• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সিনেমা হতে পারে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রধান মাধ্যম


স্বকৃত নোমান
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২২, ০২:৩৬ পিএম
সিনেমা হতে পারে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রধান মাধ্যম

অভিনেতা সুমন আনোয়ারের শেয়ার নেওয়া এক পোস্টে দেখা যাচ্ছে, ময়মনসিংহ ছায়াবাণী সিনেমা হলের গেটে অসংখ্য দর্শকের ভিড়, ঠেলাঠেলি এবং ‘হাওয়া হাওয়া’ বলে চিৎকার। সিনেমা দেখার জন্য হলে এমন ভিড় নব্বইয়ের দশকে দেখা যেত, যখন সহজে টিকিট পাওয়া যেত না, ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি হতো, যেমন বিক্রি হতো বা হয় ট্রেনের টিকিট। সিনেমা হলের টিকিট কাউন্টারের ভিড়ের মধ্যে মারামারি, রক্তারক্তির ঘটনাও ঘটত।

‘হাওয়া’ এখনো দিখিনি। জানি না কেমন সিনেমা। তবে সিনেমাটিকে ঘিরে যে তৎপরতা দেখা যাচ্ছে, তা সাংস্কৃতিক জাগরণের ইঙ্গিত বহন করছে। সিনেমাটি মুক্তির আগে প্রচারণার অংশ হিসেবে এর পরিচালক ও অভিনয়শিল্পীগণ জাবি, বুয়েটসহ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছেন, ছাত্রছাত্রীদের মাতিয়ে তুলেছেন। তাদের এই তৎপরতা প্রশংসনীয়। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘পাপপুণ্য’ সিনেমাটি নিয়ে এমন তৎপরতা হতে পারত। এটি একটি ভালো সিনেমা। কিন্তু হয়নি। ভালো সিনেমাগুলো মুক্তির আগে যদি এভাবে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়, তবে চলচ্চিত্রের সুদিন ফিরে আসবে, অন্ধতা-বদ্ধতার নিপাত ঘটবে, সিনেমার নামে ভাঁড়ামি বন্ধ হবে।

‘হাওয়া’ সিনেমায় ব্যবহৃত হাশিম মাহমুদের ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি সম্ভবত বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের কানে বাড়ি দিয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, নাটক-সিনেমা-সংগীতবিরোধী কতিপয় ধর্মব্যবসায়ী গানটির সুর ও কথা নকল করে নিজেরা গান বানিয়ে গাইছে। অর্থাৎ গানটির প্রভাব তারাও এড়াতে পারেনি। বাধ্য হয়েছে গানটি নকল করতে। 
চলচ্চিত্র জনযোগাযোগের সবচেয়ে প্রভাবশালী মাধ্যম। গল্প-উপন্যাস মানুষকে প্রত্যক্ষভাবে মোটিভেট করতে পারে না, চলচ্চিত্র পারে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ জ্ঞানজ্ঞানের নিম্নস্তরে অবস্থান করছে। তাদের জন্য উচ্চমার্গের সিনেমা বানিয়ে কোনো লাভ নেই। তারা দেখবে না। বাংলাদেশের কয়েকজন চলচ্চিত্রকারকে চিনি, যারা সিনেমা নির্মাণ করেন, কিন্তু সেসব সিনেমা কেউ দেখে না। না দেখার কারণ, তাদের সিনেমাগুলোতে না থাকে কোনো গল্প, না থাকে কোনো নির্মাণকৌশল, না থাকে ভালো কোনো গান। যা ইচ্ছা তাই করে বলে দিচ্ছে, এটা ‘আর্ট ফিল্ম।’

তাদের কারো কারো সঙ্গে কথা বলে বুঝতে পারি, তাদের ধারণা, তারা প্রত্যেকে কালজয়ী সিনেমা বানাচ্ছেন, কিন্তু আফসোস, কেউ তাদের সিনেমা বুঝতে পারছে না, কেউ দেখছে না। তাদের অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশে তাদের সিনেমার মুক্তির কোনো খবর নেই, কিন্তু ওয়াল্ড প্রিমিয়ার হয়ে যাচ্ছে। কী হাস্যকর ব্যাপার! সিনেমা হতে পারে সাংস্কৃতিক আন্দোলনের প্রধান মাধ্যম। সেজন্য প্রয়োজন বাংলাদেশের দর্শকদের উপযোগী সিনেমা নির্মাণ। সিনেমার সুদিন ফিরলে সামাজিক অন্ধকার দূর হবে।

সম্প্রতি লেখক ও নাট্যকার শাকুর মজিদ এক পোস্টে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন, “...এফডিসিকে রাজধানী থেকে সরিয়ে সফিপুর বা গাজীপুরের কোনো বনাঞ্চলে নদী-পাহাড়-জঙ্গল-সবুজ মাঠ সংলগ্ন জায়গায় নিয়ে গেলে সবচেয়ে ভালো হয়। এখন সময় নতুন চলচ্চিত্র ভাষার, যা এফডিসির বাইরে থেকে আয়ত্ব করতে হবে।” তাঁর এই বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ। এফডিসি দিয়ে কিছু হবে না। ওটা কাওরান বাজারে রাখার কোনো প্রয়োজনীয়তা এখন আর নেই। এটা ঢাকার বাইরে সরিয়ে নেওয়াই ভালো। জায়েদ খান, মিশা সওদাগর গং প্রতিষ্ঠানটিকে নাস্তানাবুদ করে ছেড়ে দিয়েছে। এটা নিয়ে আর কোনো আশা নেই। তরুণ চলচ্চিত্রকাররা এসে গেছে। তারা নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। এফডিসি তাদের প্রয়োজন নেই। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া প্রতিষ্ঠান এফডিসির বাইরে দাঁড়িয়ে তাঁরা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের নেতৃত্ব দেবেন। তাঁদের জন্য শুভ কামনা।

Link copied!