• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ওয়েবের তিন রং: সারফেস-ডিপ-ডার্ক


আসিফ রহমান সৈকত
প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২১, ০২:৪২ পিএম
ওয়েবের তিন রং: সারফেস-ডিপ-ডার্ক

ইন্টারনেটে আমরা সারা দিনে কত রকম সাইটে ঢুকি। সব কটিই আসলে ওয়েবসাইট। কিন্তু আমরা জানি কি ওয়েবের তিনটি ভাগ আছে? এই ভাগটা করা হয়েছে ওয়েবে প্রবেশ ও তার প্রাপ্যতার ওপর ভিত্তি করে। ইন্টারনেটকে অনেকটা তুলনা করা হয় সমুদ্রের সঙ্গে আর ওয়েবকে তুলনা করা হয় হিমশৈলের সঙ্গে। বিশাল সাগরে এই হিমশৈলের মতো ওয়েবকে ভাগ করা হয় সারফেস, ডিপ ও ডার্ক এই তিন ভাগে। চলুন সংক্ষেপে জেনে নিই এসব ওয়েব সম্পর্কে।

 

সারফেস বা ইনডেক্স ওয়েব

বাধাহীন বা যা সহজেই পড়া যায়, দেখা যায়, সেসব কন্টেন্ট ওয়েবের যে জায়গায় থাকে, সেটাকে আমরা বলি সারফেস ওয়েব বা ইনডেক্স ওয়েব (যেহেতু সার্চ দিয়েই পাওয়া যায় সব তথ্য)। এ জন্য এটাকে ভিজিবল ওয়েব বা লাইটওয়েবও বলে। হালকা আরকি। খুঁজে পেতে ঝামেলা নেই। এখানে অনুমতি লাগে না। এখানে আইনেরও তেমন বাধা নেই। কেউ নিষেধও করে না। ইন্টারনেটে সাধারণত যা পাওয়া যায় তার শতকরা ১০ ভাগ হলো এই সারফেস ওয়েব। মাত্র ১০ ভাগ। গুগলের সারফেস ওয়েবের ইন্ডেক্সে প্রায় ১৫ বিলিয়ন পেজ আছে। আমরা যখন একটা বই পড়ি তখন বইয়ের শুরুতে তালিকা থাকে ১, ২, ৩ এভাবে। সঙ্গে থাকে অধ্যায়ের নাম ও পৃষ্ঠা। এটাই ইন্ডেক্সিং। সার্চ ইঞ্জিনগুলো এই ইন্ডেক্সিংয়ের ওপর নির্ভর করে দ্রুত আপনাকে প্রয়োজনীয় তথ্যের কাছে নিয়ে আসতে পারে বা চায়।

 

হিমশৈলের নিচের ভাগ

এবার আসি, বাকি ৯০ ভাগে তাহলে কী আছে? এটা অনেকটা হিমশৈলের মতো, সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরে যার অল্পটুকু দেখা যায়, আর গোটা জিনিসটাই থাকে পানির নিচে। ওয়েবের এই বাকি ৯০ ভাগও তেমন। সেখানে ডুব দিতে হলে আপনার লাগবে পাসওয়ার্ড। নিরাপত্তা বেষ্টনী পার হয়েই আপনি পাবেন প্রবেশাধিকার। সেটা হোক ফেসবুকের অ্যাকাউন্ট, আপনার নিজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা আপনার অফিসের ইআরপির (এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং) সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো সফটওয়্যার। এই জায়গাগুলোর কন্টেন্টকে ওয়েব সার্চ ইঞ্জিনগুলো স্ট্যান্ডার্ড ইন্ডেক্সে রাখে না। আপনার যদি এগুলোর কোনো কিছুর ওয়েব অ্যাড্রেস (ইউআরএল) বা  আইপি অ্যাড্রেস জানা থাকে, আপনি ঢুকতে পারবেন। কিন্তু এটা তো সার্চ করে পাওয়া যাবে না। এসব সাইটে নিরাপত্তার দিকটিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। ব্যক্তিগত বা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই নিরাপত্তার দিকটি জোর দেওয়া হয়। যেহেতু এসব সাইট নিরাপত্তার কারণে একটু লুকায়িত অবস্থায় থাকে বা সহজেই সার্চ করলে আসে না, তাই এগুলোকে ডিপ ওয়েব বলে।

 

