• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনুন


ফয়সাল আহমেদ
প্রকাশিত: জুন ২৪, ২০২২, ০৬:৩৬ পিএম
সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনুন

কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপ‌জেলার পু‌লেরঘাট বাজারে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনকে কেন্দ্র দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় চ্যানেল টুয়েন্টিফোরের কি‌শোরগঞ্জ প্রতিনিধি খাইরুল আলম ফয়সাল গুরুতর আহত হন। হামলাকারীরা ইট দিয়ে অতর্কিত হামলা চালালে রক্তাক্ত হয় ফয়সাল। পরে তা‌কে কি‌শোরগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনা‌রেল হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বিষয়টি জানতে শক্রবার সকালে দৈনিক প্রথম আলো’র কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি তাফসিলুল আজিজকে ফোন করি। তিনি জানান, পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সংঘর্ষে জড়িতরা এই হামলা চালায়। অত্যন্ত ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে তিনি শারীরিক আক্রমণ থেকে বেঁচে গেলেও তার মোটরসাইকেলটা রেহায় পায়নি। দুর্বৃত্তরা তার মোটরসাইকেল ভেঙে চুরমার করে দেয়।

ঘটনার বিষয়ে সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা যায়, দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করতে গিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়েছে আওয়ামী লীগের দুটি পক্ষ। বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বিকালে শুরু হয়ে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী চলা সংঘর্ষে সিঙ্গুয়া নদী তীরের পুলেরঘাট বাজার এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ধারালো অস্ত্র নিয়ে দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও মারধরের ঘটনায় সাংবাদিকসহ প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন।

দীর্ঘদিন ধরে দলীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে কিশোরগঞ্জ-২ (পাকুন্দিয়া-কটিয়াদী) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ এবং একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. সোহরাব উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ চলে আসছে। এর আগে চলতি বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস পালন এবং গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন করতে গিয়েও এই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর বাইরেও দলীয় বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের সময় সংঘর্ষে জড়িয়েছেন দলীয় নেতা–কর্মীরা।

এতে বোঝাই যাচ্ছে তাদের জন্য এ ধরণের সংঘর্ষে জড়ানো নতুন কিছু নয়। এটা তাদের রুটিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলীয় কর্মসূচির নামে প্রতিরোধ, পাল্টা প্রতিরোধ চলছেই।

শধুমাত্র নেতাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য দিনের পর দিন এমন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলতে পারে না। এসব বন্ধ করা উচিৎ। যাদের ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্য এই হামলা তারাতো মাঠে নেই। এসব ঘটনায় বলির পাটা হয় শুধু তৃণমূলের সাধারণ নেতা-কর্মীরা।

বাংলাদেশ আজ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বপ্নের ‘পদ্মা সেতু’ উদ্বোধন করবেন। এর মধ্য দিয়ে আমাদের দীর্ঘদিনের স্বপ্নপুরণ হবে। সব প্রস্তুতি শেষ। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের অপেক্ষা। আমাদের মনে রাখতে হবে এই ‘পদ্মা সেতু’ শুধুমাত্র একটি আকাঙ্খার বাস্তবায়ন নয়, এই ‘পদ্মা সেতু’ একটি অন্যায়ের জবাব। এই ‘পদ্মা সেতু’ একটি প্রতিবাদ। ‘পদ্মা সেতু’ বাংলাদেশের আত্মমর্যাদার প্রতীক। এমন একটি কাজের গর্বিত অংশিদার মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ।

সারাদেশে উৎসবের আমেজ চলছে। দলীয়ভাবে নেওয়া হয়েছে নানা কর্মসূচি। এমন সময়ে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিনে কিশোরগঞ্জে সাংবাদিকদের ওপর এই নেক্কারজনক হামলা নেতাদের ক্ষমতা প্রদশর্নের জন্য নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের প্রতি অনুরোধ, দয়া করে স্থানীয় নেতাদের এখনই থামান। অন্যতায় নিয়মিত বিরতিতে সংগঠিত এসব সংঘের্ষের সূত্র ধরে স্থানীয় কর্মীরা নিজেদের মধ্যে স্থায়ী বিবাদে জড়াবে। বংশ পরম্পরায় যা অব্যাহত থাকবে। অসংখ্য মানুষ তাতে প্রাণ হারাবে।

বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ। নেতা-কর্মীরা মিছিলে উচ্চস্বরে স্লোগান দিয়ে বলে ‘আমরা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক’। দেশে-বিদেশে দুই বছরব্যাপী অগনিত অনুষ্ঠান ও পাঠের মধ্য দিয়ে বাঙালির জাতির জনকের জন্মশর্তবাষির্কী উদযাপন করা হলো। এই আয়োজনে শিশু-তরুণ-বৃদ্ধ সকলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার ও দলের পক্ষে প্রাণন্তকর প্রচেষ্টা আমরা দেখেছি। তার রেশ এখনো কাটেনি, এমন সময়ে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের এ ধরণের সংঘাত আমাদের ভয়ানকভাবে উদ্বিঘ্ন করে। আমার মনে প্রশ্ন জাগে, তারা কি আসলেই চিন্তা-চেতনায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে! তারা কি সত্যিই বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করে?

অতীতেও আমরা দেখছি যে কোনো দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সংঘর্ষ বাধলে সবার আগে আক্রান্ত হয়, রক্তাক্ত হয় সাংবাদিক। তা সেই হামলা দলীয় কর্মী বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যারাই করুক না কেন। সাংবাদিকদের প্রতি ওদের এত ক্ষোভ কেন? কারণ তারা তাদের সকল অন্যায় কাজ জাতির সামনে তুলে ধরে। সাংবাদিককে রক্তাক্ত করলে বিচার হয় না, সাংবাদিকের গাড়ি পুড়লে, ক্যামেরা ভাঙলে বিচার হয় না, এটা এখন রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রেওয়াজ ভাঙতে হবে। প্রতিটি হামলার বিচার করতে হবে। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপ‌জেলার পু‌লেরঘাট বাজারে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষের সময় সাংবাদিকদের ওপর হামলাকারীদের চিহিৃত করে অতি দ্রুত বিচারের আওতায় আনতে হবে। আহত ও ক্ষতিগ্রস্থ সাংবাদিকদের ক্ষতিপুরণ দিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে ন্যায় বিচার।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও গবেষক

Link copied!