আমি ছয় বছর মস্কোতে পড়াশোনা করেছি (১৯৭৭-১৯৮৩), ফিরে গেছি দু’বার ১৯৮৭ আর ২০১৭ সনে। রুশ দেশ, সংস্কৃতি ও বন্ধুদের ভালোবাসি। রুশ দেশের সিকিউরিটির নামে পুতিন যে জঘন্য কাজে নিয়োজিত হয়েছে তাতে ভীষণ বিচলিত আছি বললে কম বলা হবে। পুতিন একজন জাতীয়তাবাদী রুশ, যে কিনা পুরনো জার সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধার করতে চায়। সেখানে ইউক্রেন নামে কোনো রাষ্ট্রের স্থান নেই। যখন রুশ বাহিনিকে ফুল হাতে কেউ অভ্যর্থনা জানালো না, সে সিদ্ধান্ত নিল পুরো দেশটাকে একটা মৃত ধ্বংসস্তূপে পরিণত করবে। একজন মানুষের সিদ্ধান্ত কী করে কোটি কোটি মানুষের ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে!
জার্মানির তৎকালীন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল যখন এক মিলিয়ন সিরীয় শরণার্থীকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখন পুতিন বলেছিল জার্মানি নিতান্তই বোকা, কারণ তারা খুনি ও ধর্ষকদের জায়গা দিচ্ছে। এই শরণার্থীদের একটা বড় অংশ তৈরি হয়েছিল আসাদ ও তার সাহায্যকারী রুশ বাহিনির বোমাবর্ষণে। রুশ দেশে শরণার্থীদের জায়গা নেই।
গত এক দশক ধরে পুতিন ইউরোপের সমস্ত দক্ষিণপন্থী শরণার্থী-বিরোধী বর্ণবাদী রাজনৈতিক দলগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে—ইতালীর লেগা পার্টি, অস্ট্রিয়ার ফ্রিডম পার্টি, ফ্রান্সের ন্যাশনাল পার্টি, জার্মানির অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি। যারা মনে করেন, পুতিন মার্কিন শক্তির পাল্লা দেবে, তারা একটু ভেবে দেখবেন পুতিন রুশদেশে কী ধরনের আইন করেছেন? এর মধ্যে অন্যতম হলো, যুদ্ধের ব্যাপারে কোনো খোলাখুলি খবর দিলে ১৫ বছরের জেল। বাংলাদেশে একটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন আছে, যাকে ব্যবহার করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে অযথা হয়রান করা হয়।
এই যুদ্ধে পুতিন জিতলে একনায়কতন্ত্রেরই জয় হবে—আগামী নির্বাচনে মার্কিন দেশে ট্রাম্প বা ট্রাম্পের মতো অতি ডান, নাগরিক অধিকার-বিরোধী অংশের আসার আশঙ্কাই বেশি হবে। মার্কিন দেশে পুতিনের সবচেয়ে বড় ভক্ত হলো ট্রাম্প। রিপাব্লিকান পার্টির অতি ডান অংশ মনে করে পুতিন হলো পশ্চিমের সভ্যতার একমাত্র উদ্ধারকর্তা—ঘোড়ায় চড়া শ্বেত knight। ইউক্রেনের যুদ্ধে যদি কেউ পুতিনের পক্ষে থাকে তাহলে মার্কিন দেশে অতি ডান, অভিবাসন-বিরোধীদের সঙ্গে তারা মিল খুঁজে পাবে।
অনেকেই ফিলিস্তিন ও ইরাকের উদাহরণ দিয়েছেন। একটি অন্যায্যতা অন্য অন্যায্যতাকে ন্যায্যতা দিতে পারে না। যদি কেউ মনে করেন সেজন্য এই যুদ্ধের ফলাফলে তার কিছু আসে যায় না, তাহেল তিনি ভুল করবে। আগামী সময়ে পৃথিবীজুড়ে ডানপন্থী একনায়কতন্ত্রের হাত তাতে শুধু শক্ত হবে।
আমি মনোযোগ দিয়ে রুশ মাধ্যম অনুসরণ করছি। খোলাখুলি খবর দেওয়ার সব মাধ্যমকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, (বহু রুশ IT কর্মী এবং সাংবাদিক বাইরে পালিয়েছে। যারা খুব সাহসী তারা রাস্তায় নামছে—চাকরি ও জেলের ভয় থাকা সত্ত্বেও। তাদেরকে আমার অভিবাদন, কারণ বাইরের সংবাদ না পাওয়া সত্ত্বেও তারা পরিস্থিতি অনুধাবন করতে পারছে।