আরও গভীরে

এই ৯০ ভাগ ডিপ ওয়েবের মধ্যে আরও গভীরে একটা জায়গা আছে, যেখানে সহজে প্রবেশ করা যায় না। আমাদের আশপাশের চেনা ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে ওখানে যাওয়া যায় না। ওখানে ঢুকতে হলে বিশেষ সফটওয়্যার লাগতে পারে। বিশেষ কনফিগারেশন সেট করতে হয়। ব্যবহারকারীর নিজের ভৌগোলিক অবস্থান এবং পরিচয় গোপন রাখার প্রয়োজনও হতে পারে। ওয়েবের এই জায়গাটিকে বলে ডার্ক ওয়েব। ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে ফ্রেন্ড-টু-ফ্রেন্ড, পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্কে কাজ করে ডার্ক ওয়েব। অনেক সময় তারা এটাকে ক্লিয়ার নেটও বলে। যেহেতু এখানে যোগাযোগটা আনএনক্রিপ্টেড ফরম্যাটে চলে। ডার্কনেট ব্যবহারকারীরা নিয়মের বাইরে কাজ করতেই বেশি আগ্রহী। কোনো নির্দিষ্ট দেশের সীমানা বা কোনো নির্দিষ্ট দেশের কারেন্সির ওপর নির্ভর করে তারা কাজ করতে চান না। যে কারণে এখানে লেনদেন হয় বিটকয়েনের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে।

পৃথিবীব্যাপী অনেক অপরাধমূলক কাজ এই ডার্ক ওয়েবেই হয়। অবৈধ সোশ্যাল মিডিয়া, পর্নোগ্রাফি, মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা, হ্যাকিংসহ ভয়াবহ সব অপরাধের জন্য অপরাধীদের অনেকেই ডার্কওয়েবকে ব্যবহার করে। যিনি ব্যবহার করেন তিনি হয়তো আপনার আশপাশেই খুব ছাপোষা চেহারা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু আপনি হয়তো জানেনই না যে এই লোকটাই ডার্কওয়েবে ভয়াবহ সাইট চালাচ্ছে!

নিষিদ্ধ গোষ্ঠীর লোকেরাও অনেক সময় ডার্ক ওয়েবে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে। গোপন নেটওয়ার্ক তৈরি করে নিজেদের আর্থিক লেনদেনও চালায় অনেকে এই ডার্ক ওয়েবেই। গোপন ওয়েবসাইট কেনাবেচনা পর্বটাও এই স্তরেই সম্পন্ন হয়। প্রচলিত আইনকানুন বা নিয়মনীতির অন্তরালে নির্বিঘ্নে কাজ করা যায় ডার্ক ওয়েবে।

 

ডার্ক ওয়েব মানেই খারাপ নয়

অনেক সময় মুক্তবুদ্ধি বা ভিন্নমতাবলম্বী মানুষেরা প্রকাশ্যে তাদের মতামত রাখতে পারেন না। নানা ধরনের নিপীড়নের শিকার হন তারা। তারাও নিজেদের ভেতর কথাবার্তা বলার জন্য ডার্ক ওয়েবের সহায়তা নেন। অবাধ জ্ঞানচর্চার জায়গা হিসেবে ব্যবহার করেন গোপন ওয়েবটিকে। ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থায় গণতন্ত্রকামী ও রক্ষণশীল সমাজে সমকামীরা অনেক সময় নিজেদের নিরাপত্তার জন্য ডার্ক ওয়েবকে ব্যবহার করে থাকে।

 

সতর্ক থাকা ভালো

সবকিছুর পরও ডার্ক ওয়েবের ব্যপারে সতর্ক থাকা জরুরি। কারণ, এটা আপনাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। আপনার উৎসাহের কারণে, আপনার অসাবধানতার সুযোগে, আপনি নিজে, আপনার পরিবার ও আপনার প্রতিষ্ঠান ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। প্রযুক্তি সম্পর্কে অভিজ্ঞ না হলে ডার্ক ওয়েবে ঘোরাঘুরি করা উচিত নয়, কারণ আপনি নিজের অজান্তেই সেখানে হ্যাকিংয়ের শিকার হয়ে যেতে পারেন। তাই বড় ধরনের ঝামেলায় জড়ানোর চেয়ে নিরাপদে ডার্ক ওয়েবের দূরে থাকাই মঙ্গল।

 

সূত্র: সারফেস ওয়েবে থাকা বিভিন্ন সাইট

Link copied!