• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

বাংলাদেশের ৫০ বছর: বিদেশি চাপের দীর্ঘ বহর


মাসুদা ভাট্টি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১৬, ২০২১, ০৮:৪১ এএম
বাংলাদেশের ৫০ বছর: বিদেশি চাপের দীর্ঘ বহর

বাংলাদেশের জন্ম প্রক্রিয়াতেই ছিল বিদেশি-বিরোধিতা। বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তখন চীনের সঙ্গে মৈত্রী করতে গিয়ে পাকিস্তানের সামরিক শাসক জেনারেল ইয়াহিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়েছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে সর্বাত্মকভাবে রুখে দেওয়ার চেষ্টায় সপ্তম নৌবহর পাঠানোর হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছিল। সোভিয়েত-ভারত মৈত্রী চুক্তির আওতায় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ‘সেস্তই ফ্লত’ (ষষ্ঠ নৌবহর) পাঠানোর পাল্টা হুমকি দেওয়ায় সে যাত্রায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঠেকানো যায়নি। তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের অ-কূটনৈতিকসুলভ ব্যবহার এবং নোংরা ভাষায় ইন্দিরা গান্ধীকে আক্রমণ স্নায়ুযুদ্ধকালীন রাজনীতির ইতিহাসে ন্যক্কারজনক উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে (তথ্যসূত্র: বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ: ব্রিটিশ দলিলপত্র, মাসুদা ভাট্টি, জ্যোৎস্না পাবলিশার্স, ঢাকা)।

পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ঘটা বাঙালি-নিধন তথা গণহত্যার কথা বিশ্ব ইতিহাসে আলোচিত হলেও ১৯৭১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি নথিতে এই হত্যাযজ্ঞের স্বীকৃতি নেই বলে এখনও বাঙালিকে তা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে বেগ পেতে হচ্ছে। অথচ এর চেয়ে অনেক কম সংখ্যক মানুষের মৃত্যুকেও গণহত্যা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পশ্চিম, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কখনোই এ বিষয়ে কোথাও আলোকপাত করা হয় না বা সেরকম চাপ আসে না।

পাকিস্তানের কারাগারে ‘বন্দি বিশ্ববিবেক’ বলে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য দেশে দেশে মানুষ রাস্তায় নামলেও, খোদ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজপথে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির জন্য, পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা বন্ধের জন্য মিছিল হলেও, নিউ ইয়র্কের মেডিসন স্কোয়ারে বাঙালি শরণার্থীদের সাহায্যার্থে ‘কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ আয়োজিত হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির বিষয়ে একটি বাক্যও তখন ব্যয় করা হয়নি। উল্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া, প্রেসিডেন্ট নিক্সন ও হেনরি কিসিঞ্জারের মধ্যে বিভিন্ন ফোনালাপ থেকে আমরা জানতে পারি যে তারা বন্দি মুজিবকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে কথা বলতেন। এর মানে এটাই দাঁড়ায় যে বন্দি শেখ মুজিবকে হত্যা করলেও আসলে তাদের কিছুই আসতো যেত না। ইয়াহিয়া সে সাহস দেখাননি, বিশ্ব নেতৃত্বের চাপে, যার মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল না।

বাংলাদেশ স্বাধীন হলো। বঙ্গবন্ধু দেশের শাসনভার গ্রহণ করলেন। শুরু হলো মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশবিরোধী, বঙ্গবন্ধুবিরোধী ষড়যন্ত্রের নতুন যজ্ঞ। কিসিংস আর্কাইভ, উন্মুক্ত হওয়া সিআইয়ের নথিপত্র এবং মার্কিন অন্যান্য দলিলপত্র ঘেঁটে এটাই জানা যায় যে চিলির আলেন্দে, কঙ্গোর প্যাট্রিস লুমুম্বা, ইন্দোনেশিয়ার সুকর্নোসহ এই গোয়েন্দা সংস্থাটি যাদের হত্যা করেছিল তার মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং তার পূর্ববর্তীকালে বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলায়ও তাদের হাত ছিল। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশে ঘটা দুর্ভিক্ষের অন্যতম কারণ ছিল মার্কিন খাদ্য-রাজনীতি। ওপেকের সঙ্গে তেলের মূল্য নিয়ে দরকষাকষিতে বাংলাদেশকে ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যে কুখ্যাত রাজনীতির আশ্রয় নেয় তার নাম ‘খাদ্য রাজনীতি’।  

