তিন বছরের মাথায় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রণোদনা/নগদ সহায়তা হার বাড়িয়েছে বাংলাদেশ সরকার। রেমিট্যান্সের প্রণোদনা দুই থেকে বেড়ে আড়াই শতাংশ করা হয়েছে। বছরের শুরুতে এমন পদক্ষেপে যুক্তরাজ্যের প্রবাসীরাও খুশি।
মানি ট্রান্সফার ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রণোদনা বাড়ায় দেশে বৈধভাবে টাকা পাঠানোর পরিমাণ আরও বাড়বে।
এ বছরের শুরুতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর গুরুত্ব দিয়ে বাড়ানো হয়েছে এর প্রণোদনা। দশমিক পাঁচ শতাংশ বেড়ে এবার রেমিট্যান্সের প্রণোদনা দুই থেকে বেড়ে আড়াই শতাংশে পৌঁছালো।
শনিবার (১ জানুয়ারি) অর্থ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা গাজী তৌহিদুল ইসলামের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, জনমানুষের সার্বিক জীবনমান উন্নয়ন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ানো, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের গুরুত্ব বিবেচনায় বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমজীবী মানুষের কষ্টার্জিত বৈদেশিক আয় বৈধ উপায়ে দেশে প্রত্যাবাসন উৎসাহিত করার লক্ষ্যে রেমিট্যান্স পাঠানোর বিপরীতে সরকার ২ শতাংশ প্রণোদনা/নগদ সহায়তা দেওয়ার বিদ্যমান হার বাড়িয়ে ২ দশমিক ৫ শতাংশ নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্ধিত এ হার চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ১ জানুয়ারি শনিবার থেকেই কার্যকর হবে।
সরকারের এমন উদ্যোগে যুক্তরাজ্যের প্রবাসীরা অনেক খুশি। তাঁরা বলছেন, সরকারের এমন সিদ্বান্ত থেকে বোঝা যায় প্রবাসীদের গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টি।
লন্ডনপ্রবাসী আহমেদ শরীফ বলেন, “আগে এক লাখ টাকা দেশে পাঠালে ২ হাজার বোনাস পাওয়া যেত। এখন শুনলাম লাখে আড়াই হাজার টাকা পাওয়া যাবে। বিষয়টা আমাদের মতো প্রবাসীদের জন্য খুশির খবর। প্রবাসীরা উৎসাহিত হবেন বৈধভাবে দেশে টাকা পাঠাতে।“
সান্ডারল্যান্ডের বাসিন্ধা ছরফ রাজ জুবের বলেন, “আমরা কষ্ট করে এ দেশে অর্থ উপার্জিত করি। দেশে টাকা পাঠালে সরকারের পক্ষ থেকে প্রণোদনা দেওয়া হয়, বিষয়টি আমার কাছে খুশি ও সম্মানের। পাশাপাশি হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠানোও অনেক কমবে। প্রণোদনার হার বাড়িয়ে প্রবাসীদের গুরুত্ব দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও অর্থ মন্ত্রীকে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।”
মানি ট্রান্সফার ব্যবসায়ী ওয়াটনি এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এমরান আহমেদ বলেন, “যে সময়ে প্রণোদনা শুরু হয়েছিল, সে সময়ে বৈধভাবে দেশে টাকা পাঠাতে অনেক কাস্টমার উৎসাহিত হয়েছিলেন। প্রণোদনার হার বাড়ানোয় আশা করছি প্রবাসীরা আরও বেশি উৎসাহিত হবেন রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবে। এমন উদ্যোগ নেওয়ায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আমরা সরকারকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের দাবি, উদ্যোগ সব সময় চালু থাকে।”
বাংলাদেশের সুনামগঞ্জের সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ আতিকুল ইসলাম বলেন, “পিন নাম্বার নিয়ে আসলে আমরা সঙ্গে সঙ্গে প্রণোদনার টাকা দিয়ে দেই কাস্টমারদের। এছাড়া আমাদের শাখায় প্রবাসীদের জন্য আলাদা ডেস্ক রয়েছে। প্রণোদনার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় প্রবাসীদের জন্য অনেক সুবিধা হবে। আমাদের এখানে রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক বাড়বে। যারা টাকা বাংলাদেশ পাঠান তিনিও চিন্তা করবেন তার স্বজন বাড়তি কিছু টাকা পাবেন। হুন্ডি বা অসৎ উপায়ে টাকা পাঠানোর প্রবণতা কমে আসবে।”
২০১৯-২০ অর্থবছর প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের বিপরীতে প্রথমবারের মতো ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা/নগদ সহায়তা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার।