প্রবল বেগে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে মিশরীয় দেবতা ‘অ্যাপোফিস’। মহাকাশের এই গ্রহাণুর নাম দেওয়া হয়েছে ‘গড অফ কেওস’ বা ‘বিশৃঙ্খলার দেবতা’ হিসেবে। হিরোশিমায় ফেলা পরমাণু বোমার ধ্বংসক্ষমতার চেয়ে ৬৫ হাজার গুণ বেশি ক্ষমতার এই মহাজাগতিক বস্তুর আঘাতে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে গোটা পৃথিবী।
বিজ্ঞানীরা ধারণা করছেন, ২০২৯ সালের ১৩ এপ্রিল পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে চলে আসবে ‘অ্যাপোফিস’। যে সময়টিতে পৃথিবী ও গ্রহাণু অ্যাপোফিসের মধ্যে দূরত্ব হবে মাত্র ৩২ হাজার কিলোমিটার। এই সময়ের মধ্যে অ্যাপোফিস পৃথিবীর এত কাছাকাছি চলে আসবে যে তাকে পৃথিবী থেকে খালি চোখেই দেখা যাবে।
মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলছেন, এই দূরত্ব খুবই বিপজ্জনক হিসেবে ধরা হচ্ছে। সেজন্য সতর্ক থাকছেন বিজ্ঞানীরা। গ্রহাণুটির বিষয়ে যেমন কড়া নজর রাখছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা, একই সঙ্গে সতর্ক রয়েছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোও। খবর আনন্দবাজারের।
মূলত, অ্যাপোফিসের সন্ধান মিলেছিল আজ থেকে ২০ বছর আগে। বিভিন্ন দেশের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলি তখনই জানিয়ে দিয়েছিল গতি বাড়িয়ে পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে গ্রহাণু ‘অ্যাপোফিস’।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ‘অ্যাপোফিস’ উচ্চতার দিক থেকে পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্য প্যারিসের আইফেল টাওয়ারের থেকেও উঁচু। ৩৪০-৩৫০ মিটার ব্যাসের এই মহাজাগতিক বস্তুটি আয়তনে মোটামুটি তিনটে প্রমাণ মাপের ফুটবল মাঠের সমান।
বিজ্ঞানীদের ধারণা মতে, ৮ কোটি ৮০ লাখ টন টিএনটি বিস্ফোরণে যে শক্তি নির্গত হয়, অ্যাপোফিসের ধাক্কায় সেই পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হবে। শুধু তাই নয়, এর ধ্বংসক্ষমতা হিরোশিমায় ফেলা পরমাণু বোমার ধ্বংসক্ষমতার চেয়ে ৬৫ হাজার গুণ বেশি বলে আশঙ্কা গবেষকদের। সেই আশঙ্কা থেকেই ইসরো চেয়ারম্যান এস সোমনাথ জানিয়েছেন, এই ধরনের একটি গ্রহাণু আছড়ে পড়লে তা মানবসভ্যতার অস্তিত্ব সঙ্কটের কারণ হতে পারে।
মহাকাশে ভাসমান ছোট-বড় নানা রকমের পাথরের টুকরো এবং গ্রহাণুর মধ্যে যাদের দৈর্ঘ্য ১৪০ মিটারের বেশি, তাদের গতিবিধি নিয়ে শঙ্কিত থাকেন বিজ্ঞানীরা। অ্যাপোফিসের আকার ও আয়তন যথেষ্ট বড় হওয়ায় সেই আশঙ্কা আরও প্রবল হয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, যদি কোনও গ্রহাণুর সঙ্গে ধাক্কা লাগে, তা হলে বিশ্বের সমূহ বিপদ এবং তার বড়সড় প্রভাব পড়তে পারে।
তবে এটাই প্রথমবার নয়, এর আগেও বেশ কয়েক বার গ্রহাণুর সঙ্গে সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পেয়েছে পৃথিবী। ২০২১ সালের মার্চ মাসেও পৃথিবীর কান ঘেঁষে বেরিয়ে গিয়েছিল এই ‘গড অফ কেওস’। চিনাবাদামের মতো আকৃতির এই অ্যাপোফিস তৈরি হয়েছে সিলিকেট জাতীয় পদার্থ, নিকেল ও লোহার মিশেলে।
২০২৯ সালের ১৩ এপ্রিলে গ্রহাণুটি পৃথিবীর এত কাছে চলে আসবে যে ইউরোপ, আফ্রিকা ও পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলি থেকে স্পষ্টতই তা দৃশ্যমান হবে। এমনকি পৃথিবীর কাছে চাঁদের থেকেও ১০ গুণ কাছাকাছি চলে আসবে অ্যাপোফিস।
তবে নাসার পক্ষ থেকে মহাকাশবিজ্ঞানী সারা থম্পসন জানিয়েছেন, ২০২৯ সালে পৃথিবীর খুব কাছে এলেও আপাতত চিন্তার কোনও কারণ দেখছেন না তারা। পাঁচ বছর পর গ্রহাণুটি পৃথিবীর কাছাকাছি এলেও ঠোকাঠুকি না লাগার আশঙ্কাই বেশি বলে দাবি করেছেন মহাকাশবিজ্ঞানীরা। তাদের অনুমান এটি পৃথিবীর কান ঘেঁষে বেরিয়ে যাবে।
যদিও পুরোপুরি নিশ্চিন্ত হয়ে বসে থাকতে পারছেন না ইসরোর বিজ্ঞানীরা। তাদের দাবি, কোন গ্রহাণু কখন কী আচরণ করবে তার নিশ্চয়তা থাকে না। তাই জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের সব সময়েই সতর্ক থেকে গবেষণা চালিয়ে যেতে হয়।
ইসরোর মতো একইভাবে ‘গড অফ কেওস’-এর গতিবিধির দিকে নজর রাখছে নাসাও। মহাকাশবিজ্ঞানীরা বলছেন, ২০২৯ সালের পর অ্যাপোফিস আবারও ২০৩৬ সালে, ২০৫১ সালে, ২০৬৬ ও ২০৬৮ সালে পৃথিবীর কাছে চলে আসবে।