অর্থনীতিবিদ রেহমান সোবহানের মতে, “তেলের মূল্যবৃদ্ধির শিকার তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো এবং ওপেকের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির পাশ্চাত্য কৌশলের সঙ্গে বাংলাদেশ নিজেকে জড়িত করতে অনিচ্ছুক ধরে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নতুন অস্ত্রের আশ্রয় নিয়েছিল। সেই অস্ত্র ছিল ভয়ঙ্কর শক্তিশালী অস্ত্র ‘খাদ্যের রাজনীতি’। এর মাধ্যমে খাদ্যের জন্য পরনির্ভর বাংলাদেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এটাই বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিল যে ওপেক নয়, বরং পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতাই হচ্ছে তার বাঁচার একমাত্র পথ।” (খাদ্য ও দুর্ভিক্ষের রাজনীতি)।

পাকিস্তানের সঙ্গে তখনও হাত মিলিয়ে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই, মার্কিন প্রশাসন তথা গোয়েন্দা চক্র এবং এদেশীয় দোসরদের মিলিত শক্তিই যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তারিখে নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটায় তা এখন আর গোপন কোনও বিষয় নয়। ব্লাড টেলিগ্রাম বইয়ের লেখক আর্চার ব্লাড স্পষ্টই বলেছেন যে মার্কিন প্রশাসনের জ্ঞাতসারে এবং মার্কিন গোয়েন্দা চক্রের প্রত্যক্ষ মদতে বাংলাদেশে এই ভয়ঙ্কর রক্তকাণ্ড সংঘটিত হয়। আমরা বিশ্বাস করি যে ১৯৭১ সালে যে কাজটি পাকিস্তানি সামরিক শাসকগণ করার সাহস করেননি সেই অসমাপ্ত কাজটিই ১৯৭৫ সালে করেছিল এই মার্কিন, পাকিস্তানি এবং তাদের বাংলাদেশি এজেন্টরা। ‘লিগেসি অব ব্লাড’-এ ভর করে বাংলাদেশে এসেছিল প্রথম সেনা শাসন। সেই সেনা শাসন ছিল হত্যা, ক্যু এবং পাল্টা ক্যু-এ ভরা এক জংলি শাসন, যেখানে মুক্তিযোদ্ধা এবং বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্বকে হত্যাই ছিল মূল কাজ। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে নতুন এক রাজনৈতিক দল সৃষ্টি করা হয়েছিল বিদেশি প্রেসক্রিপশনে, সেনা-গণতন্ত্র বলে নতুন এই ধারাটির পৃষ্ঠপোষকতা আজ অবধি কিন্তু পশ্চিম তথা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই করে যাচ্ছে।

বিস্ময়কর এই যে গণতন্ত্রের নামে বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া দু-দুটি সামরিক ছাউনিজাত রাজনৈতিক দল সৃষ্টির পেছনে মার্কিন সহযোগিতা, পৃষ্ঠপোষকতা ও সমর্থন এখন আর লুকোছাপার কোনো বিষয় নয়। এই বাস্তবতার ভেতরেই বাংলাদেশকে এখন টিকে থাকতে হচ্ছে।

