যারা লেখালেখির সাথে যুক্ত, তাদের কি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিরাট কোনো উপস্থিতির প্রয়োজন আছে? অনেকেই বলেন, না, নেই। যুক্তি হিসেবে তারা বলেন, যে কালে আমরা হুমায়ূন আহমেদ, সুনীল কিংবা সমরেশ মজুমদারের গল্প পড়তাম, আমরা কি সেকালে তাদের ব্যক্তিগত জীবন, প্রাত্যহিক মতামত, রাজনৈতিক দর্শন—এসব সম্পর্কে জানতাম? জানতাম না। না জেনেই শুধু তাদের বই পড়েই তাদেরকে ভালো লাগত। ভিন্ন বইয়ের দিকে হাত বাড়াতাম।
আবার এর একটা বিরোধী মতও আজকাল তৈরি হয়েছে। সে পক্ষের যুক্তি হলো, আজকের এই যুগটাই হলো শর্ট স্প্যানের। আউট অব সাইট, আউট অব মাইন্ড। কাজেই শুধু লেখালেখি করলেই হবে না, ক্রমাগত পাঠকের সাথে মিথস্ক্রিয়া করে যেতে হবে। তাদেরকে জানান দিয়ে যেতে হবে আপনার উপস্থিতি। সেটা লেখা দিয়ে হোক, ছবি দিয়ে হোক, কিংবা চলমান রাজনৈতিক প্রসঙ্গে নানা মন্তব্য ছুড়ে দিয়ে হোক। মোট কথা, বাজারটা চাঙ্গা রাখতে হবে। ঘুমিয়ে পড়লে হবে না। ঘুমন্ত লেখককে কেউ পছন্দ করে না।
আমি অবশ্য ব্যক্তিগতভাবে দুই মতের মাঝামাঝি। ফেসবুকে আমি বিরাট বন্ধুসভা বানিয়ে চলতে চাই না। বিশেষ করে ফেসবুকের মাধ্যমে পাঠক-শ্রেণিকে সম্পৃক্ত করার ব্যাপারে আমার মাঝে কিছুটা দ্বিধা কাজ করে। তবে সেটাই যে উত্তম পন্থা, সেটা আমি বলছি না।
গতকাল এক ইউরোপিয়ান সিরিয়াল দেখার পর ব্যাপারটা নিয়ে আবারও ভাবলাম। সিরিয়ালটি একটি পাবলিশিং হাউজের ওপর। তাদের নানা কর্মকাণ্ড নিয়ে। এখানে দেখায়– নতুন এক লেখক পাণ্ডুলিপি নিয়ে এসেছে। প্রকাশক আগেই তাকে জিজ্ঞেস করে, ইনস্টাগ্রামে আপনার ফলোয়ার কতজন? তারপর দেখানো হয়, একজন লেখক/লেখিকা নিজের কিছু স্ক্যান্ডাল ছবি ইনস্টাগ্রামে আপলোড করে দেন। সেগুলো এমনই ভালগার যে ইনস্টাগ্রাম পর্যন্ত সেগুলো ডিলিট করে দিতে বাধ্য হয়। তার মাঝেই অবশ্য সেটি নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। কিছু অনলাইন পত্রিকা সেগুলো নিয়ে কলাম লেখে। লেখক নেগেটিভ পাবলিসিটি পেয়ে যান। অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় উপস্থিতির গুরুত্বটা পাশ্চাত্যেও বেশ জোরেশোরে শুরু হয়েছে। (আমি যদিও আগে ভাবতাম এটা হয়তো শুধু আমাদের দেশের ক্ষেত্রেই ঘটছে।)