• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে কি সাকিবের মন ঠিক হবে?


মাসুম আব্দুল্লাহ
প্রকাশিত: মার্চ ১৩, ২০২২, ০৪:০৭ পিএম
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে কি সাকিবের মন ঠিক হবে?
ফাইল ছবি

গেল আফগানিস্তান সিরিজে ক্রিকেটটা একদমই উপভোগ করতে পারেননি; তাই শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত না জানিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যেতে চাইছিলেন না সাকিব আল হাসান। এরপর হুট করেই একটি মোবাইল কোম্পানির শুটিংয়ে দুবাই চলে যান তিনি। সাকিবকে আফ্রিকা সিরিজে না পেয়ে বিসিবিও তার ছুটির বিষয়ে চিন্তা করে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরণের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম দিয়ে দেয়।

এমন সমীকরণের মধ্যেই দেশের ক্রিকেটাঙ্গনে বোর্ডের সঙ্গে সাকিবের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। আগামী ১৫ মার্চ থেকে শুরু হতে যাওয়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে মোহামেডানও সাকিবকে দলে পেতে বিসিবিকে অনুরোধ করে।  

অবশেষে সপ্তাহব্যাপী এই নাটকীয়তার অবসান হয় গতকাল শনিবার (১২ মার্চ)। বিসিবি কার্যালয়ে পাপন-সাকিবের আলোচনার পর বদলে যায় সব হিসেব নিকেশ। আগের সিদ্ধান্ত বদলে সাকিব নিজেই জানান দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে যাচ্ছেন তিনি। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে সাকিব তার মনের অবস্থা সারিয়ে তুলতে পারবেন বলে ধারণা তার।

এই বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত না করলেও দেশসেরা এই অলরাউন্ডার বলেন, "দেখেন কোনো কিছু আসলে এক দুই দিনে পরিবর্তন করা সম্ভব না। আমি এখন ভালো অবস্থায় আছি। যেহেতু আমি জানি পুরো পরিষ্কার চিত্র আছে আমার সামনে। আর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যে গেলে হয়তো আরও তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। অনেক সময় হয়তো আপনি যখন ভিন্ন কোন পরিবেশে যান আপনার মানসিকতাটা অনেক বদল হয়ে যায়। আশা করি সেরকম কিছু হবে ভালোভাবে। এবং দলের জন্য ভালো পারফর্ম করতে পারব।"

সাকিবের মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ার কারণ খুঁজতে আমাদের যেতে হবে বিপিএলের গেল আসরে। ব্যাটে বলে অলরাউন্ড পারফর্মেন্সে টানা ৫ ম্যাচে ম্যাচসেরা হবার পরেও আইপিএলের মেগা নিলামে দল পাননি সাকিব। এরপর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কাছে ফাইনালে শিরোপা বঞ্চিত সাকিব মানসিকভাবে ধাক্কা পেয়েছেন বলে ধারণা অনেকের। এরপর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে তার পারফর্মেন্স ছিল সাদামাটা। 

এরপরই দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ নিয়ে সাকিবের নাটকের শুরু। যেহেতু বিসিবিকে আইপিএলের কথা বলে প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে সরে দাড়িয়েছিলেন সাকিব, বিসিবিও তাই চাচ্ছিল যে সাকিব টেস্ট সিরিজেও খেলুক। আফগানিস্তান সিরিজের মাঝেও বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন আফ্রিকা সিরিজের দুই দলেই সাকিবের থাকা নিশ্চিত করেছিলেন। পরে ওয়ানডে ও টেস্ট দুই স্কোয়াডে তাকে রেখেই দল ঘোষণা করে টিম নির্বাচকরা।

সব কিছু যখন চূড়ান্ত তখনই নাটকের আরেক পর্ব শুরু। গত ৬ মার্চ বিজ্ঞাপনের শ্যুটিংয়ে দুবাই যাওয়ার আগে বিমানবন্দরে আফ্রিকা সফরের জন্য প্রস্তুত নন বলে ছুটি চান সাকিব। এর দুদিন পরই সাকিবের ছুটির কথা আমলে নিয়ে ক্রিকেট অপারেশন্স চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস জানান, "সাকিবকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত সব ধরণের ক্রিকেট থেকে বিশ্রাম দিয়েছে বিসিবি। আর দুবাই থেকে ফিরলে তার সঙ্গে বসে আগামীর পরিকল্পনা করবেন বোর্ড প্রধান।"

এরপর শনিবার মিরপুরে বিসিবি প্রধান নাজমুল ইসলাম পাপন ও সাকিবের মধ্যে ঘন্টাখানেক বৈঠক হয়। এসময় বিসিবির কয়েকজন বোর্ড পরিচালক ও প্রধান নির্বাহীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পাপন ও সাকিব সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। 

তখন বোর্ড সভাপতি জানান, "মূলত সিদ্ধান্ত নিতে ভুগছেন সাকিব। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে সাকিব সব ফরম্যাটে অ্যাভেইলেবল। কাল (রোববার) রাত সে যাবে। ওখানে তিনটা ওয়ানডে, দুটি টেস্ট। এমন হতে পারে টিম ম্যানেজমেন্ট কোনো ম্যাচে ওকে ড্রপ করেছে। এমনও হতে পারে ও একটা ম্যাচে বিশ্রাম চেয়েছে। এটা নিয়ে এত হুলস্থূল করার কিছু নেই। আমার ধারণা সবই খেলবে। না খেললেও কোনো অসুবিধা নেই। ও যদি ওখানে গিয়ে কোনো ম্যাচে বিশ্রাম চায়, নিতে পারে।"

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ১৮ মার্চ থেকে শুরু হবে প্রথম ওয়ানডে। পরের দুটি যথাক্রমে ২০ ও ২৩ মার্চ। ৩১ মার্চ থেকে ডারবানে শুরু হবে প্রথম টেস্ট। দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে ৮ এপ্রিল থেকে। এক মাসের সফর শেষে ১৩ এপ্রিল টাইগারদের দেশে ফেরার কথা রয়েছে। সিরিজে সাকিব কি পারবে প্রকৃতির সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে বাংলাদেশকে জয়ের সুবাতাস উপহার দিতে? এজন্য সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে সিরিজের শেষ দিন পর্যন্ত।
 

Link copied!