কান্নাটা শোকের প্রকাশ। শোকার্ত মানুষ কাঁদবে, এটাই হচ্ছে স্বাভাবিক বিষয়। তবে, সব মানুষ সমানভাবে কাঁদতে পারে না। কেউ অল্প শোকে আকুল হয়ে কেঁদে ভাসায়, কেউবা গভীর শোকেও কাঁদে না কিংবা অল্প কাঁদে। সমস্যা হচ্ছে যে সামাজিকভাবে কিছু কিছু জায়গায় কাঁদা লাগে। না কাঁদলে আপনাকে সবাই খারাপ ভাববে। ধরুন, প্রবল অত্যাচারী শাশুড়ি মারা গেছে। অত্যাচারিত বউ মনে মনে খুশি শাশুড়ির মৃত্যুতে। কিন্তু, প্রকাশ্যে সে সেই খুশি দেখাতে পারবে না। তাকে কাঁদতে হবে গলা ছেড়ে। কিংবা আপনি জানেন আপনার মা মারা যায়নি, কিন্তু দেশবাসীকে বিশ্বাস করাতে হবে মা মারা গিয়েছে। ফলে, ক্যামেরার সামনে আপনি শুধু ডাক ছেড়ে কাঁদবেন আর কাঁদবেন। এই নকল কান্নার মতো কঠিন কাজ আর নেই। যারা পারে, তাদের পুরস্কার দেওয়া উচিত। নকল কান্নাটা কিন্তু খুব কাজের জিনিস। এমনি এমনি কেউ নকল কান্না করে না। এর পিছনে স্বার্থ থাকে। কান্নাটা স্পর্শ করে যায় অন্য মানুষের হৃদয়। ফলে, নিজের স্বার্থ খুব সহজেই আদায় করে নেওয়া যায় কান্না দিয়ে।
আগেই বলেছি, নকল কান্না করা সহজ কাজ নয়। সব মানুষ কাঁদতেও পারে না। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের যদি জিজ্ঞেস করেন, প্রায় সবাই বলবে যে কান্নার দৃশ্যে অভিনয় করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে কঠিন কাজ। এর জন্য গ্লিসারিন পর্যন্ত ব্যবহার করতে হয় তাদের।
কান্নাকাটি করা কঠিন বলে রাজস্থানের মানুষ একটা সহজ রাস্তায় হেটেছে। ওখানে একদল নারী আছে, যারা আপনার হয়ে কেঁদে দেবে। এদেরকে রুদালি বলে। বাড়িতে কেউ মারা গেলে রুদালিদের ভাড়া করে আনা হয়। এরা পেশাদার কান্নাকাটি করা লোক। কে মারা গেছে, কীভাবে মারা গেছে, এগুলো তাদের বিবেচ্য নয়। ডেকে পয়সা দিলেই এরা মরা বাড়িতে এসে কান্না শুরু করে দেয়। দীর্ঘদিনের প্রশিক্ষণের কারণে সহজেই তারা কাঁদতে পারে। কান্নার সময়ে চোখের পানি মোছে না তারা। ফলে, সবাই দেখতে পায় হাপুস নয়নে কাঁদছে তারা।
বাংলাদেশেও রুদালি ব্যবসা শুরু করা যেতে পারে। আমাদের এখানেও বিনা কারণে গলা ছেড়ে কান্নাকাটি করার লোকের অভাব হবে না বলেই মনে হয়।
লেখক : প্রগতিশীল চিন্তাবিদ, সমাজ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক