• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি, ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩০, ৭ রজব ১৪৪৬

বিমান বন্দরে কার্গো অয়্যারহাউজ সংকট, বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতির অগ্রগতি


সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৫, ২০২৫, ১২:৫৬ পিএম
বিমান বন্দরে কার্গো অয়্যারহাউজ সংকট, বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতির অগ্রগতি

হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কার্গো অয়্যারহাউজ সংকটের কারণে বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে জাতীয় অর্থনীতির অগ্রগতি।  আমদানি-রপ্তানী খাতের শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন- দ্রত সময়ের মধ্যে এ সংকটের সমাধান করা না হলে দেশে অর্থনীতিতে যে সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে, সে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। 

 আমদানি-রপ্তানী খাতের হৃৎপিণ্ড খ্যাত বানিজ্য সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, আইএইএবি এর নেতাদের দাবি - বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের অনিয়ম, দুর্নীতি, ব্যক্তিগত স্বার্থ বিবেচনায় বারবার নীতি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন ও অ-ব্যবস্থাপনার কারণে এ সংকট তৈরি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে। তাই হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কার্গো অয়্যারহাউজের সুরক্ষা চাইছেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সদস্যবৃন্দ। কার্গো অয়্যারহাউজ সংকটের কথা স্বীকার করে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে থার্ড টার্মিনালে পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যাবে কার্গো অয়্যারহাউজ এর জন্য।

খবর নিয়ে জানা যায়- আমদানি ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ নথি এবং স্যাম্পল বা নমুনা পণ্য, চিকিৎসা, খাদ্য, পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য দ্রত সময়ের মধ্যে সরবরাহের কাজ করে আন্তর্জাতিক এয়ার এক্সপ্রেস এসোসিয়েশন এর সদস্যভূক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো।

আন্তর্জাতিক এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিস প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন- অয়্যারহাউজ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ব্যহত হওয়ার কারণে অনেক সময় এসব গুরুত্বপূর্ণ নথি ও পণ্য হারিয়ে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। গ্রাহকের কাছে যার জবাবদিহি করতে হয় এবং ক্ষতিপূরণ দিতে হয় এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোকে।

খবর নিয়ে জানা গেছে- হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কার্গো অয়্যারহাউজ সংকট বহুদিনের পুরনো। এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস এসোসিয়েশন এর আবেদনের প্রেক্ষিতে  ২০২২ সালের ১৪ জুন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, বেবিচক হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের কার্গো এলাকায় আইএইএবি  নিয়ন্ত্রাধীন বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ব্যবহৃত ভবনের বাহিরে, অভ্যন্তরে এবং পাশে মোট ৩ টি জায়গা অয়্যারহাউজ হিসেবে ব্যবহারের জন্য বরাদ্দ দেয়। 

যার  মধ্যে- ভবনের বাহিরে  ১১ হাজার বর্গফুট, ভবনের ভেতরে ১২ হাজার ৪৫৫ বর্গফুট এবং ভবন সংলগ্ন পশ্চিম পাশে খোলা ৯ হাজার ১৫০ বর্গফুট জায়গা রয়েছে।  চুক্তির শর্ত অনুযায়ী বরাদ্দকৃত অয়্যারহাউজের স্থানে আইএইএবি নিজ খরচে স্থাপনা নির্মাণ, পণ্য সংরক্ষণের খাঁচা প্রতিস্থাপন, বিদ্যুত, পানির সংযোগসহ প্রয়োজনীয় মেরামতের কাজ করে। এখন শর্ত অনুযায়ী চুক্তি নবায়ন না করে বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত সুবিধা বিবেচনায় একই স্থাপনা ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। ফলে কার্গো অয়্যারহাউজ ব্যবস্থাপনায় জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও কার্গো অয়্যারহাউজের বরাদ্দকৃত ভাড়া থেকে প্রায় ৯ গুণ বেশি ভাড়া আদায়, একই কক্ষ উপর তলা ও নীচ তলা দেখিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া চাপিয়ে দেওয়া, অনিরাপদ পদ্ধতিতে খাঁচায় পণ্য সংরক্ষণে বাধ্য করাসহ নানা অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে আইএইএবি সদস্যগণ একাধিকবার অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে বেবিচক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ না করে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে কার্গো অয়্যারহাউজ বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। ফলে জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সংরক্ষণ ও সরবরাহ কাজে প্রতিনিয়ত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে আইএইএবির সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো। যাদের খরচে মেরামত করা হয়েছে এসব কার্গো অয়্যারহাউজ।

ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস এসোসিয়েশন এর সভাপতি কবির আহমেদ জানান- 
বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের একমাত্র বানিজ্যিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল এয়ার এক্সপ্রেস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, আইএইএবি। যা মেইলিং অপারেটর ও কুরিয়ার সার্ভিস আইন- এর ২৭ ধারার ৪ উপধারা অনুযায়ী গঠিত এবং বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিটিও শাখা এবং যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তরে নিবন্ধনকৃত। এই বানিজ্যিক সংগঠন বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানে দেশের সকল আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিসসমূহের প্রতিনিধিত্ব করে এবং প্রয়োজনে তাদের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করে। দেশের বানিজ্য ব্যবস্থায় অগ্রগতির জন্য নিরাপদ অয়্যারহাউজ অত্যন্ত জরুরি। ইতোমধ্যে এ সংগঠনের পক্ষ থেকে  ওয়্যারহাউজ চুক্তি  নবায়নের জন্য বেবিচক বরাবর আবেদন করা হয়েছে। বেবিচক যদি আইএইএবির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন না করে আলাদাভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে বরাদ্দ দেয়, তাহলে অয়্যারহাউজ ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বিঘ্ন হবে।

তিনি বলেন- জরুরি নথি, পণ্য আমদানি ও রপ্তানির জন্য স্যাম্পল বা নমুনা পণ্য, জরুরি ওষুধ, উপহার সামগ্রীসহ ৩০ কেজির নিচে বিভিন্ন পণ্য সুরক্ষিতভাবে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানোর জন্য পরিবহন করা হয় এয়ার এক্সপ্রেস সার্ভিস প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। কার্গো অয়্যারহাউজ ব্যবস্থাপনা ত্রুটির কারণে গ্রাহকের এসব গুরুত্বপূর্ণ নথি ও পণ্য হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে এর দায় এসে পড়ে সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে কাঁধে।

এছাড়া গুরুত্বপূর্ণ পণ্য সরবরাহ বিলম্ব হওয়া, কার্গো অয়্যারহাউজ এর বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ, ওয়াসরুম অপরিচ্ছন্নসহ বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হবে। এ কারণে কার্গো অয়্যারহাউকটি একক কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে বরাদ্দ না দিয়ে সংগঠনের নামে বরাদ্দ দিলে সেবায় সমতার ভিত্তি অটুট থাকবে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালনা ও পরিকল্পনা বিভাগের সদস্য এয়ার কমডোর আবু সাঈদ মেহবুব খান  এর সাথে বারবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।  পরবর্তীতে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের উপ-পরিচালক, এটিএম, মাহমুদ আখতার হোসেন এর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি 
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে কার্গো হ্যান্ডেলিং এর স্থান সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন- এটি সত্য, পর্যাপ্ত জায়গায় অভাবে পণ্য সংরক্ষণে সমস্যা হচ্ছে। সে জন্য ‍‍`থার্ড টার্মিনালের আগমন ও বহির্গমণের জন্য আলাদা কার্গো  অয়্যারহাউজ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে পর্যাপ্ত জায়গা পাওয়া যাবে।

অয়্যারহাউজের নিরাপত্তা বিষয়ে তিনি জানান-  নিরাপত্তা মানদন্ডে ইউরোপিয়ান শর্তগুলো মেনে চলা হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি কার্গো বিমান যায় ইউরোপে। কয়েক বছর আগেও যুক্তরাজ্যে সরাসরি পণ্য রপ্তানি করা যেতো না। তৃতীয় অন্য একটি দেশ হয়ে পণ্য রপ্তানি করা হতো। বর্তমানে বাংলাদেশ যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় মানদণ্ড  অনুসরণ কর। ফলে সরাসরি পণ্য রপ্তানি করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
এয়ারলাইন্স ও কুরিয়ার এজেন্সিসহ ৫৫ থেকে ৫৬ট প্রতিষ্ঠানের নামে অয়্যারহাউজ বরাদ্দ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন এ কর্মকর্তা, তবে অস্বীকার করেন অতিরিক্ত অর্থ আদায় ৮ থেকে ৯ গুণ বেশি ভাড়া আদায় করার বিষয়টি।

জনসংযোগ বিভাগের আরো খবর

Link copied!