এই সেনাগণতন্ত্রের স্বৈরশাসকদ্বয় ও তাদের সৃষ্ট রাজনৈতিক দলসমূহকে দিয়ে পশ্চিম যখন যা ইচ্ছা তাই-ই বাংলাদেশের ওপর চাপাতে সক্ষম হয়েছে। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, ডব্লিউটিও-সহ সব আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘দাতা সংস্থার’ নাম নিয়ে বাংলাদেশের ওপর যত অনৈতিক ও অবিশ্বাস্য চাপ সৃষ্টি করেছে এবং সফল হয়েছে তার লিস্ট সামনে নিয়ে বসে নিরপেক্ষ গবেষক যদি গবেষণা করেন তাহলে দেখতে পাবেন, এই সামরিক শাসন ও সামরিক শাসকদের তৈরি রাজনৈতিক দলগুলোর শাসনামলে কীভাবে বাংলাদেশকে ‘এক টাকা’ দিয়ে ‘একশ টাকা’ তুলে নেওয়া হয়েছে। গণতন্ত্রের নামে আজকে এত কথা বলা হয় কিন্তু এ দেশে গণতন্ত্র হত্যা নিয়ে কোনও কথা শোনা যায় না, দেশের দু’টি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের জন্ম প্রক্রিয়া ও অগণতান্ত্রিক চরিত্র নিয়ে কোনও কথা শোনা যায় না। এ বড় বিস্ময়ের ব্যাপার কিন্তু, যাই-ই বলেন না কেন!

তারপরও বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়ায়, জনগণ কখনও কখনও ষড়যন্ত্রের জাল কাটতে সক্ষম হয়। কিন্তু ক্ষমতায় গিয়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের নিয়মিত ষড়যন্ত্রকে ব্যর্থ করাই হয়ে ওঠে জনগণের শক্তির মূল কাজ, সেভাবেই ছক কেটে তাদের ব্যস্ত রাখা হয়। স্নায়ুযুদ্ধ-পরবর্তীকালে গরিব অর্থনীতির দেশগুলোতে ধর্মোন্মাদনা রপ্তানির জন্য মধ্যপ্রাচ্যকে যেভাবে উসকে দেওয়া হয়েছিল, তা কোন গণতান্ত্রিক চর্চার মধ্যে পড়ে? তা যেকোনো গবেষককেই দ্বন্দ্বে ফেলে দেয় নিশ্চিতভাবেই। ২০০১ সালে হঠাৎ করেই বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেওয়া শুরু হলো ‘মধ্যপন্থী মুসলিম রাষ্ট্র’ হিসেবে। যার সরাসরি ফসল বাংলাভাই এবং শায়খ আব্দুর রহমান, মুফতি হান্নান এবং দেশব্যাপী বোমা হামলা। একের পর গণতন্ত্রপন্থী নেতাকে প্রকাশ্য জনসভায় হত্যা এবং একুশে আগস্টের নির্মম গ্রেনেড হামলা। এটা বিশ্বাস করার কোনোই কারণ নেই যে আন্তর্জাতিক রাজনীতির মদত ছাড়া বাংলাদেশে এত বড় ভয়ঙ্কর দানবের উত্থান ঘটতে পেরেছিল।

১/১১-এর সরকার ছিল স্বাধীনতা-পরবর্তীকালে বাংলাদেশে আরেক নতুন ‘অগণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা’, যেখানে সুশীল সমাজ নামধারী কিছু চিহ্নিত এনজিও-ব্যবসায়ীদের সামনে এনে সেনাবাহিনীকে তাদের রক্ষাকারীর ভূমিকায় রাখা হয়েছিল। এটিও ছিল পশ্চিমা প্রেসক্রিপশন তথা বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দেওয়া রাজনীতি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যক্তিকে বিখ্যাত বানিয়ে এ দেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা হয়েছে দেশের জনপ্রিয় রাজনৈতিক নেতাদের কারাবন্দী করে। কী দুঃসময় পার করেছে এ দেশের রাজনীতি, এবং সেই দগদগে স্মৃতিতে ভর করেই জনগণ ভোট দিয়েছে। কারণ, নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেই অপশক্তিকে বাধ্য করেছে সাধারণ মানুষ।

এরপর আবারও সেই চাপেরই ইতিহাস। পদ্মা সেতুতে দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া থেকে শুরু করে একের পর এক বাধা। যদিও মার্কিন ইতিহাসে নিন্দিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময়কালটা যে বাংলাদেশের জন্য সর্বাঙ্গীণভাবে সুখকর ছিল তা আজকে দাঁড়িয়ে নিশ্চিত করেই বলা যায়। কারণ, এই সময় বাংলাদেশসহ বিশ্ব মার্কিন চাপমুক্ত হয়ে নিজের মতো করে কাজ করতে পেরেছিল। কখনও গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে, কখনও মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে ক্ষুদ্র ও অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলোকে কব্জায় রাখার মার্কিন নীতির পৃষ্ঠপোষকতা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঢালাওভাবে দেননি। তিনি ব্যস্ত ছিলেন বৃহৎ শক্তিবর্গের সঙ্গে নিজস্ব নীতিতে বোঝাপড়ায়।

ডেমোক্র্যাটদের হাতে গড়া আইএস এবং তালেবান অপশক্তির অনাচার থেকে ট্রাম্প পৃথিবীকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন বলে লক্ষ করা যায়। কিন্তু মার্কিন গণতন্ত্রের নতুন প্রেসিডেন্ট ক্ষমতায় আসা মাত্রা দেশে দেশে নতুন আতঙ্ক সৃষ্টিতে নেমে পড়েছেন। প্রথমেই আফগানিস্তান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে সেখানে তালেবান শাসনের আওতায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইতিহাস সৃষ্টির সুযোগ করে দিয়েছেন। তারপরেই গণতন্ত্র সম্মেলনের নামে গণতন্ত্রের সার্টিফিকেট বিতরণের কাজ শুরু করেছেন। সর্বশেষ বাংলাদেশের একটি বিশেষ বাহিনী ও তার বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন প্রধানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন।

লেখাটির শুরুতেই বলেছিলাম, ৫০ বছর আগে বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার যুদ্ধ করছে তখন চীনের বন্ধুত্ব লাভের আশায় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিক্সন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারকে পাঠিয়েছিলেন গোপনে চীন সফরে এবং সেই সফর ও সম্পর্কের কারণেই বাংলাদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কেবল নিজেদের স্বার্থ রক্ষার্থে। আজ বাংলাদেশ স্বাধীনতার ৫০ বছর উদযাপন করছে। আজও সেই চীনের কারণেই (দৃশ্যত এবং কার্যত) বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টির লক্ষ্যেই যে এই ‘নিষেধাজ্ঞা’ তা কেউ মুখে না বললেও সাধারণ চা-স্টলের আলোচনাতেও শোনা যাচ্ছে।

এখানে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে কি হয়নি তা নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলতে পারে এবং চালাতেও হবে আমাদের। কিন্তু মানবাধিকার লঙ্ঘনকে অজুহাত হিসেবে নিয়ে ‘নিষেধাজ্ঞা’ জারি হলে বাংলাদেশে সেই নিষেধাজ্ঞা আসার কথা ছিল ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্টের পর, ২০০১-২০০২ সালে অপারেশন ক্লিনহার্টে নিরাপত্তা হেফাজতে শত শত মৃত্যুর ঘটনার পর; আর গণতন্ত্র না থাকার জন্য হলে সবার আগে হওয়া উচিত ছিল জেনারেল জিয়া ও জেনারেল এরশাদের ক্ষমতা দখলের পর কিংবা নিদেন ১/১১-তে গণতন্ত্রকে থামিয়ে দিয়ে অরাজনৈতিক সরকার গঠনের পর। কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে কিছুই হয়নি, বরং ১৯৭১ ও ১৯৭৫-এর খুনিরা গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, যুক্তরাজ্যে। আর হয়েছে কখন? এখন, যখন বাংলাদেশ তার অবস্থান বদলানোর চেষ্টা করছে, বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনীতির ঘোরপ্যাঁচের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিজেদের শক্তিবলে টিকে থাকার মাধ্যমে। ‘নির্বাচিত (সিলেক্টিভ) মানবাধিকার’ কিংবা ‘পছন্দের (চোজেন) গণতন্ত্র’ পশ্চিমের হাতে দুর্বল দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণের অস্ত্র হিসেবে যে আর বেশি ধারালো নেই সেটা বিগত দশকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ দেখিয়ে দিয়েছে। ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশ হয়তো এবার সেটা দেখাতে সক্ষম হবে।

শুভ পঞ্চাশ প্রিয় বাংলাদেশ আমার।

লেখক: এডিটর ইনচার্জ, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি

Link copied!