চাঁদের দক্ষিণ মেরুর এইটকেন অববাহিকা। যেখানে আজ অবধি কোনো দেশের নভোযানই অবতরণ করেনি। চাঁদের সেই অনাবিষ্কৃত অঞ্চলটিতে এই প্রথম অবতরণ করল চীনের মানুষ্যবিহীন একটি মহাকাশযান।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, অঞ্চলটিতে যেকোনো মহাকাশযানের অবতরণের ক্ষেত্রে বড় ধরনের ঝুঁকি ছিল। সেই ঝুঁকি নিয়েই সেখানে সফলভাবে অবতরণ করেছে চীনা মহাকাশযান। চাঁদের সেই অঞ্চল পৃথিবীর বিপরীত দিকে মুখ করে আছে।
চায়না ন্যাশনাল স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (সিএনএসএ) বলেছে, চীনা মহাকাশযান চ্যাংই-৬ এর ল্যান্ডারটি বেইজিংয়ের স্থানীয় সময় রোববার (২ জুন) সকাল ৬টা ২৩ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুর এইটকেন অববাহিকায় নামে।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া সিএনএস-এর বরাত দিয়ে বলেছে, এইটকেনে অবতরণের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে একটি স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা। যা দৃশ্যমান বাধা এড়াতে সাহায্য করেছে। একই সঙ্গে ব্যবস্থায় থাকা ক্যামেরা উজ্জ্বলতা ও অন্ধকারাচ্ছন্ন অংশ বিবেচনায় নিয়ে অবতরণের জন্য অপেক্ষাকৃত নিরাপদ জায়গা খুঁজে বের করতে পেরেছে।
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছে, চাঁদের দক্ষিণ মেরু এইটকেন অববাহিকা সৌরজগতের বৃহত্তম খাদগুলোর একটি। চাঁদের একদম ভিন্ন এই অংশের শিলা বিশ্লেষণ করা গেলে গ্রহের গঠনসংক্রান্ত অনেক মৌলিক প্রশ্নের উত্তর মিলতে পারে। অনাবিষ্কৃত অঞ্চলের নমুনা সংগ্রহের জন্য সর্বোচ্চ তিন দিন চন্দ্রপৃষ্ঠে অবস্থান করবে ল্যান্ডারটি।
চাঁদের ভূপ্রকৃতিবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জন পারনেট-ফিশার বলেন, সবাই ব্যাপারটি নিয়ে খুবই উত্তেজিত যে এসব শিলা হয়তো একবার দেখা যাবে, যা আগে কেউ দেখেনি। যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাপলো ও চীনের আগের মিশনগুলোর মাধ্যমে আনা চাঁদের শিলা বিশ্লেষণ করেছেন অধ্যাপক জন।
সিএনএসএ জানায়, চাঁদের এই অভিযানে ড্রিল ও যান্ত্রিক হাত ব্যবহার করে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে অন্তত দুই কেজি নমুনা সংগ্রহ করার লক্ষ্য রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত চাঁদ থেকে যেসব শিলা সংগ্রহ করা হয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগই আগ্নেয়। এ ধরনের শিলা হয়তো আইসল্যান্ড বা হাওয়াইতেই পাওয়া যাবে।
অধ্যাপক জন পারনেট-ফিশার বলেন, চাঁদের দূর পৃষ্ঠের শিলাগুলো ভিন্ন উপাদানে গঠিত হতে পারে। যা আমাদের সত্যিই বড় প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেতে সাহায্য করতে পারে। যেমন গ্রহ কীভাবে গঠিত হয়, কেন ভূত্বক তৈরি হয়, সৌরজগতে পানির উৎস কী?’
বিশ্বের নানা দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার চন্দ্রাভিযানের ভবিষ্যৎ লক্ষ্য চাঁদের দক্ষিণ মেরু। যেখানে বরফ থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। আর বরফ মানেই পানির উৎস। পানি পাওয়া গেলে পরবর্তী মহাকাশ গবেষণার জন্য মানুষ চাঁদে ঘাঁটি গড়ার যে পরিকল্পনা করছে, তাতে সফল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা বেড়ে যাবে।
তবে এবারই প্রথম নয়, ২০১৯ সালে প্রথমবারের মতো চীনের চ্যাংই-৪ মহাকাশযান চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে প্রথম অবতরণ করেছিল। এবার দ্বিতীয়বারের সফল অভিযান হলেও এইটকেন অববাহিকার মতো দুর্গম ও অনাবিষ্কৃত অঞ্চলে প্রথমবারের মতো অবতরণ করেছে চীনের মহাকাশযানের ল্যান্ডার।