• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারের তথ্য কি ফাঁস হয়


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জুলাই ২৭, ২০২৪, ১১:৫৪ এএম
হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জারের তথ্য কি ফাঁস হয়
ছবি : সংগৃহীত

হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার বা ভাইবারের মতো ইন্টারনেটে যোগাযোগের অ্যাপগুলোর মাধ্যমে পাঠানো বার্তা বা ফোন কলের গোপনীয়তা কতটুকু রক্ষা হয়, সে বিষয়টি নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে প্রশ্ন ছিল সব সময়ই।
ইসরায়েলে তৈরি একটি সফটওয়্যার দিয়ে ভারতের বেশ কয়েকজন সামাজিক কর্মকর্তা, মানবাধিকারকর্মী ও সাংবাদিকের হোয়াটসঅ্যাপে নজরদারি চালানোর বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষ স্বীকার করার পর এ নিয়ে আবারও আলোচনা তৈরি হয়েছে।
হোয়াটসঅ্যাপের যেকোনো মেসেজে ‘এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন’ থাকার কথা, যার অর্থ যিনি মেসেজ পাঠাচ্ছেন আর যাকে পাঠানো হচ্ছে, শুধু তারাই এটি পূর্ণরূপে দেখতে পারেন।
কিন্তু ইসরায়েলে তৈরি সফটওয়্যারটি যার নাম ‘পেগাসাস’, সেটি ভারতের কিছু হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের অনুমতি না নিয়েই ফোনে ইনস্টল করা হয়েছিল এবং ওই সফটওয়্যারের মাধ্যমেই ব্যবহারকারীদের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ ফাঁস হয়।
এ ঘটনার পর খুব স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, ইন্টারনেটের এই যোগাযোগের অ্যাপ বা সফটওয়্যারগুলো আসলে বার্তার গোপনীয়তা ও ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত করতে পারে?
অনেকে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য সাধারণত হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জার ব্যবহার করে থাকেন। এ ছাড়া বিদেশে থাকা পরিবারের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মাঝেমধ্যে ভাইবার ব্যবহার করেন।
কিন্তু এই অ্যাপগুলোর মাধ্যমে পাঠানো বার্তার গোপনীয়তা লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, তা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন তিনি।
‘বন্ধুদের বা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যেসব বিষয়ে আলোচনা হয় তার প্রায় পুরোটাই ব্যক্তিগত। আমার মনে হয় না সেসব তথ্য পাওয়ার জন্য কষ্ট করে কেউ আমার বা আমার বন্ধুদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করবে বা ডিভাইসে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করাবে’, বললেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যবহারকারী।
তাই অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিজের ব্যবহৃত ডিভাইসে আলাদা কোনো সফটওয়্যার বা অ্যাপ ইনস্টল করেননি তিনি।
তবে আন্তর্জাতিক সংস্থায় কাজ করা নুসরাত ইমাম বলেন অফিসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে দেশে-বিদেশের অনেকের সাথে যোগাযোগ করতে হয় বলে তার ডিভাইস দিয়ে পাঠানো বার্তার গোপনীয়তার বিষয়ে সচেতন থাকতে হয় তাকে।
"হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার ছাড়াও অফিসের কাজে প্রায়ই স্কাইপ ব্যবহার করতে হয়। অফিসে মাঝেমধ্যে সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে কর্মশালা, প্রশিক্ষণ হয়ে থাকে। সেসব অনুষ্ঠানে ডিভাইসের নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা সংক্রান্ত সাম্প্রতিক বিষয়গুলো সম্পর্কে জানানো হয়।"
কিন্তু অফিসের প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় শেখানো পদ্ধতির বাইরে গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে অন্য কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন না তিনি।

