ঘরে বসে প্রতি মাসের কিস্তি জমা দিয়ে সঞ্চয়ের সুযোগ থাকায় বিকাশ অ্যাপ থেকেই চারটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাসিক সঞ্চয় সেবা নিচ্ছেন লাখ লাখ বিকাশ গ্রাহক। ছোট অংকের এসব সঞ্চয়ে ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তা যেমন কিছুটা নিশ্চিত হচ্ছে, ব্যাংকিং খাতের জন্য আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকাও গতিশীল রাখতে এই সঞ্চয় ভূমিকা রাখছে।
এদিকে প্রতি মাসে ব্যাংকে যাওয়া, ফরম পূরণ, লম্বা লাইনে দাঁড়ানো, কর্মব্যস্ততা, সময় স্বল্পতা সহ বিভিন্ন কারণে ইচ্ছে থাকার পরও অনেকের জন্য সঞ্চয় করা কঠিন হয়ে পড়ে। ডিজিটাল সেভিংস স্কিমে প্রথাগত এই সমস্যাগুলোর সমাধান পাচ্ছেন গ্রাহকরা।
গ্রাহকদের সময় বাঁচাতে এবং আর্থিক সেবা সহজ করতে দেশের শীর্ষস্থানীয় মোবাইল আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান বিকাশের অ্যাপেই যুক্ত হয়েছে চারটি প্রতিষ্ঠানের সেভিংস স্কিম বা সঞ্চয় সেবা। বিকাশ অ্যাপে সিটি ব্যাংকের শরিয়া ভিত্তিক ইসলামিক সেভিংস, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড, ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড এবং আইডিএলসি ফাইন্যান্স-এর মাসিক সেভিংস স্কিম যুক্ত আছে। স্বল্প সময়েই এই সেবাগুলো বেশ সাড়া জাগিয়েছে, বিশেষ করে তরুণদের মাঝে।
জুনায়েদ আহমেদ, কাজ করেন ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। চার মাস হলো তিনি বিকাশ অ্যাপের মাধ্যমে তিন বছর মেয়াদি একটি সেভিংস সেবা খুলেছেন।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “অনেকদিন থেকেই ইচ্ছে ছিল একটি ডিপোজিট স্কিম করবো। বেতন পেয়েই একটা অংশ সেখানে সেভ করবো। কিন্তু ব্যাস্ততা ও কিছুটা আলসেমীর কারণে ব্যাংকে গিয়ে ফরম পূরণ করে একটা স্কিম খুলবো- সেটা হয়ে উঠছিল না। তাছাড়া ভাবছিলাম, প্রতি মাসে মনে করে অফিসের কাজের ফাঁকে বের হয়ে ব্যাংকে গিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে টাকা জমা দিতে পারবো তো? - এসব কারণে এতদিন সঞ্চয় করা হয়ে ওঠেনি।
কিন্তু বিকাশ অ্যাপ এই সঞ্চয়কে অনেক সহজ করে দিয়েছে, মাত্র কয়েক মিনিটেই পছন্দসই সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট খোলা যাচ্ছে, টাকা জমা দেয়ার ঝামেলা নেই, প্রয়োজনীয় পরিমাণ টাকা থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবেই অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাচ্ছে। অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকলেও কোন ঝামেলা নেই। অ্যাড মানি/সেন্ড মানি/ক্যাশ ইনের মাধ্যমে সহজে মুহূর্তেই প্রয়োজনীয় ব্যালেন্স নিয়ে আসা যায় বিকাশ অ্যাকাউন্টে”। সেবা ডিজিটাইজড হওয়ায় জুনায়েদের মতো অনেক তরুণই এখন আগ্রহী হচ্ছেন সঞ্চয়ে।
এমনই আরেকজন ফারহানা ইসলাম, পেশায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা। চার বছর হলো ফেসবুক পেজের মাধ্যমে পোশাক এবং প্রসাধনীর ব্যবসা করছেন।
তিনি বলেন আর্থিক নিরাপত্তার জন্য সঞ্চয় জরুরি, তবে ব্যবসার লাভের অংশ থেকে সঞ্চয়ের ইচ্ছে থাকলেও নানা ব্যস্ততায় সেটি হয়ে উঠছিলো না।
“কয়েক মাস আগে বিকাশের মাধ্যমে ঘরে বসেই সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট চালু করার বিষয়টি জানতে পারি, ডিজিটাল সেবাগুলো আসলেই জীবন অনেক সহজ করে দিয়েছে, এখন ব্যাংকে যাওয়া ছাড়াও সঞ্চয় করা যাচ্ছে, পেশাগত কারণে যাদের ব্যস্ততা বেশি তাদের জন্য ডিজিটাল সেভিংস বেশ উপযোগী,” তিনি বলেন।
বিকাশের মাধ্যমে তিন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঞ্চয় সেবা নিয়েছেন যে গ্রাহকগণ তাদের মধ্যে ৬৪ শতাংশ গ্রাহক সঞ্চয় করছেন ভবিষ্যতের প্রয়োজনে। আর্থিক নিরাপত্তার জন্য সঞ্চয় করছেন ২৮ শতাংশ গ্রাহক। শিক্ষা খরচের জন্য সঞ্চয় করছেন ৪ শতাংশ গ্রাহক। এ ছাড়া অন্যান্য প্রয়োজনে সঞ্চয় করছেন বাকি ৪ শতাংশ গ্রাহক। সঞ্চয় সেবা নেয়া এই গ্রাহকদের মধ্যে ৩০ শতাংশই নারী।
সেভিংস সেবা চালু করতে বিকাশ অ্যাপের হোম স্ক্রিনে ‘সঞ্চয়/সেভিংস’ আইকনে ক্লিক করে ‘সাধারণ/ইসলামিক সেভিংস’ নির্বাচন করে পরবর্তী ধাপে নিজের এবং নমিনির তথ্য যোগ করে কয়েক ধাপে সেবাটি চালু করা যাবে।
এরপর মাসিক ৫০০, ১,০০০, ২,০০০, এবং ৩,০০০ টাকা কিস্তিতে সর্বনিম্ন দুই বছর থেকে সর্বোচ্চ চার বছর মেয়াদে সঞ্চয় স্কিম খোলা যাবে।
গ্রাহকরা মোট জমার পরিমাণ, সঞ্চয়ের মেয়াদ এবং মুনাফার পরিমাণসহ প্রয়োজনীয় সব তথ্য বিকাশ অ্যাপ থেকেই যেকোন সময় দেখতে পারবেন।
আবার মেয়াদ পূর্তিতে গ্রাহকরা মুনাফাসহ পুরো টাকা বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে ক্যাশ আউট করতে পারবেন কোনো খরচ ছাড়াই।
প্রতি মাসের নির্ধারিত তারিখে বিকাশ অ্যাকাউন্ট থেকে সঞ্চয়ের কিস্তি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেভিংস অ্যাকাউন্টে জমা হয়ে যাচ্ছে। তাই, নির্ধারিত তারিখের আগেই প্রয়োজনীয় টাকা বিকাশ অ্যাকাউন্টে রাখার জন্য ক্ষুদে বার্তা দিয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে গ্রাহককে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী এই সঞ্চয়ের মুনাফা ও অন্যান্য বিধিবিধান প্রতিপালিত হয় এবং ই-কেওয়াইসি এর মাধ্যমে নিবন্ধিত বিকাশ গ্রাহকরাই এই সঞ্চয় সেবা নিতে পারছেন।
