বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একজন মুশফিকুর রহিম। দলে অভিষেকের পর থেকেই উইকেটের পেছনে অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় ছিলেন। দেখতে দেখতে কেটে গেছে প্রায় ১৬ বছর। কিন্তু তারপরেও চলমান নিউজিল্যান্ড সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে থাকছেন না উইকেট কিপারের দায়িত্বে। উইকেটের পেছনে মুশফিকের না থাকা নিয়ে কোচ রাসেল ডমিঙ্গো আসলে কী প্রমাণ করতে চাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক জাভেদ ওমর বেলিম। সংবাদ প্রকাশকে দেওয়া স্বাক্ষাতকারে এমন কথাই বলেন তিনি।
নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে পারিবারিক কারণে ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে দলে ছিলেন না দেশসেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম। সেই সিরিজে উইকেট কিপারের দায়িত্বে ছিলেন আরেক ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। এছাড়া ওপেনার লিটন কুমার দাসও বাংলাদেশ দলের আরেকজন উইকেট কিপার। কিন্তু এই তিনজনের মধ্যে কে থাকবেন উইকেট কিপারের দায়িত্বে তা নিয়ে নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে প্রশ্ন করা হয়েছিল কোচ রাসেল ডমিঙ্গোকে।
এমন প্রশ্নের জবাবে কোচ মুশফিক ও সোহানের মধ্যে দায়িত্ব ভাগাভাগি দিয়েছেন। বলেছেন প্রথম দুই ম্যাচে নুরুল ও পরের দুই ম্যাচে থাকবেন মুশফিক। আর দুই জনের মধ্যে যে ভালো করবে সে থাকবে শেষ ম্যাচে উইকেট কিপিংয়ের দায়িত্বে।
কোচের এমন কথা আলোচনার জন্ম দিয়েছে দেশের ক্রিকেট অঙ্গনে। তাহলে কি ১৬ বছর পরেও পরীক্ষা দিতে হচ্ছে মুশফিককে নাকি তাকে অসম্মান করছেন কোচ। এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক জাভেদ ওমর বেলিমকে।
খেলায় আবেগের কোন জায়গা নেই আর দেশের মানুষকে কৌতুহলপ্রবণ আখ্যা দিয়ে বেলিম বলেন, "দেখেন মিডিয়ার সামনে আসলে আবেগের মতো কথা বলে কোনো লাভ নেই। মিডিয়া আর প্রফেশনাল লাইফে আমি বরাবরই ওয়ার্ডটা ইয়ুজ করি যে, ক্রিকেটে আবেগের কোন জায়গা নাই। যেহেতু আমরা আবেগপ্রবণ জাতি। আর ক্রিকেট নিয়ে আমরা প্রচুর মাতামাতি করি। সেজন্য হয়তো সবারই কৌতুহল। ধরুন আজ বাংলাদেশের খেলা। এখানে সবাই কিন্ত ইনভলব। কম বেশী সবাই কিন্তু ইনভলব, হয়তো কেউ আট-দশটা বল দেখে, কেউ পুরো ম্যাচ দেখে, কেউ মাঠে গিয়ে দেখে, কেউ ফেসবুকে দেখে।"
দুই জনের মধ্যে মুশফিককেই এগিয়ে রাখছেন বেলিম। বলেন, "বাট ডমিঙ্গো যেটা উল্লেখ করেচেন সেটা শুধু মুশফিক না, সেটা আমার কাছে মনে হয়। সোহানের যে ব্যাপার আছে, সোহান মেবি পাচ-ছয় বছর বাংলাদেশ টিমে আছেন। যাওয়া আসার মধ্যে আছেন, কিছু ম্যাচ খেলেছেন আবার দলে তার জায়গা হয়নি। প্রফেশনাল লেভেলে যদি, মুশফিক তো আমাদের মেইন প্লেয়ার। নো ডাউট, ব্যাটিংয়ে যদি আপনি চিন্তা করেন। সে আমাদের ব্যাটিংয়ের স্তম্ভ একজন। ওই একটা জায়গায় আমার কাছে মনে হয়, মুশফিকের কিপিং...।"
