মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ৫১তম বার্ষিকী উপলক্ষে আগামী বছর ডিসেম্বর মাসে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ‘ভাটিপাড়া উইন্টার ফেস্টিভ্যাল ২০২২’ বা ভাটিপাড়া শীত উৎসব ২০২২। সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামে এই আয়োজনটি করা হচ্ছে। এটির মুখ্য আয়োজক আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী। সম্প্রতি সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী তাঁর ফেইসবুক আইডিতে দেয়া ‘ছবির মতো গ্রাম’ শিরনামের স্ট্যাটাসের মাধ্যমে এই আয়োজনের ঘোষণা দেন।
তিনি লিখেন : ছবিটা ভাটিপাড়া হাই স্কুলের। আমার গ্রামের বাড়ী। ভর বর্ষা মৌসুমে হাইস্কুলে যেতে হয় ব্রিজ পার হয়ে। ব্রিজের অন্যপাশে ভাটিপাড়া গ্রাম। আমার পৈতৃক নিবাস। শীতকালে আমাদের গ্রাম থেকে তাকালে অদূরে দেখা যায় ভারতের আসাম রাজ্যে অবস্থিত লাউড়ের পাহাড়। রাতে পাহাড়ি বাসিন্দারা যখন আগুন পোহান, ওই আলোও দেখা যায় ভাটিপাড়া থেকে। একবার কল্পনা করুন, এ পাশে ভাটিপাড়া, এরপর বিস্তীর্ণ হাওড় অঞ্চল। ওপাশে লাউড়ের পাহাড়। হাওড়গুলোয় লাখ লাখ অতিথি পাখির কলতান। প্রচণ্ড এক স্বপ্নের মায়াজাল।
বাংলাদেশের কোনো চলচ্চিত্র কিংবা নাটকে এখনও এই গ্রাম দেখা যায় না। যদিও সিলেট শহর থেকে ভাটিপাড়ায় যেতে সময় লাগে নব্বই মিনিটের একটু বেশি। এবার আমাদের গ্রামেই একটা ওয়েব সিরিজ, একটা ওয়েবফিল্ম এবং বেশকিছু নাটক ও ধারাবাহিকের শ্যুটিং হবে। আগামী বছর ডিসেম্বর মাসে। প্রযোজনা করবে ত্রিশূল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। কজন গল্পকার জানুয়ারি থেকেই গল্প ও চিত্রনাট্য লিখতে শুরু করবেন। খুব যত্ন করে কাজগুলো করা হবে বলেই সময় নেবো কিছুটা। কোনো তাড়াহুড়ো নয়।
পাশাপাশি ২০২২ সালের ডিসেম্বরেই ভাটিপাড়ায় অনুষ্ঠিত হবে তিনদিন ব্যাপী BHATIPARA WINTER FESTIVAL 2022 (ভাটিপাড়া শীত উৎসব ২০২২)। সারারাত চলবে অনুষ্ঠান।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বাউলদের আমন্ত্রণ জানানো হবে এই উৎসবে। পালা গানেরও আয়োজন থাকবে। আর উৎসবের তিনদিন জুড়েই থাকবে বইমেলা, কবিতা পাঠের আসর, পিঠা উৎসব এবং নানা আয়োজন। এই বিশাল আয়োজনের সাথে থাকবে ত্রিশূল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, ক্রাউন এন্টারটেইনমেন্ট এবং ক্রাউন ক্রিয়েশনস্।
১৯৭৫ সালে ভাটিপাড়ায় অনুষ্ঠিত হয়েছিলো তিনদিন ব্যাপী বাসন্তী উৎসব। সেটার আয়োজক ছিলেন আমার আব্বা গোলাম আতহার চৌধুরী। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই ওই আয়োজন দেখেনি। তাই এবার নতুন প্রজন্মের জন্যে আমার এই প্রয়াস। আমি চাই, সারা বাংলাদেশ এবং বিশ্ববাসীর কাছে আমাদের গ্রামের নৈসর্গিক দৃশ্য তুলে ধরতে। আমি জানি, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, নাটক, সঙ্গীত এবং সাহিত্যাঙ্গনের অনেকেই আমার এই আয়োজনের সাথে সম্পৃক্ত হবেন। কারণ, ওনাদের অনেকের সাথেই তো আমার গভীর মিত্রতা।
