মানুষের রক্ত, গর্ভাশয়ের ভেতরের টিস্যু বা প্লাসেন্টা এবং বুকের দুধের পর এবার মানুষের বীর্যেও পাওয়া গেল ভয়ঙ্কর মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি। যে গবেষণার ফলাফল ইঙ্গিত করছে, মানবদেহের সর্বত্র এখন ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে দূষণকারী অতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা।
স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব এখনও জানা যায়নি। তবে গবেষণাগারে দেখা গেছে, মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবদেহের কোষের ক্ষতি করে। গবেষণার এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে সায়েন্স অভ দ্য টোটাল জার্নালে।
গেল কয়েক দশক ধরেই পুরুষের শুক্রাণুর পরিমাণ (স্পার্ম কাউন্ট) কমে যাচ্ছে। এক্ষত্রে ৪০ শতাংশ স্পার্ম কাউন্ট কমে যাওয়ার কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। যদিও অনেক গবেষণায় ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যে, রাসায়নিক দূষণের কারণে পুরুষের শুক্রাণু কমে যেতে পারে।
বিশ্বে প্রতিদিন লাখ লাখ টন প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে ফেলে দেওয়া হয়। এর অনেকটাই মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়। এসব অতিক্ষুদ্র কণা মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া থেকে গভীর সমুদ্রের তলদেশ পর্যন্ত গোটা পৃথিবী দূষিত করেছে। মানুষ খাবার ও পানি এবং নিশ্বাসের সঙ্গে এসব অতিক্ষুদ্র কণা গ্রহণ করে।
চীনের কিংদাও ইউনিভার্সিটির গবেষক নিং লি ও তার সহকর্মীরা বলছেন, গবেষণা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মনে হচ্ছে, মানব স্বাস্থ্যের ওপর মাইক্রোপ্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে। আর প্রজননের ওপর প্রভাব অতি গুরুত্বপূর্ণ।
গবেষণায় চীনের জিনানের ৪০ জন সুস্থ পুরুষের বীর্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়। আরেক গবেষণায় চীনের ১০ জন সুস্থ পুরুষের থেকে সংগ্রহ করা বীর্যের নমুনার মধ্যে ৬ জনের নমুনাতেই মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। চীনের আরেক গবেষণায় ২৫ নমুনার প্রায় অর্ধেকেই মিলেছে মাইক্রোপ্লাস্টিক।
কিছুদিন আগে ইঁদুরের ওপর করা গবেষণায় দেখা গেছে ইঁদুরের স্পার্ম কাউন্ট কমিয়ে দিয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিক। যা অস্বাভাবিক আচরণের কারণ হয়েছে। পাশাপাশি মাইক্রোপ্লাস্টিকের কারণে হরমোনে ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে।
মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে আরও অনেক গবেষণা হয়েছে, হচ্ছে। সবগুলোতেই দেখা গেছে, সর্বত্রই মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ হচ্ছে। গত মে মাসে পরীক্ষা করা ২৩টি পুরুষ অণ্ডকোষের নমুনার সবকটিতে পাওয়া গেছে এই ক্ষতিকর কণা।
এসব গবেষণায় পাওয়া গেছে আট ধরনের প্লাস্টিকের উপস্থিতি। সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে প্যাকেজিংয়ের কাজে ব্যবহৃত পলিস্টাইরিন। পরিমাণের দিক থেকে এরপরই আছে প্লাস্টিকের ব্যাগে ব্যবহৃত পলিইথিলিন। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পিভিসি। সূত্র: গার্ডিয়ান।