‘শতভাগ গোপনীয়তার নিশ্চয়তা প্রায় অসম্ভব’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য ও প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের শিক্ষক বি. এম. মইনুল হোসেনের মতে, ইন্টারনেটে যোগাযোগের সফটওয়্যার বা অ্যাপের মাধ্যমে পাঠানো বার্তাগুলো শতভাগ গোপনীয় বা এসব বার্তা তৃতীয় কোনো ব্যক্তি উদ্ধার করতে পারবে না, এমন দাবি অযৌক্তিক।
‘হোয়াটসঅ্যাপ বা ভাইবার যৌক্তিকভাবেই দাবি করে তাদের মাধ্যমে করা ফোনকল বা পাঠানো মেসেজের ক্ষেত্রে ‍‍`এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন‍‍` পদ্ধতি ব্যবহার করে। অর্থাৎ বার্তা প্রেরক ও প্রাপক বাদে অ্যাপ কর্তৃপক্ষও ঐ বার্তার অর্থ উদ্ধার করতে পারবে না। কিন্তু আসল ঝুঁকিটা বার্তা পাঠানোর ক্ষেত্রে নয়।’
অ্যাপের মাধ্যমে একটি মেসেজ পাঠানোর আগে যখন প্রেরকের মোবাইল ফোনে লেখা হয় তখন সেই ডিভাইসে কোনো ম্যালওয়্যার থাকলে এনক্রিপ্ট করার আগেই সেটি রেকর্ড হয়ে থাকতে পারে। তেমনি মেসেজটি পাঠানোর পর প্রাপকের ডিভাইসে যখন সেটি দেখা যায়, সে সময় একইভাবে প্রাপকের ডিভাইসেও রেকর্ড হয়ে থাকতে পারে মেসেজটি।
আর ব্যবহারকারীদের অজান্তে তাদের পাঠানো গোপনীয় ফোনকল, মেসেজ বা ছবি চুরি করতে প্রতিনিয়তই সাইবার অপরাধী, হ্যাকাররা নতুন নতুন পদ্ধতি আবিস্কার করছেন বলে মন্তব্য করেন অধ্যাপক মইনুল হোসেন।
‘এটিকে অ্যাপ তৈরিকারী প্রতিষ্ঠান ও হ্যাকার, এই দুই পক্ষের বুদ্ধির খেলা বলতে পারেন। ইন্টারনেটভিত্তিক সব প্রতিষ্ঠানই প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যায় যেন তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হালনাগাদ থাকে, তেমনি হ্যাকার ও সাইবার অপরাধীরাও প্রতিনিয়ত চেষ্টা করতে থাকে যেন নতুন কৌশল প্রয়োগ করে তাদের নিরাপত্তা বলয় ভাঙতে পারে।’
মইনুল হোসেনের মতে, ‘অ্যাপগুলো তাদের দাবি অনুযায়ী গোপনীয়তা নিশ্চিত করে ঠিকই, কিন্তু ব্যবহারকারীর ডিভাইসের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করে কোনো বার্তা আসলে কতটা গোপনীয় থাকবে।’
তবে যত সচেতনতাই অবলম্বন করুক, মেসেজিং অ্যাপের কোনো ব্যবহারকারীর পক্ষেই মেসেজ, অডিও কল বা ভিডিও কলের গোপনীয়তা শতভাগ নিশ্চিত করা সম্ভব নয় বলে মনে করেন অধ্যাপক মইনুল।
একজন সাধারণ অ্যাপ ব্যবহারকারী যেন না বুঝতে পারেন যে তার ডিভাইসের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে, তা নিশ্চিত করতে প্রতিনিয়তই নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করার চেষ্টা করেন হ্যাকাররা।
‘সাইবার অপরাধী বা হ্যাকারদের বিশ্বজুড়ে সংঘবদ্ধ চক্র রয়েছে। নতুন নতুন পদ্ধতি তৈরি করে গোপন তথ্য চুরি করার এই ব্যবসাটা শত কোটি ডলারের। প্রযুক্তিগত দক্ষতায় তারা সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক এগিয়ে, তাই তাদের হাত থেকে পুরোপুরি সুরক্ষিত থাকাটা অনেকটা অসম্ভব", বলেন মইনুল হোসেন।
অনেক সময় সরকারি বা বেসরকারি সংস্থা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে গোপন তথ্য জানতে বিপুল অঙ্কের অর্থ খরচ করে থাকে। তখন তারা সাধারণত হ্যাকারদের সাহায্য নেয়।
এ রকম ক্ষেত্রে অধিকাংশ সময়ই মেসেজিং অ্যাপ কর্তৃপক্ষের - যাদের মাধ্যমে পাঠানো মেসেজ বা ফোনকল ফাঁস হয় - খুব বেশি কিছু করার থাকে না বলে মনে করেন অধ্যাপক মইনুল।
কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ভাইবারের মতো বিশ্বব্যাপী খ্যাতিসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানগুলো কেন শতভাগ ক্ষেত্রে তাদের ব্যবহারকারীদের গোপনীয়তা রক্ষার নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম হয় না?

Link copied!