• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

‘থ্রি চিয়ার্স ফর আওয়ার গার্লস’


ইমতিয়াজ মাহমুদ
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৩, ২০২১, ১০:৩৮ এএম
‘থ্রি চিয়ার্স ফর আওয়ার গার্লস’

অভিনন্দন মারিয়া মান্দা, মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমা, রিপনা চাকমা, আনুচিং মগিনি, আনাই মগিনি এবং পুরো বাংলাদেশ দলকে। এই ছোট মেয়েগুলি আমাদের জাতীয় পতাকাকে উচিতে তুলে ধরেছে। কৃতজ্ঞতা এই বাচ্চাগুলিকে। নত মস্তকে প্রণাম করি দলের সবাইকে। এইরকম দিন আমাদের কাছে প্রতিদিন আসে না—খুব বেশী সুযোগ আমরা পাই না খেলাধুলায় নিজের দেশকে নিয়ে গর্ব করার জন্যে। আজ এরকম একটা দিন আমাদের উপহার দিয়েছে এই মেয়েরা। কৃতজ্ঞতা জানাবো না? সালাম ঠুকব না? অবশ্যই সালাম ঠুকব আমাদের এই মেয়েদের জন্যে। 

আর ভাল লাগছে এই জন্যে যে আমাদের এই দলটার মধ্যে আজকে প্লেয়িং স্কোয়াডে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেয়েই ছিল পাহাড়ের ও সমতলের আদিবাসী। মারিয়া মান্দার কথা তয় আপনারা জানেন। তিনি তো আমাদের তারকা খেলোয়াড়। আনুচিং আর আনাই এরা দুইজন আবার সহোদরা। (যমজ সম্ভবত, আমি নিশ্চিত না যদিও।) মনিকা, ঋতুপর্ণা আর রিপনা রাঙ্গামাটি খাগড়াছড়ির মেয়ে। আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে আমাদের জাতীয় ফুটবল দলের মেয়েদের মধ্যে বেশীরভাগ মেয়েই (প্রায় সকলেই) হচ্ছে অপেক্ষাকৃত দরিদ্র ঘরে চাষাভুষা খেটে খাওয়া মানুষের মেয়ে। যেন চোখে আঙ্গুল দিয়ে এই মেয়েরা আমাদের বারবার জানিয়ে দেয়, ওরাই বাংলাদেশ, ওরাই এই ভূমির অগ্রসর সন্তান। 

না, বেশী কথা বলবো না। বিজয়ের দিনে, আনন্দের দিনে শুভেচ্ছা জানাতে হয়, অভিনন্দন জানাতে হয়, বাচ্চাদের জন্যে শুভ কামনা করতে হয়। কেন এই দরিদ্র ঘরের মেয়েরাই ফুটবলে বেশী আসে সেটার একটা রাজনীতি আছে, সেই রাজনীতির কথা আরেকদিন বলব। আজকে শুধু আমার মেয়েদের জন্যে আপনাদের সকলের কাছে শুভেচ্ছা কামনা করি। ওরা ওদের কাজটা ঠিকই করে দেখিয়েছে। কত বাধা, কতো বিঘ্ন, ক্ষুধা দারিদ্র্য, অবহেলা বঞ্চনা! এই সবকিছুকেই ওরা উডিয়ে দেয় ফুটবলে লাথি মেরে। জানিয়ে যায়—আমরা আছি, আমরা লড়তে জানি। সালাম জানাই মেয়েদের। 

শুধুই শুভেচ্ছা জানাই আজ, শুধুই ভালোবাসা, শুধুই চোখের জল, শুধুই আদর। ইচ্ছে করে ওদের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করি। আবার ভাবি যে না, থাক এইসব আদিখ্যেতা করে ঢং করে কি হবে! ওদের যদি একটু সম্মানজনক খানিকটা সম্মানীও প্রদান করতো আমাদের বোর্ড, তবুও না হয় একটু মুখ থাকতো আমাদের। আমরা ওদের তো কিছুই দিতে পারিনি—ম্যাচ ফি বা নিয়মিত বেতন ইত্যাদি যা দেওয়া হয় ওদের সেটা শুনলে লজ্জা পাই। দেশ নাকি অনেক এগিয়ে গেছে, আমাদের মেয়েরা যারা খেলাধুলায় আছে ওদের একটু বাড়তি সম্মানী দিলে কী হয়! দেশ দেউলিয়া হয়ে যাবে? কত টাকা লাগে? একেকজন চোর যে পরিমাণ টাকা নিয়ে পালিয়েছে বলে শুনি, সেগুলির যেকোনো একটার ভগ্নাংশও তো লাগে না।   

তবুও ওদের জয়ে অহংকার করি। আমাদের কন্যারা সম্মান বয়ে এনেছে, একটু অহংকার করবো না! অবশ্যই করবো। সারা দুনিয়াকে চিৎকার করে বলবো, দেখ ব্যাটারা, আমাদের মেয়েরা কীভাবে লড়াই করে, বিজয় ছিনিয়ে আনে দেখ। আমরা কি কারো চেয়ে কম নাকি? মেয়েরা তো নয়ই। জামার কলার উল্টে ঘাড় বাঁকা করে ফুটানি করবো না? কেন নয়? অবশ্যই করবো। 

থ্রি চিয়ার্স ফর আওয়ার গার্লস, হিপ হিপ ...

Link copied!