আমি হাওড় অঞ্চলের সন্তান। একারণেই, চালচলনে ওয়েস্টার্ন হলেও স্বভাবে আমি বাউল। একতারার টুং টাং আমায় প্রচণ্ডভাবে কাছে টানে।
জানা গেছে, তিন দিনব্যাপী ভাটিপাড়া উইন্টার ফেস্টিভ্যাল ২০২২ বা ভাটিপাড়া শীত উৎসব ২০২২ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশসহ বিশ্বাসীর কাছে প্রাকৃতিক নিসর্গ সমৃদ্ধ ভাটিপাড়া এবং এর পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন এলাকাকে তুলে ধরা।
শোয়েব চৌধুরী বলেন, সফলভাবে ভাটিপাড়া উইন্টার ফেস্টিভ্যাল ২০২২ অনুষ্ঠিত হওয়ার পর কেবলমাত্র গোটা বাংলাদেশ এবং বিশ্ববাসীর কাছে ভাটিপাড়ার নাম ছড়িয়ে পড়বে তা-ই নয়, বরং এর মাধ্যমে অনেকেই, বিশেষ করে শিল্পোদ্যোক্তারা সেখানে ক্ষুদ্র কিংবা মাঝারি কারখানা গড়তে আগ্রহী হবেন। এলাকার বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি, বিস্তীর্ণ হাওরের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টানে প্রতিবছর, বিশেষ করে শীতকালে সেখানে বিপুল সংখ্যক পর্যটকের আনাগোনা হবে। এটাও এলাকার বাসিন্দাদের জন্যে নতুন আয়ের দরজা উন্মোচিত করে দেবে।
সালাহ উদ্দিন শোয়েব চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যখন দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, যখন দেশের প্রতিটি প্রান্তেই উন্নয়নের জোয়ার, ঠিক তখন ভাটিপাড়া এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় এখনও নানা সমস্যা বিরাজমান। এটা দুঃখজনক।
ভাটিপাড়া উইন্টার ফেস্টিভ্যাল ২০২২ প্রসঙ্গে দেশের শীর্ষ প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ক্রাউন এন্টারটেইনমেন্ট-এর ডেপুটি সিইও তাজুল ইসলাম বলেন, এই আয়োজন যাতে সফলভাবে সম্পন্ন হয় এজন্যে ক্রাউন এন্টারটেইনমেন্টসহ আমাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ক্রাউন ক্রিয়েশনস প্রয়োজনীয় সবকিছু করবে।
তাজুল ইসলাম বলেন, এটা শুধুমাত্র তিনদিনের উৎসব নয়। বরং এটা হতে যাচ্ছে ভাটিপাড়াকে সারাদেশে পরিচিত করে তোলার একটা গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্ট। আমরা আগামী মাসের শেষদিকে ভাটিপাড়া উইন্টার ফেস্টিভ্যাল ২০২২-এর একটা প্রমোশনাল ডিজাইন উন্মোচন করবো। আমরা আশা করবো ওই এলাকার হাজারা-হাজার বাসিন্দা ওনাদের ফেইসবুক আইডির কভার ফটো হিসেবে এটা ব্যবহার করবেন, যাতে ২০২২ সালে জুড়েই মানুষ এই আয়োজন সম্পর্কে জানতে পারেন। আমরা চাইবো, ভাটিপাড়া নামটার একটা ব্র্যান্ডিং হয়ে যাক সারা বাংলাদেশে।