স্থায়ী আবাস উত্তরের বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপ এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে পদ্মা নদীর তীরবর্তী জেলাগুলোতে বেশি আতঙ্ক হয়ে দেখা দিয়েছে। কামড়ের আতঙ্ক থেকে শুধু রাসেলস ভাইপারই নয়, সব ধরনের সাপ নির্বিচার নিধন করা হচ্ছে। যা পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে।
এমন পরিস্থিতিতে রাসেলস ভাইপারের প্রাণঘাতী বিষের প্রতিষেধক বা অ্যান্টিভেনম তৈরি জরুরি হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দেশীয় ব্যবস্থাপনায় তৈরি করতে পারলে আতঙ্ক দূর হবে। নির্বিচার সাপ নিধনও বন্ধ হবে। ঠিক এমন মুহূর্তে সুখবর দিলেন বিশেষজ্ঞরা।
সম্পূর্ণ দেশীয় ব্যবস্থাপনায় তৈরি হচ্ছে রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়া সাপের প্রাণঘাতী বিষের প্রতিষেধক। যা চলতি বছরেই পাওয়া যাবে। এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থাপিত ভেনম রিসার্চ সেন্টারে গবেষণার ৬০ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে।
গবেষকরা আশা করছেন, রাসেলস ভাইপারের দেশীয় অ্যান্টিভেনম তৈরি হলে পরের ধাপে হবে সব প্রজাতির বিষধর সাপের আলাদা আলাদা প্রতিষেধক তৈরির কাজ শুরু হবে। এতে সাপে কাটা নিয়ে জনমনে যে অসচেতনতা বা কুসংস্কার তা দূর হবে। সাপে কাটা রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে প্রতিষেধক দিলেই সুস্থ হয়ে যাবেন।
মূলত, সম্পূর্ণভাবে দেশীয় ব্যবস্থাপনায় তৈরি হয় এমন অ্যান্টিভেনম এখনও বাংলাদেশে নেই। তাই সাপে কাটা রোগীদের জন্য যে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা হয়, তা ভারত থেকে আমদানি করা। তবে এটি বিভিন্ন প্রজাতির সাপে কাটার চিকিৎসায় বেশ কার্যকর হলেও ব্যতিক্রম বিশেষ করে সাম্প্রতিক আলোচিত রাসেলস ভাইপারের ক্ষেত্রে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবেশী দুই দেশের রাসেলস ভাইপার বা চন্দ্রবোড়ার বিষের মধ্যে অনেকটা পার্থক্য রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের তুলনামূলক কম কার্যকরী ভারতের প্রতিষেধক। যে কারণে পরিপূর্ণ সুফল পেতে দেশীয় রাসেলস ভাইপারের বিষ থেকেই সুনির্দিষ্ট প্রতিষেধক তৈরি করতে হবে।
সেই লক্ষ্য সামনে রেখেই চট্টগ্রাম মেডিক্যালে স্থাপিত ভেনম রিসার্চ সেন্টারের গবেষকরা নিরন্তন কাজ করে চলেছেন। শেষ অবধি তারা সফলও হয়েছেন। আর এটাই হচ্ছে দেশে সাপের বিষের প্রতিষেধক তৈরির প্রথম কোনো প্রচেষ্টা। তথ্যমতে, রাসেলস ভাইপারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ১০ প্রজাতির সাড়ে তিনশ সাপ গবেষণার জন্য ২০১৮ সালের মার্চ থেকে বাংলাদেশ ভেনম রিসার্চ সেন্টারে আনা হয়েছে।
গবেষণার অগ্রগতি বিষয়ে বাংলাদেশ ভেনম রিসার্চ সেন্টারের প্রধান গবেষক ডা.অনিরুদ্ধ ঘোষ বলেন, “অ্যান্টিভেনম তৈরির জন্য অ্যান্টিবডি তৈরি করা হচ্ছে মুরগী ও ছাগলের ওপর। এর মধ্যে শেষ হয়েছে মুরগীর অ্যান্টিবডি তৈরির কাজ। এখন চলছে তার কার্যকারিতা পরীক্ষা। পাশাপাশি চলছে ছাগলের অ্যান্টিবডি তৈরির কাজটিও। পুরোপুরি কাজ শেষ করে, বছরের শেষ নাগাদ মিলতে পারে সুফল।”
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ভেনম রিসার্চ সেন্টারের সমন্বয়ক ও গবেষক ডা. আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ বলেন, ‘বর্তমানে সাপের বিষের অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা হচ্ছে তা কমন। সেজন্য আমরা চেষ্টা করছি কীভাবে প্রতিটি জাতের বিষধর সাপের বিপরীতে আলাদা আলাদা অ্যান্টিভেনম তৈরি করা যায়। সুনির্দিষ্ট অ্যান্টিভেনম সাধারণ অ্যান্টিভেনমের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর।” ড. আব্দুল্লাহ আশা করছেন সরকার তাদের সফলতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তবে, গত ২৭ জুন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কনভেনশন হলে আয়োজিত ‘রাসেলস ভাইপার: ভয় বনাম ফ্যাক্ট’ শীর্ষক এক সেমিনারে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন দাবি করেছেন, দেশের প্রতিটি হাসপাতালে রাসেলস ভাইপারের অ্যান্টিভেনম আছে।