সারা দিনে কাজ, ব্যবসা-সম্পর্কিত কিংবা ব্যক্তিগত নানা কারণে আমরা ফোনের ব্যবহার করে থাকি। তবে ফোনে আমাদের সারা দিনের কর্মকাণ্ড যে সব সময় ব্যক্তিগত থাকে না, সেটা সব সময় বোঝাও যায় না।
কারও ফোন যেভাবে ট্র্যাক করা হতে পারে, এমন ৩টি ভিন্ন উপায় সম্পর্কে আজকে আলোচনা করা হবে। কিন্তু তার আগে আসুন দেখে নেওয়া যাক কারা, কীভাবে আপনার ফোন ট্র্যাক করতে পারে।
স্মার্টফোন মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করে দিয়েছে ঠিকই তবে এর অপব্যবহারে ভোগান্তিতেও পড়তে হয় অনেককে। এমন একটি ভোগান্তি হলো ট্র্যাকিং। কেউ আপনার মোবাইল ফোন ট্র্যাক করলে নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। তবে কিছু বিষয় লক্ষ রাখলে বুঝতে পারা যায় আপনার ফোন ট্র্যাক করা হয়েছে কি না। শুরুতেই ট্যাকিংয়ের বিষয়টি বুঝতে পারলে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়।
অপরিচিত অ্যাপ
আপনার ফোনে ইনস্টল করা হয়নি এমন অ্যাপ আছে কি না, তা দেখতে হবে। অপরিচিত অ্যাপ থাকা ট্যাকিংয়ের লক্ষণ। এমন কোনো অ্যাপ দেখলে সেটি অ্যান্টিভাইরাস দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে। যদি অ্যাপটি ক্ষতিকর হয় তাহলে ডিলিট করতে হবে।
ব্রাউজারে অপরিচিত হিস্ট্রি
ওয়েব ব্রাউজারে সব সার্চ হিস্ট্রি থাকে। নিজের সার্চের বাইরে অন্য কোনো সাইটের রেকর্ড দেখতে পেলে বুঝতে হবে ডিভাইসে স্পাইওয়্যার রয়েছে। কিছু ট্র্যাকার ঝুঁকিপূর্ণ ওয়েবসাইট থেকে ক্ষতিকারক টুল ও স্পাইওয়্যার ইনস্টল করার পাশাপাশি তথ্য বেহাত করে থাকা।
চার্জ দ্রুত শেষ হওয়া
স্মার্টফোনের ব্যাটারির চার্জ যদি দ্রুত শেষ হতে থাকে সেক্ষেত্রে ট্র্যাকিং হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে ফোনের ব্যাকগ্রাউন্ড অ্যাপগুলো ও ডাউনলোড অপশন চেক করতে হবে। কারণ সাধারণত স্পাইওয়্যার প্রচুর পরিমাণে ডেটা আদান-প্রদান করে এবং এ কারণে চার্জ দ্রুত শেষ হয়ে যায়।
ফোন রিস্টার্টে ধীরগতি
ফোন বন্ধ হওয়া বা রিস্টার্ট নিতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগা ট্র্যাকিংয়ের লক্ষণ। এমন হলে স্পাইওয়্যার বা নজরদারি সফটওয়্যার ব্যাকগ্রাউন্ডে চালু থাকতে পারে। স্পাইওয়্যার স্বাভাবিক ক্রিয়াকলাপকে বাধা দেয়।
অচেনা ডিভাইসের কানেকশন
ফোনের ব্লুটুথ, ওয়াই-ফাই বা হটস্পটে অচেনা ডিভাইসের কানেকশন দেখা দিতে পারে। ফোনের এমন সন্দেহজনক সংযোগ বা অননুমোদিত ডেটা ট্রান্সফার শনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে।
ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা ব্যবহার বৃদ্ধি
স্মার্টফোনে ব্যাকগ্রাউন্ড ডেটা ব্যবহার অস্বাভাবিক মাত্রায় বেড়ে যাওয়া ট্র্যাকিংয়ের লক্ষণ। এক্ষেত্রে ফোনে থাকা কোনো অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডের ডেটা ব্যবহার করছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে। প্রয়োজনে অ্যাপটি ব্লক বা ডিলিট করে দিন।
কথা বলার সময় অদ্ভুত শব্দ
ভয়েস কলে কথা বলার সময় ফোন অস্বাভাবিক আচরণ করা ট্র্যাকিংয়ের লক্ষণ। যেমন ড্রপিং, অপ্রত্যাশিত কল, কল চলাকালে অদ্ভুত শব্দ বা ইকো হতে পারে। এমন হলে হতে পারে কেউ আপনার ফোনে নজর রাখছে।
ডিভাইস অতিরিক্ত গরম হওয়া
বিভিন্ন কারণে স্মার্টফোন অতিরিক্ত গরম হতে পারে। অনেক সময় ট্র্যাকিং অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে চলার কারণে ডিভাইস অতিরিক্ত গরম হয়ে থাকে। এজন্য ফোনের সেটিং অপশন থেকে কোন অ্যাপ ব্যাকগ্রাউন্ডে বেশি কাজ করেছে তা খুঁজে বের করতে হবে।
অপ্রয়োজনীয় পারমিশন রিকোয়েস্ট
স্মার্টফোনে কোনো অ্যাপ অপ্রয়োজনীয় কোনো পারমিশন চাইছে বা নিয়েছে কি না, সেটি যাচাই করতে হবে। বিশ্বস্ত অ্যাপ ছাড়া যেকোনো অ্যাপের সব পারমিশন দেওয়া উচিত নয়। কারণ পারমিশনের মাধ্যমেই যেকোনো অ্যাপ ডিভাইসের বিভিন্ন তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে।
ট্র্যাকিং থেকে বাঁচতে প্রথমে ওপরের ৩টি পরামর্শের দিকে নজর দিতে পারেন। তবে এগুলোর পাশাপাশি কীভাবে এবং কখন ট্র্যাক করা হয় সে সম্পর্কে আরও সচেতনতা বৃদ্ধির চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ, কর্মস্থল থেকে কোনো ডিভাইস প্রদানের আগে চুক্তিপত্র বা অনুরূপ নথিগুলো ভালো করে লক্ষ করুন। সেখানে আপনার বস আপনার ফোনের কার্যকলাপ ট্র্যাক করতে পারবেন কি না, তা উল্লেখ থাকতে পারে।
এ ছাড়া যেসব অ্যাপ আপনি ব্যবহার করেন সেগুলো ডাউনলোডের আগে তাদের পরিষেবার শর্তাবলির দিকে মনোযোগ দিন। অ্যাপ আপনার থেকে কোন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করবে এবং কেন সংগ্রহ করবে তা ভালোমতো দেখে নিন। সেখানে উল্লেখ থাকতে পারে সেটি আপনাকে ট্র্যাক করবে কি না। তাই কোনো অ্যাপ ইনস্টলের আগে এ সম্পর্কে ভালো করে যাচাই করে নেওয়া উত্তম।
তথ্যসূত্র: মেক ইউজ অব, পিসি ম্যাগ