডস মিলে গড়েন ৪৪ রানের জুটি। যদিও এই জুটি গড়তে তারা খেলেন ৪৭ বল।
এই জুটি ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসার সময়ই প্যাভিলিয়নে ফেরেন স্কট এডওয়ার্ডস। ১২তম ওভারে টানা দুই বলে রিভার্স সুইপের চেষ্টা করেন ডাচ অধিনায়ক। প্রথমবার সফল হলেও দ্বিতীয়বার হাসান মাহমুদের ক্যাচে পরিণত হন। প্যাভিলিয়নে ফেরার আগে ২৪ বলে ১৬ রান করেন এডওয়ার্ডস। দলীয় ৫৯ রানে ফেরেন অধিনায়ক।
অধিনায়কের বিদায়ের পর খুব বেশি সময় ক্রিজে থাকতে পারেননি টিম প্রিঙ্গলও। ১৩তম ওভারে হাসান মাহমুদের করা ইন সুইংয়ে বোল্ড হয়ে ফেরেন। ৬ বলে ১ রান আসে প্রিঙ্গলের ব্যাট থেকে। তিনি ফেরেন ৬৬ রানে।
অন্য প্রান্তে তিন সতীর্থকে যাওয়া-আসার মিছিলে যোগ দিতে দেখলেও এক প্রান্তে নিজেকে সামলে রেখেছিলেন কলিন অ্যাকারম্যান। ৪১ বলে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন এই ডাচ। তার হাফ সেঞ্চুরির পর লোগাব ডি বেক ২ রান করে ফেরেন।
ইনিংসের ১৫তম ওভারে হাসান মাহমুদের বলে ডিপ ফাইন লেগ অঞ্চলে ক্যাচ তুলে দেন বেক। ওই ম্যাচ নিতে ভুল করেননি তাসকিন আহমেদ। এর আগে ১৪তম ওভারে ১৪ রান দিয়ে নেদারল্যান্ডসের রান বাড়িয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেন মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত।
ইনিংসের ১৭তম ওভারে ম্যাচের তৃতীয়তম শিকার করেন তাসকিন আহমেদ। শারিজ আহমেদকে ডিপ থার্ড ম্যাচ অঞ্চলে হাসান মাহমুদের ক্যাচ বানান। ক্যাচ ধরেই উল্লাসে মাতেন হাসান। একই ওভারে ফেরেন কলিন অ্যাকারম্যানও। তার ক্যারিয়ার সেরা ৬২ রানও বাঁচাতে পারেনি নেদারল্যান্ডসকে। দলীয় ১০১ রানের মাথায় প্যাভিলিয়নে ফেরেন এই ব্যাটার।
শেষ পর্যন্ত ১৩৫ রানে থামে ডাচদের ইনিংস। বাংলাদেশের হয়ে তাসকিন আহমেদ ২৫ রানে ৪ উইকেট শিকার করেন। তাকে যোগ্য সঙ্গ দেওয়া হাসান মাহমুদ নিজের কোটার পুরোটা বোলিং করে ১৫ রানে ২ উইকেট শিকার করেন। ডাচদের হয়ে সর্বোচ্চ ৬২ রান করেন কলিন অ্যাকারম্যান।
এর আগে সোমবার (২৪ অক্টোবর) হোবার্টের বেলেরিভ ওভালে টস জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। ৩০ ম্যাচ পর ওপেনিংয়ে ৪০ রানের জুটি পেরিয়েছে বাংলাদেশ। নাজমুল হাসান শান্ত ও সৌম্য সরকার ওপেনিংয়ে তোলেন ৪৩ রান। এখানেই শেষ বাংলাদেশের ক্যামিও। পরের ২০ রান তুলতে চার উইকেট হারিয়ে ফেলে টাইগাররা।
৬৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশের হাল ধরার চেষ্টা করেন আফিফ হোসেন ধ্রুব ও ইয়াসির আলী রাব্বি। তারাও পারেননি। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে নুরুল হাসান সোহান ও আফিফের ৪৩ রানের জুটিই বাংলাদেশের স্কোর ১৪৪ রান যেতে পড়েছে। যদিও সোহানের ধীরগতির ইনিংস না হলে বাড়তে পারতো বাংলাদেশের রান।
অবশ্য সেটা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মোসাদ্দেক হোসেন। ১২ বলে ২০ রানের ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ১৪৪ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস। ব্যাট হাতে বাংলাদেশের শুরুটা ভালো না থাকলেও বল হাতে তাসকিন-হাসান মাহমুদদের দারুণ পারফরম্যান্স ১৫ বছর পর টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের মূল পর্বে জয়ের আক্ষেপ ঘুচেছে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে টানা হারের বৃত্তে বন্দি থাকা বাংলাদেশ ছন্দে ফিরেছে বিশ্বকাপের মূল মঞ্চেই। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখে বিশ্বকাপে ভালো কিছু আনবে এমন প্রত্যাশাটাই বেড়েছে টাইগার সমর্থকদের।