আলবার্ট আইনস্টাইন পদার্থবিজ্ঞানের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রচুর গবেষণা করেছেন। নতুন উদ্ভাবন ও আবিষ্কারে তাঁর অবদান অনেক। ব্রহ্মাণ্ডের অনেক নিয়মকানুনই আইনস্টাইন অঙ্কের জাদুমন্ত্রে ধরে ফেলেছিলেন অনেক আগেই। ১০৬ বছর আগে আইনস্টাইনের কষে দেওয়া অঙ্ক যে একেবারেই নির্ভুল ছিল, আড়াই হাজার বছর আগেকার দু’টি তারা সে কথা দ্ব্যর্থহীন ভাবেই জানিয়ে দিল। ফের প্রমাণিত হল আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদের সত্যতা।
পৃথিবী থেকে দু’হাজার ৪০০ আলোকবর্ষ দূরে থাকা ওই দু’টি তারার উপর একটানা ১৬ বছর ধরে নজর রেখেছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাদের বলা হয়— ‘বাইনারি পালসার’। সেই পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে লেখা গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘ফিজিক্যাল রিভিউ এক্স’-এ।
গবেষকরা দেখেছেন, ১০৬ বছর আগে আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতাবাদে আইনস্টাইন অঙ্ক কষে ঠিক যেমনটা জানিয়েছিলেন সেই ভাবেই জোড় বেঁধে থাকা দু’টি তারা (বাইনারি) একে অন্যের উপর অভিকর্ষ বল দ্বারা যে টান দেয় তা তাদের মধ্যেকার স্থান ও কাল-কে আরও বেশি দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে দেয়। তার ফলে, একটি তারার বিকিরণের আলো অন্য তারাটিতে পৌঁছতে সময় লাগে।
কোনও তারা অন্তিম দশায় পৌঁছলে ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ হয়। তাকে বলা হয় ‘সুপারনোভা’। তারপর যে কোনও তারারই দুধরনের ভবিষ্যৎ হয়। যার একটি ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণগহ্বর হয়ে যায়। যার নাগপাশ এড়িয়ে কোনও বস্তু, এমনকি আলোও বেরিয়ে আসতে পারে না। আর অন্যটি, ব্ল্যাক হোল না হলে সুপারনোভার পর কোনও তারা নিউট্রন নক্ষত্র হয়ে যায়। কোনও তারার অন্তরে থাকা ভারী মৌলগুলি তখন প্রচণ্ড অভিকর্ষ বলের টানে একেবারে তারার কেন্দ্রস্থলে এসে খুব কম জায়গায় গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকে। তার ফলে, নিউট্রন নক্ষত্রগুলির ঘনত্ব হয় প্রচণ্ড বেশি।
পালসার এক ধরনের নিউট্রন নক্ষত্রই। তাদের এমন নামকরণের কারণ, নির্দিষ্ট সময় অন্তর তাদের থেকে বেরিয়ে আসে বিকিরণ। যা আলোক বর্ণালীর একটি প্রান্তে রয়েছে। বর্ণালীতে দৃশ্যমান আলোর এলাকা থেকে অনেকটা দূরে। তাই এই রেডিও তরঙ্গ কখনও খালি চোখে দেখা যায় না। রেডিও তরঙ্গ বেরিয়ে আসে কোনও পালসারের মেরু অঞ্চল থেকে। পালসারগুলি সব সময় ঘোরে বলে এই বিকিরণের ফলে সেগুলিকে মহাকাশে মনে হয়— ‘লাইটহাউস’। এই বিকিরণ হয় একেবারে ঘড়ি ধরে। পালসারের রেডিও তরঙ্গের বিকিরণ দেখা সম্ভব হয় শুধুই রেডিও টেলিস্কোপে। জার্মানির ‘ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর রেডিয়ো অ্যাস্ট্রোনমি’-র জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা রেডিও টেলিস্কোপেই ১৬ বছর ধরে নজর রেখে চলেছিলেন এই যুগ্ম তারা ওপর।
গবেষকরা দেখেছেন, নির্দিষ্ট সময় অন্তর একটি পালসারের মেরু থেকে বেরিয়ে আসা রেডিয়ো তরঙ্গ অন্য পালসারে পৌঁছতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। এটা যে অনিবার্যই সে কথা তাঁর আপেক্ষিকতাবাদে বলেছিলেন আইনস্টাইন ১০৬ বছর আগে। তা যে একেবারেই ভুল ছিল না এই প্রথম সেটা জানিয়ে দিল আড়াই হাজার বছর আগেকার দু’টি যুগ্ম তারা।
সূত্র: আনন্দবাজার