তিসিংহুয়া ইউনিভার্সিটি হলো চীনের ১ নম্বর বিশ্ববিদ্যালয়। আর ওয়ার্ল্ড র্যাঙ্কিংয়ে এর অবস্থান ১৫, এশিয়ার র্যাঙ্কিংয়ে ১ নম্বর। এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র ১০ বছরের বড়। অর্থাৎ ১০ বছর আগে এটি শতবর্ষ অতিক্রম করে। বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হয়েও কি আমাদের মত এত আজাইরা ঢাকঢোল পিটিয়ে শতবর্ষ পালন করেছে? না করেনি।
তিসিংহুয়া ইউনিভার্সির ছাত্র সংখ্যা প্রায় ৫৩ হাজার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংখ্যার চেয়ে প্রায় ১৭ হাজার বেশি। ৫৩ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে আন্ডার গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী মাত্র ১৬ হাজার, আর ১৯ হাজারেরও বেশি পোস্ট গ্রাজুয়েট শিক্ষার্থী, যার মধ্যে ১৭ হাজারের বেশি পিএইচডি ছাত্র। বোঝা গেছে এরা গবেষণায় কতটা গুরুত্ব দেয়? এছাড়া আছে শত শত পোস্ট ডক্টরাল ফেলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কতজন পিএইচডি শিক্ষার্থী আছে? আর পোস্ট ডক্টরাল ফেলো? আমার জানা মতে শূন্য। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার ইঞ্জিন হলো পিএইচডি ছাত্র আর পোস্ট ডক্টরাল ফেলো। একটি বিশ্ববিদ্যালয় কেমন, দেশ তার পেছনে কতটা খরচ করে তা সংযুক্ত ছবি দুটো দেখলেও টের পাওয়া যায়।
তিসিংহুয়া ইউনিভার্সিটি জন্মের পর থেকে এর মান কেবলই বেড়েছে। এর কারণ এর প্রশাসনে যখনই কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তাকে দায়বদ্ধতার আওতায় এনেছে। ভালো করলে রিওয়ার্ড, খারাপ করলে তিরস্কারের ব্যবস্থা আছে। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার মান কেবলই কমেছে। এই যে মান ক্রমাগত নিম্নগামী হয়েছে তার জন্য কাউকে আজ পর্যন্ত জবাবদিহি করতে হয়েছে?
আমাদের দেশের পার্স্পেক্টিভে আগে সরকারকে অনুধাবন করতে হবে যে দেশের টেকসই উন্নয়নের জন্য শিক্ষা ও গবেষণার মান বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নাই। সরকার যে এর গুরুত্ব অনুধাবন করেছে সেইটা জনগণ বুঝবে কিভাবে? যদি দেখি সরকার শিক্ষায় জিডিপির কমপক্ষে ৫.৫% বরাদ্দ দিয়েছে। যদি দেখি সরকার যোগ্য ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসাবে নিয়োগ দিচ্ছে। যদি দেখি সরকার শিক্ষক ও ছাত্রদের মাঝে জাতীয় রাজনীতি ইঞ্জেক্ট করছে না। যতদিন এই কাজগুলো না হবে ততদিন দেশের শিক্ষার মান কেবল নামতেই থাকবে। ফলশ্রুতিতে দেশে ঘুষ দুর্নীতি বাড়তেই থাকবে।
চীনের আজকের উন্নতির পেছনের জ্বালানি হলো এদের শিক্ষার উন্নয়ন। এই কাজটি তারা অনেক আগে থেকেই শুরু করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও আমরা শিক্ষা ও গবেষণাটাকে ঠিক করতে পারিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বস্তির জীবনের চেয়েও মানবেতর জীবন দিয়ে কখনো পড়াশোনা, গবেষণা হবে না। একটু দেখে আসুন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কেমন পরিবেশে থাকে এবং খায়। তাহলেই পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন। শুধু পরিবেশের কারণে কত সম্ভাব্য মেধার যে অপচয় ঘটেছে সেই হিসাব কি কখনো করেছে? এইটাকে বলা যায় মেধার গণহত্যা। এর দায় পুরোটা আমাদের রাজনীতিবিদদের।