রংতুলিতে আঁকা হয়েছে তিনটি আতশবাজি। একটু নিচে তাকালে দেখা যায়, একটি কাক তার মৃত্যুর আগে বলছে ‘হ্যাপি নিউ ইয়ার’। যা দিয়ে একজন কার্টুনিস্ট বোঝাতে চেয়েছেন “আতশবাজি দিয়ে উৎসব উদ্যাপন মানুষের কাছে আনন্দের হলেও, নিরীহ প্রাণীদের কাছে মৃত্যুর কারণ।” এ চিত্রের দেখা মেলে ঋদ্ধি গ্যালারির উন্মাদ কার্টুন প্রদর্শনীতে।
শুধু এই কার্টুনটি নয়। শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) বিকেলে এমন অনেক কার্টুনচিত্র প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে। এসব চিত্রে কার্টুনিস্টদের ভিন্নধর্মী সব ভাবনা উঠে এসেছে।
ঋদ্ধি প্রকাশনী ও উন্মাদের আয়োজনে এদিন এই প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
অপরদিকে মিরপুরে এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে ঋদ্ধি প্রকাশনী তাদের যাত্রা শুরু করে, যা মিরপুরে এই প্রথম।
সরেজমিনে দেখা যায়, কার্টুনিস্টরা এঁকেছেন ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালে পৌঁছানোর জন্য একজন ব্যক্তি কী কী চিন্তা করেন। পাশাপাশি দুর্নীতি, কুসংস্কারসহ বিভিন্ন দিক কার্টুনিস্টরা তাদের চিত্রে ফুটিয়ে তুলেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্টুনচিত্র ছিল ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের যুদ্ধচিত্র।
এমন প্রদর্শনীর আয়োজনে খুশি কার্টুনিস্ট ও দর্শনার্থীরা। আর আয়োজকরা বলছেন, এটি সবার জন্যই উন্মুক্ত। সবার জ্ঞান অর্জনের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
রাফি নামের এক কার্টুনিস্ট বলেন, “আমরা নতুন বছরে অনেক আশা নিয়ে থাকি। কিন্তু নতুন বছরে দেখা যায়, পরিকল্পনা মোতাবেক হয় না। আমি আমার আঁকা চিত্রে তাই বোঝাতে চেয়েছি। এমন আয়োজনে সত্যি খুব খুশি লাগছে।”
এ বিষয়ে ঋদ্ধির কর্ণধার শিল্প উদ্যোক্তা, পাঠক ও সংগ্রাহক মাহবুবুল হাসান ফয়সাল বলেন, “ছোটবেলা থেকেই বই পড়া এবং সংগ্রহের নেশা ছিল আমার। একটা সময় গিয়ে আমার মনে হয়েছে আমরা শাহবাগ, নীলক্ষেত, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজারে বই কিনতে যাই। কিন্তু আমার এলাকায় নেই। সেই চিন্তাধারা থেকে এমন উদ্যোগ। এখানে গ্যালারি রয়েছে। তা ছাড়া বই পড়ার সুবিধাসহ বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে।”
আয়োজন সম্পর্কে উন্মাদ সম্পাদক ও দেশবরেণ্য কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব বলেন, “মিরপুরে আগে গ্যালারি ছিল না। এই গ্যালারিটি প্রথম। আর এখানেই সর্বপ্রথম প্রদর্শনী কার্টুনের। এই গ্যালারি সবার জন্য উন্মুক্ত। যারা আগ্রহী তারা যেকোনো বিষয় নিয়ে এখানে প্রদর্শনী করতে পারেন।”
শিক্ষাবিদ ও লেখক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, “কার্টুন অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। সম্পাদকীয় অনেক লেখা রয়েছে, যা সম্পাদক লিখতে পারেন না। সেই স্থলে মানুষ পলিটিক্যাল কার্টুনে সেই বক্তব্য দিতে পারেন। তা ছাড়া অনেক বড় বড় আর্টিকেল কার্টুন দিয়ে বোঝানো সম্ভব। কার্টুন একই সঙ্গে একজন মানুষকে নির্ভেজাল আনন্দ দেয়। আমাদের দেশে কার্টুনের গুরুত্ব খুবই বেশি। উন্মাদ এই কার্টুন প্রদর্শনীর সঙ্গে সঙ্গে আঁকা শেখাচ্ছে। ব্যাপারটি আমার খুব ভালো লেগেছে।”