কয়েকদিন আগে মিশরের মঞ্চে একটি নাম ঘোষণা করা হয়। বলা হয়, ‘অ্যান্ড দ্য নেক্সট গোল্ড মেডেল ইজ গোয়িং টু দেবজ্যোতি ফ্রম বাংলাদেশ!’ ঘোষণাটি ছিল বাংলাদেশ থেকে প্রায় ছয় হাজার কিলোমিটার দূরে। তবে সেই ঘোষণার মাধ্যমেই বাংলাদেশের জন্য তৈরি হয় নতুন এক ইতিহাস। যা বাংলাদেশের জন্য নিয়ে আসে নতুন এক সম্মান।
আর যার হাত ধরে ইন্টারন্যাশনাল অলিম্পিয়াড ইন ইনফরম্যাট্রিক্সে (আইওআই) প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের ঝুলিতে ওঠে স্বর্ণপদক, তিনি দেবজ্যোতি। পুরো নাম দেবজ্যোতি দাশ সৌম্য। সিলেটে জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের দ্বাদশ শ্রেণি ছাত্র।
প্রোগ্রামিং অলিম্পিয়াডে এর আগে বাংলাদেশ বহুবার ব্রোঞ্জ ও রূপা জিতলেও এতদিন সোনা অধরাই ছিল। এবার সেটি ধরা দিল দেবজ্যোতির হাত ধরে। ঘাম ছুটিয়ে ৩৬তম আন্তর্জাতিক ইনফরমেশন অলিম্পিয়াডে লড়ে সোনা নিয়ে এলেন এই বাংলাদেশি।
গত ১ থেকে ৮ সেপ্টেম্বর মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় আন্তর্জাতিক ইনফরমেশন অলিম্পিয়াড প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের জগতে অনূর্ধ্ব ২০-এর জন্য বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক এই প্রতিযোগিতাটি মূলত প্রাক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয়। অর্থাৎ সর্বোচ্চ কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নিতে পারেন।
আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান অলিম্পিয়াডের মধ্যে অন্যতম এ প্রতিযোগিতায় কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং সমস্যা সমাধানের জন্য প্রোগ্রাম লিখতে হয় অংশগ্রহণকারীদের। অ্যালগরিদমিক প্রকৃতির বিভিন্ন সমস্যা বিশ্লেষণ ও সমাধান করে জয়ী হতে হয় এখানে।
ইউনেস্কো প্রস্তাবিত এই প্রতিযোগিতা ১৯৮৯ সালে বুলগেরিয়াতে প্রথম শুরু হয়। চলতি বছরে মিশরের আলেকজান্দ্রিয়ায় অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, কানাডা, জাপানসহ বিশ্বের ৯০টিরও বেশি দেশ থেকে মোট ৩৬৪ জন প্রতিযোগী এতে অংশ নেন।
প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিলেন চারজন। তাদের মধ্যে দেবজ্যোতি স্বর্ণপদক এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের সাবেক ছাত্র জারিফ রহমান ও এবং আকিব আজমেইন তুর্য ব্রোঞ্জ পদক জয় করেন।
বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক ইনফরমেশন অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ এবারই প্রথম নয়। ২০০৫ সাল থেকে বাংলাদেশ এ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আসছে। ২০০৯, ২০১৮ ও ২০২৩ সালে বাংলাদেশ একটি করে ও ২০২১ ও ২০২২ সালে দুটি রৌপ্য পদক অর্জন করে। অন্যান্য বছরগুলোতে ব্রোঞ্জ পদকও বাংলাদেশের ঝুলিতে উঠেছে।
তবে এবারই প্রথম স্বর্ণপদক জিতিয়ে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে গৌরবের আসনে তুলে ধরলেন মেধাবী শিক্ষার্থী দেবজ্যোতি। প্রোগামিংয়ের প্রতি যার আগ্রহ জন্মায় সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকে। প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনার পাশাপাশি প্রোগ্রামিং ও ‘প্রবলেম সলভিং’ এর খুঁটিনাটি নিয়েও চালিয়ে যেতেন অনুশীলন।