দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ঐতিহাসিক এক জয় তুলে নিল টিম বাংলাদেশ। অবশেষে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে তাদের মাটিতে টাইগারদের ২০ বছরের ক্ষুধার অবসান হলো ৩৮ রানের জয়ে। জয়টি পেতে ১৯ ম্যাচ অপেক্ষা করতে হলেও দলগত পারফরম্যান্সে বিজয়ীর বেশে মাঠ ছাড়ে তামিম ইকবালের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ।
শুক্রবার (১৮ মার্চ) সেঞ্চুরিয়নের সুপার স্পোর্টস পার্কে দিবারাত্রির প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে টসে হেরে প্রথমে ব্যাটে করতে নামে বাংলাদেশ। লিটন, সাকিব ও ইয়াসির আলীর ফিফটিতে ৭ উইকেট হারিয়ে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৩১৪ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর দাঁড় করায় সফরকারীরা।
জবাবে রান তাড়া করতে গিয়ে টাইগার বোলারদের কাছে ধরাশায়ী দক্ষিণ আফ্রিকা ২৭৬ রান তুলতেই অলআউট হয়ে যায়। ম্যাচে আম্পায়ারদের বিতর্কিত কয়েকটা সিদ্ধান্তের পরও ঐতিহাসিক এই জয় ছিনিয়ে নিয়েছে শরিফুল, তাসকিন, মিরাজরা।
এ বছরের শুরুতে নিউজিল্যান্ডকে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে হারিয়ে প্রায় ২০ বছরের খরা কাটিয়েছিল বাংলাদেশ। এবার কাটল দক্ষিণ আফ্রিকাতেও।
প্রথমে ব্যাট করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে ৯৫ রানের জুটি গড়েন তামিম ইকবাল ও লিটন দাস৷ এই জুটি দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েন।
তামিমের ৬৭ বলে ৪১ রানের ইনিংসে ভাঙে এই জুটি। এরপর সাকিব তিন নম্বরে নেমে লিটনকে সঙ্গ দেন। কিন্তু লিটন তার ক্যারিয়ারের পঞ্চম হাফসেঞ্চুরি তুলে পরের বলেই কেশব মহারাজের বলে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফিরে যান।
মুশফিকও ব্যাটিংয়ে নেমে বেশিক্ষণ ক্রিজে থাকতে পারেননি। মহারাজের বলে মিড অনে ডেভিড মিলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন মাত্র ৯ রানে। এরপর সাকিব দলকে শক্ত ভিত গড়ে দেন ক্যারিয়ারের প্রথমবার হাফসেঞ্চুরির দেখা পাওয়া ইয়াসির আলীর সঙ্গে ১১৫ রানের জুটি গড়ে। এই জুটি ইনিংসের শুরুতে করা লিটন ও তামিমের রেকর্ডও ভেঙে দেন।
এদিন সাকিব ছিলেন পুরো ছন্দে। আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাটিং করে দলকে তিন শ রানের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। ৬৪ বলে ৭ চার এবং ৩টি ছক্কার বিনিময়ে করেন ৭৭ রান। এ ম্যাচে তিনি তুলে নেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চাশতম ফিফটি।
আড়াই শর কাছাকাছিতে দ্রুত সাকিব-ইয়াসিরের বিদায়ের পর মাহমুদউল্লাহর ২৫, আফিফ ১৭ ও মেহেদি হাসান মিরাজের অপরাজিত ১৯ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩১৪ রানের লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ।
বোলিংয়ে মহারাজ ও মার্কো জানসেন নেন ২টি করে উইকেট। এছাড়া রাবাদা, এনদিগি ও পেহলুকিয়া নেন ১টি করে উইকেট৷
রান তাড়া করতে নেমে প্রোটিয়া দলের টপ অর্ডারে ধস নামে টাইগার দুই পেসার শরিফুল ও তাসকিনের বোলিং তোপে। দলীয় ৩৭ রানের মধ্যেই ৩ উইকেট নেই এমন অবস্থায় দলের হাল ধরেন বাভুমা ও মিডল অর্ডার ব্যাটার ভ্যান ডার ডুসেন।
শুরুতে উইকেট এনে দেওয়া শরিফুল এই দুজনের ৮৫ রানের জুটি আবারও বোলিংয়ে এসে ভেঙে দেন। উইকেটের পেছনে মুশফিকের হাতে ক্যাচ দিয়ে টেম্বা বাভুমা ফেরেন ৫৫ বলে ৩১ রান করে। এরপর মিলারের সঙ্গে ঝোড়ো গতিতে ব্যাটিং করতে থাকেন ডুসেন। তাসকিন তার শেষ ওভারে বোলিংয়ে এসে বিদায় করেন ভয়ংকর হয়ে ওঠা ডুসেনকে ৮৬ রানে। তার আগে মিলারকে সঙ্গে নিয়ে ৭০ রানের জুটি গড়েন ডানহাতি এই ব্যাটার।
দলীয় ১৯১ রানে ডুসেনের বিদায়ের পর মিলার এক প্রান্ত আগলে জয়ের দিকে ছুটতে থাকেন। কিন্তু অন্য প্রান্তে বোলিংয়ে মিরাজ তুলে নেন লোয়ার অর্ডারের তিন তিনটি উইকেট। শেষ দিকে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা মিলারকেও তার অফ স্পিনে স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে ফেলেন মিরাজ। দলের নবম ব্যাটার হিসেবে ৫৭ বলে ৭৯ রানে মিলার যখন ২৪২ রানে আউট হন, বাংলাদেশ তখন জয় থেকে দূরে কেবল। শেষ জুটিতে এনদিগি ও মহারাজ আরও ৩৪ রান যোগ করলে বাংলাদেশের জয়ের ব্যবধান কমিয়েছে স্বাগতিকরা।
বাংলাদেশের পক্ষে বোলিংয়ে মিরাজ ৪টি উইকেট নেন। এছাড়া তাসকিন ৩টি, শরিফুল ২টি ও রিয়াদ নেন ১টি উইকেট।
বাংলাদেশের এমন স্মরণীয় জয়ের ম্যাচে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছেন সাকিব। শেষ দেখায়ও ২০১৯ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর ম্যাচে ৭৫ রান ও ১ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা নির্বাচিত হয়েছিলেন সাদা বলে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার।
সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ জোহানেসবার্গে রোববার (২০ মার্চ) বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায় অনুষ্ঠিত হবে।