তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির সহজলভ্যতায় সব কিছুই এখন চলে এসেছে মানুষের হাতের মুঠোয়। আর স্মার্টফোনের উন্নতির ফলে বর্তমানে অনেক কাজ সম্ভব হচ্ছে ঘরে বসেই। স্মার্টফোনের মাধ্যমে হয়না, এমন কাজ খুব কমই আছে। পড়াশোনা, বিনোদন, কেনাকাটা এমনকি স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকার ক্ষেত্রে এই ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে হেলথ অ্যাক্টিভিটি ট্র্যাক করতে সাধারণত ফিটনেস ব্যান্ড বা স্মার্টওয়াচের সাথে স্মার্টফোনকে কানেক্ট করতে হয়।
কিন্তু ধরুন যদি আপনার হঠাৎ করে জ্বর হয় এবং স্মার্টফোন দিয়েই আপনি নিজের জ্বরের তাপমাত্রা মাপতে পারেন, তাহলে কেমন হবে? অবাক হবেননা, প্রযুক্তির নির্ভর এই পরিবর্তনশীল বিশ্বে এমনটাও সম্ভব। এখন জ্বর হলে হাতের কাছে থার্মোমিটার না থাকলেও কোনো চিন্তা নেই। স্মার্টফোন দিয়েই জ্বর মাপতে পারবেন সহজেই। শুধুমাত্র ডাউনলোড করতে হবে ‘ফিভারফোন’ নামে একটি অ্যাপ। অর্থাৎ হাতে স্মার্টফোন থাকলে কয়েক ক্লিকে শরীরের তাপমাত্রা মাপা সম্ভব হবে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম নিউজ১৮ এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানিয়েছে।
ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা অ্যাপটি বানিয়েছেন। যদিও অ্যাপল ওয়াচে অনেকদিন আগে থেকেই এই ফিচার রয়েছে। যা সবার হাতের নাগালে নেই। তবে এই নতুন অ্যাপটির ক্ষেত্রে এমন অসুবিধার মুখে পড়তে হয় না। হাতে শুধু একটি স্মার্টফোন থাকলেই হলো। ফোনে অ্যাপটি ডাউনলোড করলেই এই বিশেষ ফিচার ব্যবহার করা সম্ভব।
গবেষকরা জানিয়েছেন, আসলে স্মার্টফোনে এমন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, যার মাধ্যমে সহজেই থার্মোমিটারের ফিচার আনলক করা সম্ভব। ফোনের টাচস্ক্রিন এবং ব্যাটারি টেম্পারেচার সেন্সর ব্যবহার করে মেশিন লার্নিং এর মাধ্যমে মানব শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করবে। কোনো অতিরিক্ত হার্ডওয়্যারের প্রয়োজন ছাড়াই। ইতোমধ্যে নাকি ৩৭ জন রোগীর উপর এই অ্যাপ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছে। আর তার থেকে মিলেছে ইতিবাচক ফলাফল। তাই আগামীদিনে হাতে স্মার্টফোন থাকলে থার্মোমিটারের দরকার হবে না, এমনটা বলা যেতেই পারে।
ফিভারফোন অ্যাপটি একটি বিশেষ সেন্সর দ্বারা নির্মিত, যা ফোনের ব্যাটারির তাপমাত্রা নির্ধারণ করে এবং কত সময় ধরে ফোন গরম থাকে তা পরিমাপ করে তারপর মানবদেহের তাপমাত্রা অনুমান করার চেষ্টা করে। এর সুবিধা পেতে আগ্রহী ইউজারদের ফোনের পেছনে কোনো স্পর্শ না করে পয়েন্ট-এন্ড-শুট ক্যামেরার মতো সেটি ধরে রাখতে হবে। তারপর কপালে প্রায় ৯০ সেকেন্ডের জন্য টাচ স্ক্রিন ধরে রাখলেই কাজ হয়ে যাবে!
বর্তমানে অ্যাপটি নিয়ে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। তাই গবেষকরা এমন কিছু জিনিস চিহ্নিত করেছেন যা এর সীমাবদ্ধতা বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। এটি শরীরের তাপমাত্রা নির্ণয়ের ক্ষেত্রে বেশি মানের রিডিং (১০১ দশমিক ৫ ফারেনহাইট) বাদ দিয়েছে, অন্যদিকে অ্যাপটি ঘামে ভেজা ত্বকের ক্ষেত্রে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করে। এছাড়াও শুধুমাত্র তিনটি ফোন মডেলেই আপাতত ফিভারফোন ব্যবহার করা হয়েছে। তাই সব স্মার্টফোনে এটি ব্যবহার করা যাবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে। এখন শুধু বিভিন্ন স্বাস্থ্যসংস্থার থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে অ্যাপটি।