তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির জগতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট ‘চ্যাটজিপিটির’ জয়জয়কার চলছে। ২০২২ সালের নভেম্বরে অ্যাপটি চালু হওয়ার পর থেকে কয়েক লাখ মানুষ এটি ব্যবহার করছে। গান, কবিতা, ডিজিটাল মার্কেটিং কপি, কম্পিউটার কোড তৈরি করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এটি। নতুন এই প্রযুক্তিকে যারা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করতে পেরেছেন, তারা এর কার্যক্ষমতা দেখে অভিভূত।
তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন এই অ্যাপকে ঘিরে একদিকে যেমন সৃষ্টি হয়েছে বিস্ময়ের ঘোর, ঠিক তেমনিভাবে অ্যাপটিকে ঘিরে তৈরি হয়েছে নতুন শঙ্কা। কেননা এই অ্যাপটি অদূর ভবিষ্যতে হয়তো মানুষের সব কাজ একাই করে ফেলবে। আর এ কারণে কর্মহীন হয়ে পরতে পারে অসংখ্য মানুষ।
সম্প্রতি চ্যাটজিপিটিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, নতুন এ প্রযুক্তির ফলে মানুষ কোন কোন ক্ষেত্র থেকে কাজ হারাতে পারে। সঙ্গে সঙ্গে কৃত্রিম এই বুদ্ধিমত্তা জানিয়ে দেয় এমন ১৮টি ক্ষেত্রের নাম।
ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম আনন্দবাজার এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, আমেরিকার বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান তাদের কাজের সুবিধার্থে ইতোমধ্যে চ্যাটজিপিটির ব্যবহার শুরু করেছেন।
সাম্প্রতিক সমীক্ষা বলছে, ওই প্রতিষ্ঠানগুলোতে চ্যাটজিপিটি আসার পর অনেক কর্মীকে ছাটাই করা হয়েছে। শুধু আমেরিকাতেই নয়, সারা বিশ্বে বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্মীরা কাজ হারানোর আশঙ্কায় দিন গুনছেন।
কৃত্রিম এই বুদ্ধিমত্তাকে আরও উন্নত করতে সম্প্রতি চ্যাটজিপিটির নতুন একটি ‘ভার্সন’ তৈরি করা হয়েছে। যদিও বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়েছে যে এ প্রযুক্তি কখনই মানুষের বিকল্প হতে পারবে না।
আনন্দবাজার বলছে, সম্প্রতি ভারতের প্রশান্ত রাঙ্গাস্বামী নামে এক ব্যক্তি কৌতূহলবশত চ্যাটজিপিটির কাছে জানতে চান, এই প্রযুক্তির জন্য মানুষ এমন কোন কোন ক্ষেত্র থেকে কাজ হারাতে পারে। চ্যাটজিপিটি জানিয়ে দেয় এমন ১৮টি ক্ষেত্র রয়েছে।
ক্ষেত্রগুলো হলো: ডাটা এন্ট্রি অপারেটর, ক্রেতা পরিষেবা প্রতিনিধি, প্রুফরিডার, প্যারালিগাল, বুককিপার, অনুবাদক, কপিরাইটার, মার্কেট রিসার্চ অ্যানালিস্ট, সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার, অ্যাপয়েন্টমেন্ট স্কেডিউলার, ট্রান্সস্ক্রিপশানিস্ট, নিউজ রিপোর্টার, ট্রাভেল এজেন্ট, গৃহশিক্ষক, টেকনিক্যাল সার্পোট অ্যানালিস্ট, ইমেইল মার্কেটার, কনটেন্ট মডারেটর, রিক্রুটার।
চ্যাটজিটিপির মূল আকর্ষণ হলো মানুষের মতো যেকোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারা। আরও দ্রুত এবং নির্ভুল ভাবে কাজ করার জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাদৃত হচ্ছে এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাটবট। গাণিতিক সমাধান, সাহিত্য জ্ঞান কিংবা ভাষার দক্ষতা।
শুধু সাধারণ মানুষই নয়, চ্যাটজিপিটি নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন টুইটার-এর সিইও ইলন মাস্ক। তিনি বলেন, “মানুষের করার মতো কাজ কিছু পড়ে থাকবে কি?”
প্রসঙ্গত, ওপেনএআই তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন চ্যাটবট চ্যাটজিপিটির সর্বশেষ সংস্করণ জিপিটি-৪ প্রকাশ করবে আগামী সপ্তাহে। নতুন এই সংস্করণটি বর্তমান চ্যাটজিপিটি-৩.৫ এর থেকেও ৫০০ গুণ বেশি শক্তিশালী জিপিট-৪।
টেক বিজনেস নিউজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে। এতে বলা হয়, নতুন মডেলটি যেকোনো ছবি থেকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দিতে পারবে। যেমন যেকোনো খাবারের ছবি থেকে এর রেসিপি বলে দিতে পারবে। এছাড়াও যেকোনো ছবি দেখে ক্যাপশন ও বিবরণ লিখতে পারবে। বর্তমান চ্যাটজিপিটি-৩.৫ থেকেও ৫০০ গুণ শক্তিশালী জিপিটি-৪।
যেখানে চ্যাটজিপিটি-৩.৫ এ ব্যবহৃত হয়েছে ১৭৫ বিলিয়ন মেশিন লার্নিং প্যারামিটার। সেখানে জিপিটি-৪ ভার্সনে ১০০ ট্রিলিয়ন প্যারামিটার। যেখানে চ্যাটজিপিটি-৩.৫ কেবল চ্যাট করতে সক্ষম সেখানে জিপিটি-৪ ভিডিও, ছবি, সাউন্ডের মতো ডেটাও প্রসেস করতে পারবে।