• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মাথাপিছু গড় আয়ের হিসাবে ফাঁকফোকর


আলী রীয়াজ
প্রকাশিত: নভেম্বর ৫, ২০২১, ০১:২৫ পিএম
মাথাপিছু গড় আয়ের হিসাবে ফাঁকফোকর

দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, উভয়ই আমাদের মনোযোগ দাবি করে। যারা বাংলাদেশে আছেন তাঁদের যেমন, তেমনি যাঁরা বাংলাদেশ নিয়ে ভাবেন, গবেষণা করেন তাঁদেরও। 


বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে যে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় আয় বেড়েছে, উল্লেখযোগ্যভাবেই বেড়েছে। ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, এখন দেশের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫৫৪ ডলার। মাথাপিছু গড় আয়ের হিসাবের ফাঁকফোকর সবাই বোঝেন, ফলে যাঁদের পকেট শূন্য, তাঁরা নিশ্চয় আগামীকাল ব্যাংকে হাজির হয়ে তাঁর ভাগের টাকা চাইবেন না। 


কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে যখন এই সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে, ঠিক সেই সময়ে আর একটা তথ্য জানা গেছে। ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) যৌথভাবে করা একটি জরিপ বলছে করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ দেশের ১৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ বা সোয়া ৩ কোটি মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই বছরের মার্চ মাসে নতুন দরিদ্রের সংখ্যা ছিল ২ কোটি ৪৫ লাখ। অর্থাৎ গত ছয় মাসে ৭৯ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়েছে। তার মানে দাঁড়াচ্ছে যে একদিকে দেশের এক বড়সংখ্যক মানুষ যখন আরও দরিদ্র হচ্ছেন, সেই সময়ে দেশের মানুষের গড় আয় বাড়ছে।


এই গড় আয়ের হিসাবের পদ্ধতি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে, বিশেষ করে ভিত্তি বছর বদলে দেওয়ার কারণে। এই পদ্ধতিগত আলোচনা নিশ্চয় গুরুত্বপূর্ণ, তাতে উন্নয়নের ফাঁকিটা বোঝা যায়। কিন্তু যেটা সহজেই বোঝা যায়, তা হচ্ছে এই বাস্তবতা—দরিদ্র বাড়ছে। কেমন দারিদ্য–‘জরিপে দেখা যায়, মানুষের খাদ্যের ক্ষেত্রে ব্যয় কোভিডকালের তুলনায় কমে গেছে। শহরে দরিদ্র মানুষের মাথাপিছু ব্যয় ছিল ৬৫ টাকা। এখন তা ৫৪ টাকা। গ্রামে ব্যয় ছিল ৬০ টাকা, এখন ৫৩ টাকা।’ তার মানে মানুষ খেতে পারছেন না। খাদ্যের অভাব আছে তা নয়, অভাব মানুষের আর্থিক সক্ষমতার। এর চেয়ে বড় বৈষম্য কী হতে পারে? একই সঙ্গে জরিপ প্রতিবেদনটির একজন প্রতিবেদক বিআইজিডির নির্বাহী পরিচালক ইমরান মতিনের কথাটি স্মরণ করা যাতে পারে, ‘নতুন এই দারিদ্র্য সাময়িক নয়, দীর্ঘমেয়াদি। এটি বেশ উদ্বেগের ও ক্ষতিকর।’ এই দরিদ্র মানুষদের নিয়ে সরকারের উদ্বেগ আছে, এমন মনে হয় না। 


যাঁরা কষ্টেসৃষ্টে বেঁচে-বর্তে আছেন, সীমিত আয়ে চলছেন তাঁদের জীবনযাপনের ওপর আরেক দফা খড়গ নামার ব্যবস্থা হয়েছে–ডিজেল কেরোসিনের দাম বেড়েছে ২৩ শতাংশ। এর প্রভাব যে সব জিনিসপত্রের ওপরে পড়বে, সেটা বোঝার জন্য জ্যোতিষী হতে হয় না , অর্থনীতিবিদও নয়। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে। নিম্ন এবং নিম্ন মধ্যবিত্তের জন্য বেঁচে থাকার সংগ্রাম কঠিন হচ্ছে প্রতিদিন। কিন্তু বাংলাদেশে অর্থবিত্তের আলোকচ্ছটা এত যে বাংলাদেশের এই চিত্রটা নিয়ে আমরা কতটা ভাবি, ভাবতে চাই, সেটাই প্রশ্ন।

Link copied!