২০২১ সালে বেশ আলোচিত ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। বছরের শুরুটা দুর্দান্ত ভাবে হলেও শেষে দিকে এসে নিজেদের হারিয়ে খুঁজেছে টাইগাররা। টানা তিনটি সিরিজ জিতে বিশ্বকাপে যাওয়ার পর সেখানে গিয়ে লজ্জার হারে হেরেছে বাংলাদেশ। চলুন দেখে নেই বছর জুড়ে চলা বাংলাদেশ ক্রিকেটের আলোচিত ঘটনাসমূহ—
ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ
ঘরের মাঠে (জানুয়ারি) দারুণভাবেই বছরটা শুরু করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ওয়ানডে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যে সেরা দল তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখে সাকিবরা। এই সিরিজে বাংলাদেশের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি ক্যারিবীয়রা। ৩-০ তে ওয়ানডে সিরিজ জয়ে সিরিজ সেরার পুরষ্কার উঠেছিল বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের হাতে। তবে টেস্টে বরাবরের মতো খারাপ পারফরম্যান্স করে ২-০ তে সিরিজ হারে বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ
ঘরের মাঠে বাংলাদেশ যতটা ভালো দল, বিদেশের মাটিতে ঠিক ততটাই খারাপ—মার্চে নিউজিল্যান্ড সফরে এর ধারাবাহিকতাই বজায় রাখে বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে দুর্দান্ত খেলা বাংলাদেশ খেই হারিয়ে ফেলে কিউইদের বিপক্ষে। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের সঙ্গে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টিতেও হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ।
শ্রীলঙ্কা সফরে টেস্ট সিরিজে হার
শ্রীলঙ্কার মাটিতে ২১ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া দুই ম্যাচের প্রথম টেস্টে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। নাজমুল হাসান শান্ত ১৬৩ ও মুমিনুল হক করেছিলেন ১২৭ রান। আর লঙ্কান ব্যাটার দিমুথ করুনারত্নের ব্যাট থেকে এসেছিল ২৪৪ রান। প্রথম টেস্ট ড্রয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাটিং ব্যর্থতায় ২০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। ফলে সিরিজ হাতছাড়া হয়েছিল ১-০ তে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়
২৩ মে অনুষ্ঠিত ঘরের মাঠে ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কাকে ২-১ ব্যবধানে হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ৩৩ রান ও দ্বিতীয় ম্যাচে মুশফিকের সেঞ্চুরিতে ১০৫ রানের জয় পায় বাংলাদেশ। আর তৃতীয় ম্যাচে ৯৭ রানে হারে টাইগাররা।
জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ শুরু হয়েছিল টেস্ট ম্যাচের মাধ্যমে। একমাত্র টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের অপরাজিত ১৫০, লিটনের ৯৫ আর দ্বিতীয় ইনিংসে সাদমান ইসলামের ১১৫* ও নাজমুল ইসলাম শান্তর ব্যাট থেকে এসেছিল ১১৭* রান। হারারেতে অনুষ্ঠিত এই টেস্টে ২২০ রানের জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর একে একে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজেও জিম্বাবুয়েকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল টাইগাররা।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়
আগস্টে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪-১ সিরিজ জিতে ইতিহাস রচনা করে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ২৩ রান, দ্বিতীয় ম্যাচে ৫ উইকেট, তৃতীয় ম্যাচে ১০ রানের জয় পায় মাহমুদউল্লাহ বাহিনী। চতুর্থ ম্যাচে এসে ৩ উইকেটের জয় পায় অস্ট্রেলিয়া। আর শেষ ম্যাচেও ৬০ রানের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও সিরিজ জয়
জিম্বাবুয়ে ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর আত্মবিশ্বাসের তুঙ্গে থাকা বাংলাদেশ সিরিজ জিতে নেয় নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও। ১ সেপ্টেম্বর টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটের জয় দিয়ে সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে ৪ উইকেটে জয়ের পর তৃতীয় ম্যাচে এসে হোঁচট খায় বাংলাদেশ। তবে চতুর্থ ম্যাচে এসে সিরিজ জিতলেও, হার দিয়েই সিরিজ শেষ হয় বাংলাদেশের।
বিশ্বকাপ ট্র্যাজেডি
টানা তিন সিরিজ জিতে বিশ্বকাপে পা রাখে বাংলাদেশ। তবে বিশ্বকাপে গিয়েই মিইয়ে যায় নিজেদের দাপট। মাঠে একের পর এক হতাশার পারফরম্যান্সের সঙ্গে মাঠের বাইরেও চলতে থাকে নানাবিধ আলোচনা। বিশ্বকাপে দলের নিয়মিত মুখ তামিমের না খেলা, সিনিয়র প্লেয়ারদের সঙ্গে কোচের মনোমালিন্য, খেলোয়াড়দের নিয়ে বোর্ড প্রেসিডেন্টের প্রকাশ্যে সমালোচনা ও সংবাদ মাধ্যমে বিভিন্ন কথা বলে খেলোয়াড়দের আলোচনা হওয়া ছাড়াও বিভিন্ন ইস্যুতে উত্তাল থাকে ক্রিকেট পাড়া। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়া বাংলাদেশ অবশ্য টেনেটুনে সুপার টুয়েলভে ওঠে। সুপার টুয়েলভে কোনো দলের বিপক্ষে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। সবগুলো ম্যাচেই হেরেছে লজ্জাজনকভাবে। সুপার টুয়েলভে নাবিমিয়া, স্কটল্যান্ডের মতো দলগুলো যেখানে ম্যাচ জিতেছে, সেখানে বাংলাদেশ একটি ম্যাচও জিততে পারেনি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশ
বিশ্বকাপে ভরাডুবির পর নিজেদের নতুন করে প্রস্তুত করার সময় পায়নি বাংলাদেশ। এর মধ্যেই চলে আসে পাকিস্তান দল। বিশ্বকাপে বাবর আজমরা যে ধরনের পারফরম্যান্স করে এসেছিল, তাতে মনে হয়েছিল তাদের কাছে একেবারে উড়ে যাবে বাংলাদেশ। কিন্তু তা আর হয়নি, যদিও টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দুইটি সিরিজেই হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশকে ঘরের মাঠে টি-টোয়েন্টি ৩-০ ও টেস্টে ২-০ তে হারিয়ে দেশ ছাড়ে পাকিস্তান।