১৯৫৭ সালের ৪ অক্টোবর। পৃথিবীর কক্ষপথে প্রথম বারের মতো উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) স্পুটনিক-১ পাঠায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। সেই অবিস্মরণীয় ঘটনার পর কেটে গেছে ৬৭ বছর। এতদিনে মহাকাশ বিজ্ঞানে পৃথিবী বহুদূর এগিয়েছে। তবে একটি রহস্যের এখনও কোনো কিনারা করতে পারছেন না বিজ্ঞানীরা। মহাকাশের ‘ব্ল্যাক নাইট উপগ্রহের’ রহস্য আজও রহস্যই থেকে গেছে।
অনেকেই দাবি করেন, স্পুটনিক-১ মহাকাশের বুকে পাঠানো প্রথম উপগ্রহ নয়। বরং প্রায় ১৩ হাজার বছর আগে থেকেই পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি রহস্যময় ‘উপগ্রহ’। যা বহু ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকছে। যার নাম ‘ব্ল্যাক নাইট’।
মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ১৯৯৮ সালে প্রথম ‘ব্ল্যাক নাইট’-এর ছবি প্রকাশ্যে আনে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে একটি মহাকাশ অভিযানের সময় পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করা ‘রহস্যময় কালো বস্তুর’ ছবি তুলেছিল নাসা।
বিজ্ঞানীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথের প্রায় ১৯৩০ কিলোমিটার দূরে সেই ‘রহস্যময় বস্তুটি’ পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল। নাসার পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ সেই কালো বস্তুর নাম দেওয়া হয় এসটিএস০০৮-৭২৪-৬৬। তখন সেটিকে মহাকাশে থাকা ধ্বংসাবশেষ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্রে সে সময় অভিযানে থাকা মহাকাশচারী জেরি রস দাবি করেছিলেন, ‘রহস্যময় কালো বস্তুটি’ আসলে তাদের মহাকাশযানের একটি টুকরো। মহাকাশ কেন্দ্রে সংযুক্ত হওয়ার সময় মহাকাশযান থেকে যেটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
তবে মহাকাশ নিয়ে যারা গবেষণা করেন, তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন তারা বলছেন, ‘রহস্যময় সেই কালো ভ্রাম্যমাণ বস্তুটি’ আসলে কৃত্রিমভাবে তৈরি একটি উপগ্রহ। যা প্রায় ১৩ হাজার বছর ধরে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরপাক খাচ্ছে।
প্রায় সাত দশক পর নতুন করে প্রশ্ন উঠছে, আধুনিক বিজ্ঞানচর্চার শত শত বছর আগে, এমনকি উপগ্রহ আবিষ্কারের হাজার হাজার বছর আগে কোথা থেকে কীভাবে এলো সেই ‘রহস্যময় উপগ্রহ’? তা-ও আবার পৃথিবীর এতো কাছাকাছি?
অনেকে মতামত দিয়ে বলছেন, ‘ব্ল্যাক নাইট’ ভিনগ্রহীদের তৈরি উপগ্রহ। এই উপগ্রহের মাধ্যমে নাকি এক সময় পৃথিবীর সব তথ্য পৌঁছে যেত তাদের কাছে। যদিও ‘ব্ল্যাক নাইট’ দেখতে আদতে উপগ্রহের মতোও নয়।
মূলত, ‘ব্ল্যাক নাইট’ আবিষ্কারের পর থেকেই এটা নিয়ে অনেক রকম গুজব ঘুরে বেড়াচ্ছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানমহলে। তার মধ্যেই অন্যতম বিজ্ঞানী নিকোলা টেসলা দাবি করেছেন, ১৮৯৯ সালে কলোরাডো স্প্রিংসে রেডিও পরীক্ষার সময় তিনি মহাকাশ থেকে অদ্ভুত এক ‘সঙ্কেত’ পেয়েছিলেন।
টেসলার বিশ্বাস ছিল, সেই সংকেত পাঠিয়েছে মঙ্গলগ্রহের বাসিন্দারা। সংখ্যার মাধ্যমে মঙ্গলগ্রহবাসীরা মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিল বলেও তিনি দাবি করেন।
১৯০১ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি প্রতিবেদন টেসলা তার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে লেখেন, “আমার কাছে সংখ্যার মাধ্যমে যে সঙ্কেত পাঠানো হয়েছিল, তাতে আমি অনেক পরিবর্তন লক্ষ্য করেছি। আমার বিশ্বাস, আমিই প্রথম এক গ্রহ থেকে অন্য গ্রহে পাঠানো সঙ্কেত লক্ষ্য করেছিলাম।”
‘ব্ল্যাক নাইট’ যে ভিনগ্রহীদের উপগ্রহ, সেই তত্ত্বে বিশ্বাসীরা দাবি করেছেন, টেসলাকে সেই সঙ্কেত পাঠানো হয়েছিল ‘ব্ল্যাক নাইট’ থেকে। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন, মহাকাশে থাকা সমস্ত জিনিসেরই নিজস্ব ‘তরঙ্গ’ রয়েছে। তাই কোনো মহাজাগতিক বস্তু থেকে সঙ্কেত পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে সেই সঙ্কেত যে ভিনগ্রহীদের পাঠানো, তা মানতে রাজি নন বেশির ভাগ বিজ্ঞানীই।
এদিকে, বছরের পর বছর ধরে ‘ব্ল্যাক নাইট’ তত্ত্বের জনপ্রিয়তা কখনও বেড়েছে, কখনও আবার কমেছে। তবে একেবারে হারিয়ে যায়নি। ১৯৬৩ সালে মহাকাশ অভিযানের সময় মহাকাশচারী গর্ডন কুপার দাবি করেছিলেন, তিনি মহাকাশে ‘রহস্যময় কালো বস্তু’ দেখেছেন।
এ ছাড়াও মহাকাশচারীরা একাধিক বার মহাকাশে পৃথিবীর চারপাশে এক রহস্যময় কালো বস্তুকে ঘুরপাক খেতে দেখেছেন। মহাকাশচারীদের সেই দাবি ইন্ধন জুগিয়েছে ‘ব্ল্যাক নাইট’ তত্ত্বে।
তবে ২০১৭ সালে এমন দাবিও করা হয় যে, ‘ব্ল্যাক নাইট’ উপগ্রহটিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। পৃথিবীর বুকে থাকা গোপন সংস্থা ‘ইলুমিনাটি’ এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। যদিও এই সব দাবি সত্য বলে প্রমাণিত হয়নি। সূত্র: আনন্দবাজার