স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে জাতিসংঘের বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬-এ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে হাজার হাজার পরিবেশবাদী অংশ নিয়েছিলেন। বাংলাদেশ থেকেও অনেক পরিবেশবাদীর সরব উপস্থিতি ছিল গ্লাসগোতে। তবে বিশ্ব মিডিয়ায় এবার নজর কেড়েছে বাংলাদেশি তরুণ জলবায়ুকর্মী সোহানুর রহমানের ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ। লাল সবুজের পতাকা, পাঞ্জাবি, লুঙ্গি, গলায় গামছা আর প্ল্যাকার্ড হাতে গ্লাসগোর রাস্তায় প্রতিবাদ করেছেন তিনি।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে প্রতিবাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ইউরো নিউজের এক সংবাদে গ্রেটা থুনবার্গের পাশাপাশি বিশ্বের ৫ তরুণ জলবায়ু যোদ্ধার তালিকায় সোহানুর রহমানের নাম উঠে এসেছে।
সোহানুর রহমানের বাড়ি বাংলাদেশের বরিশালের ঝালকাঠিতে। ২০১৬ সাল থেকে জলাবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করছেন। বর্তমানে ইয়ুথ নেট ফর ক্লাইমেট জাস্টিজের সমন্বয়কের দায়িত্বে আছেন।
সোহানুর রহমান বলেন, “আমাকে এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে পরিবেশবাদী সংগঠন এনভায়রনমেন্টাল জাস্টিস ফাউন্ডেশন। প্রথম সপ্তাহের ব্যাজ দিয়েছে কেয়ার ইন্টারন্যাশনাল আর দ্বিতীয় সপ্তাহের জন্য ইয়ুথ ক্লাইমেট মুভমেন্ট নেদারল্যান্ডস।”
সোহান আরও বলেন, “বাংলাদেশ ‘ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম’-এর সভাপতি হওয়ার কারণে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়নে বিদেশিরাও ভিড় করেন, শুনতে চান আমাদের বিপণ্ণতা আর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প। আমি বক্তা হিসেবে বেশ কয়েকটি প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশের তরুণদের জলবায়ু কার্যক্রমে অর্জন, বাধাগুলো এবং জলবায়ু সুবিচার রূপকল্প তুলে ধরেছি।”
কপ সম্মেলনের সপ্তম দিন ৬ নভেম্বর ছিল গ্লোবাল ডে অব অ্যাকশন ফর ক্লাইমেট জাস্টিস। গ্লাসগো শহরের পশ্চিমে কেলভিংগ্রোভ পার্কে মানুষজন হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে এখানে সমবেত হয়েছিলেন। বৃষ্টিতে ভিজে কেলভিংগ্রোভ পার্ক ও দক্ষিণে কুইন্স পার্ক থেকে শুরু হয়ে পদযাত্রাটি প্রায় তিন মাইল পথ ধরে চলে। আমার প্ল্যাকার্ড বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় পদযাত্রায় হাতে তুলে নিলাম বাংলাদেশের পতাকা। বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও মানুষের প্রতিনিধিত্ব করতে আমার পরনে ছিল লুঙ্গি-পাঞ্জাবি আর গলায় গামছা। আমি ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আমাদের দেশের ক্ষতি বিষয়টি তুলে ধরেছি। এভাবে প্রতিবাদ করার কারণে সবার দৃষ্টি কেড়েছে। আমার প্রতিবাদ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে।”
সোহান জানান, ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে ১০০ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে টাকা ছাড় দেওয়া হয়নি। আমরা সে টাকা ছাড় দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। ক্ষতিপূরণের টাকা পাওয়া গেলে বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত নারী ও শিশুদের সহায়তা করা যেত।