স্বপ্নের দেশ যুক্তরাজ্যে ‘স্টুডেন্ট ভিসায়’ এসে নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন শিক্ষার্থীর। ভোগান্তির তালিকায় যুক্ত হয়েছে আবাসন সংকট। বাসা ভাড়া অথাৎ আবাসনের সমস্যার কারণে শিক্ষার্থীদের বাড়তি খরচ গুণতে হচ্ছে। অনেক সময় টাকা বাঁচাতে গিয়ে অনেক শিক্ষার্থী গাদাগাদি করে এক রুমের বাসায় থাকছেন।
শিক্ষার্থী ও কনসালটেন্সি ফার্মের দায়িত্বশীলদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশী শত শত কনসালটেন্সি ফার্ম গড়ে উঠেছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা, মালয়েশিয়া, তুর্কি, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পাঠানোর কাজ করে থাকে তারা। গত বছর থেকে যুক্তরাজ্যে স্টুডেন্ট ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করায় এসব কনসালটেন্সি ফার্মের ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছে। ফার্মগুলো মূলত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অফার লেটার এনে দেওয়া, পড়াশোনাকালীন ব্যয় এবং শিক্ষার্থীদের চুড়ান্ত ফাইল তৈরিতে সহায়তা করে।
পরে ভিসা পেলে বিমান টিকিট থেকে শুরু বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনাকালীন থাকা, খাওয়া, কাজ যোগার করা সব শিক্ষার্থীদের করতে হয়। ভিসা প্রাপ্তি বাংলাদেশ থেকে করা গেলেও কাজের সংস্থান, খাওয়া, বাসা ভাড়ার বিষয়টি অন্য দেশে গিয়ে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই করে থাকেন। গত এক বছর ধরে শত শত বাংলাদেশী শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যে আসছেন। যুক্তরাজ্যে এসে তারা কাজের সংকটের পাশাপাশি আবাসন সংকটেও ভুগছেন।
লিংকন্স ইন সোসাইটি ব্যারিস্টার এট লো'র স্টুডেন্ট ইশতিয়াক আলম পিয়াল বলেন, “অনেক স্টুডেন্ট গত দুই বছরে ইংল্যান্ডে এসেছে এবং আসছে। স্টুডেন্টদের মূল ইনকাম সোর্স হিসাবে ডেলিভারি জব না থাকলে হয়তো ভালো বিপদেই পড়তে হতো। তাই ইনকাম সোর্স নিয়ে ততোটা চিন্তা করতে হচ্ছে না। মূল সমস্যাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে একোমোডেশন। যারা ব্যাচেলর থাকছে তাদের বাসা নিয়ে আসলেই সমস্যা হচ্ছে। বিষয়টা এমন না যে বাসা নেই, মূল সমস্যা হচ্ছে ভাড়া অনেক বাড়িয়ে দিয়েছে সবাই। আত্বীয় স্বজন থাকলে এখানে কিছুটা স্বস্তি পাওয়া যায় কিন্তু একটা সময় তো নিজের দায়িত্ব নিজেই নিতে হয়। লন্ডন শহরে জোন ২-৩ এলাকায় সিঙ্গেল রুম ৫০০ পাউন্ডে পাওয়াটাও কষ্টকর হয়ে গেছে। শেয়ার রুমে থাকতে গেলেও দুজন মিলে ৬০০-৭০০ পাউন্ড গুণতে হয়। এদিক থেকে যারা লন্ডনের বাইরে থাকছেন তারা আবার স্বস্তিতে আছেন।”
ইউনিভার্সিটি অফ বেডফোর্ডশায়ার শিক্ষার্থী রুহুল আমিন বলেন, “এখানে বাসা ভাড়া পাওয়া খুব কষ্টসাধ্য, ব্যাচেলারদের অনেকে ভাড়াও দিতে চায় না। আর বাসা পাওয়া গেলেও অনেক সময় ভাড়া বেশি দাবি করা হয়। ফলে যুক্তরাজ্যে দেশ থেকে আসা শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট প্রকট। আমাদের কাজ থেকে যা আয় হয় তার বড় একটি অংশ বাসা ভাড়ায় চলে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত কম দামে আমাদের আবাসনের ব্যবস্থা করা।”
হাসান মেহেদী নামের আরেকজন বলেন, “স্ত্রী এসেছে স্টুডেন্ট ভিসায়, আমিও এসেছি তার সঙ্গে। আমাদের বাসা ভাড়া দিতে হয় প্রায় ৬০০ পাউন্ড। যা আমাদের জন্য অনেক বেশি।”
ওয়ান এডুকেশনের সুনামগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত সুমা তালুকদার বলেন, “আমাদের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের অফার লেটার, বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনাকালীন ব্যয়ের বিষয়, চুড়ান্ত ফাইল তৈরি করা। আবাসনের বিষয়টি শিক্ষার্থীদের নিজেদের ব্যবস্থা করতে। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজেদের আবাসন ব্যবস্থা থাকে, তবে তা অনেক ব্যয়বহুল।”