নারী সাফ ফুটবলে বাংলাদেশ দল অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। দলকে অভিনন্দন, দলের প্রতিটি খেলোয়াড়কে অভিনন্দন। অভিনন্দন এই দলের পেছনে থেকে যারা কাজ করেছেন। এই বিজয়ের অংশীদার তারাও। সাফল্যের শরিক দলের কোচ।
দেশ হিসেবে বাংলাদেশের জন্যে এটি একটি বিরাট প্রাপ্তি। এই প্রাপ্তিকে দেশের জনগণের জন্যে উৎসর্গ করেছেন বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন। বাংলাদেশে যারা এই আনন্দে সঙ্গত কারণেই উদ্বেলিত, তাদের এবং অন্যদের অনুরোধ করি ভালো করে দলের দিকে তাকিয়ে দেখুন। এর ভেতরে আর কোনো বার্তা আছে কিনা। দলের এই বিজয়ে আর কিছু শিক্ষণীয় আছে কিনা।
এই দলই বাংলাদেশ। বাংলাদেশের নাগরিকদের যে বৈচিত্র্য তার প্রতিভূ এই দল। যে জাতিসত্তার স্বীকৃতি দিতে রাষ্ট্র অনীহ, এই দলে তারাও আছেন। যারা জাতীয়তা এবং ধর্মের নামে সংখ্যাগুরুবাদের প্রচারক, যারা এইভাবে দেশের বিভক্তিতে পারঙ্গম তাদের জন্যে আবার বলি, ভালো করে তাকিয়ে দেখুন, এটাই বাংলাদেশ।
শুধু তাই নয়, এই দলের এক কীর্তিমান খেলোয়াড় সানজিদা আক্তার খেলার আগে লিখেছেন, “পাহাড়ের কাছাকাছি স্থানে বাড়ি আমার। পাহাড়ি ভাইবোনদের লড়াকু মানসিকতা, গ্রাম বাংলার দরিদ্র ও খেটে খাওয়া মানুষদের হার না মানা জীবনের প্রতি পরত খুব কাছাকাছি থেকে দেখা আমার। ফাইনালে আমরা একজন ফুটবলারের চরিত্রে মাঠে লড়বো এমন নয়, এগারোজনের যোদ্ধাদল মাঠে থাকবে, যে দলের অনেকে এই পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বল নিয়ে, বোনের অলংকার বিক্রি করে, অনেকে পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বন হয়ে।”
যারা পাহাড়ে-সমতলে ভাগ করেন, তাদের জন্যে এই কথা জরুরি। বাংলাদেশ এই দুই এলাকার মানুষের কাছ থেকেই প্রাণ শক্তি সঞ্চয় করবে। এই কথাগুলো একই সঙ্গে আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ‘উন্নয়নের অগ্রযাত্রা’ যাদের পেছনে ফেলে রেখে চলে যাচ্ছে, পরিকল্পনায় যাদের কথা সবচেয়ে কম বিবেচ্য, সেই শ্রেণির মধ্য থেকে উঠে আসা মানুষেরাই এই বিজয়ের কারিগর। এই দলের সাফল্য একদিনে আসেনি। এই সময়ে তাদের যতটা সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্য ছিলো তার কতটা তারা পেয়েছেন সেটার হিসেব করুন। আগামীতে তাদের এবং তাদের উত্তরসূরিদের পথ কতটা মসৃণ?
সমস্ত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও ক্রমাগতভাবে খেলোয়াড়দের অধ্যবসায়ই এই বিজয়ের ভিত্তি। আর তা প্রমাণ করছে বাংলাদেশের মানুষের রিসিলিয়্যান্সের (প্রাণোচ্ছ্বলতা/ অনমনীয়তা) ক্ষমতা; দেখিয়ে দিচ্ছে তারুণ্যের শক্তি। সকলের সমান অংশগ্রহণের ব্যবস্থা থাকলে, প্রতিযোগিতায় সমতা থাকলে অনেক বাধাই বাংলাদেশের মানুষ পার হতে পারে। সেই পার হওয়া তার একার জন্যে নয়, দেশের জন্যে।
তারুণ্যের, নাগরিকদের সামনে যে বাধা আছে তাকে সরিয়ে দিন, খেলাধুলা-অর্থনীতি-রাজনীতি-প্রযুক্তি সর্বত্র সকলের অংশগ্রহণের দরজা উন্মুক্ত করে দিন। সব জায়গায় সাফল্য অর্জন করে সবাই বলবেন—এই দেশের মানুষের জন্যে তা উৎসর্গ করলাম।
অভিনন্দন বাংলাদেশ দল। আপনাদের বিজয় আমাদের অনেক কিছুই শিখিয়ে দিচ্ছে। আমরা শিখতে পারবো কিনা সেটাই প্রশ্ন।