কে কিপিং করবে তা নিয়ে সম্পুর্ণ ভাবনা দলের। আর দল যা চাইবে তা নিয়েই সবাইকে সন্তুষ্ট থাকতে হবে জানিয়ে সাবেক অধিনায়ক বলেন, "দল যেটা চিন্তা করে যে মুশফিক কিপিং করলে আমাদের দলের জন্য ভালো হবে নাকি, না করলে ভালো হবে। ওই জায়গায় আপনি দুই জনকে খুশি রাখবেন যে দুইটা দুইটা করে।"
দলের এমন চলতে থাকলে অনেক ক্ষতি হয় জানিয়ে বেলিম বলেন, "আর সামনে ওয়াল্ড কাপ আর এই সময়ে এসে আপনি পরীক্ষা দিচ্ছেন। মুশফিকের জন্য হোক বা সোহানের জন্য। সোহানও কিন্তু আপনার প্রোভেন প্লেয়ার পারফর্ম করেন, দলে জায়গা হয়। আমাদের এই কালচার নতুন, ইয়াংকে চান্স দেওয়ার জন্য বা ইয়াংকে চান্স দেওয়া উচিত বা আর কত খেলবে সিনিয়র প্লেয়ার এগুলো কালচার থেকে বের হতে হবে। আল্টিমেটলি কিন্তু এন্ড অব দ্যা ডে এটার ফলে প্লেয়ারের ক্ষতি হয়। প্লেয়ার ক্ষতি হলে কিন্তু দলের ক্ষতি হয়। আর দল ক্ষতি হলে দেশ ক্ষতি হয়।"
কোচের মিডিয়ার সামনে আরও প্রফেশনাল ভাবে কথা বলা উচিত। আর ড্রেসিং রুমের খবর বাইরে আসা নিয়ে বেলিম বলেন, "এই একটা জায়গায় আমার মনে হয় মিডিয়ার সামনে আরও প্রফেশনাল ভাবে আলাপ করা উচিত, আমি কি বলবো বা কিভাবে কি করবো। হতে পারে যে হয়তো ড্রেসিং রুমের খবর বাইরে চলে আসছে বা কেউ শুনছে। এইটা অস্বীকার করলেই হয়। মিডিয়ার সামনে এইটা ঢালাওভাবে প্রেস কনফারেন্সে গিয়ে বলবেন এটা জানতে হোক বা অজান্তে হোক।"
মুশফিক দেশের হয়ে অনেক কিছু করেছে আর তাকে কেনই বা এমন প্রেশার দিচ্ছে কোচ বা সোহানই কেন এমন প্রেশার নিবে। এমন চাপের ফলে যদি তারা ক্যাচ ছাড়ে তাহলে তা দলের জন্যই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে জানিয়ে বেলিম বলেন, "মুশফিক নো ডাউট, প্রমান করার কিছু নাই হি ইজ অ্যা কাম এন্ড কোয়াইট। সে অলরেডি অনেক প্রেশার নিয়ে দলকে সার্ভিস দিয়েছে। তারপরেও কেন অজান্তে তাকে কেন আমি প্রেশারটা দিবো। হোক মুশফিক বা সোহানও কেন প্রেশারটা নিবে যে আমাকে ভালো করে কিপিং করতে হবে। ও তো প্রোভেন প্লেয়ার। কিপিং করতে গিয়ে আনলাকি তার একটা ক্যাচ মিস হতেই পারে। এখন যদি মিস করে তাহলে বলবে যে প্রেশারের জন্য মিস করেছে, আমরা সবাই বলবো। ওই একটা ব্যাপার হওয়া উচিত।"
মুশফিকের সঙ্গে যে আচরণ করা হয়েছে তা একদম আন-প্রফেশনাল। আর মিডিয়ার সামনে এমন কথা বলে কোচ কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বেলিম। বলেন, "আমার মনে হয় মুশফিকের ব্যাপারটা খুবিই আন-প্রফেশনাল। ওই কথা বাদ, তাকে দুইটা অথবা তাকে দুইটা এমনভাবে ফাইনাল করবো। যদি সোহানও খেলে তাহলে মুশফিক কিপিং করবে না, সোহান লোয়ার অর্ডারে ব্যাটিং করবে। আর যদি মনে হয় আমরা একটা জেনুইন ব্যাটসম্যান নিয়ে খেলবো বা জেনুইন বোলার নিয়ে খেলবো তাহলে মুশফিক কিপিং করবে। দলের একটা বোল্ড ডিসিশন হবে সেটা মুশফিকের ক্ষেত্রে হোক বা সোহানের ক্ষেত্রে হোক। আপনার এখানে এই টাইপের কথা বলে, আমি জানি না আপনি কি প্রমাণ করতে চাচ্ছেন।"