পৌষের শীত বিভ্রান্ত করে গেল এবার। ভোরে হিম হাওয়া। কুয়াশা স্নান। দিনের দুই আনা পেরোতেই সূর্যের তেজ বেড়ে গেল। হিম হাওয়া বন্ধ, আকাশ মেঘলা থাকলেও। পুরো পৌষ এই হিম, এই উষ্ণ—এভাবেই বিভ্রান্ত করে চলে গেল। এই আচরণ সংক্রান্তির দিনেও ছিল। পৌষের এবারের চরিত্রের সঙ্গে মিল পাওয়া গেল নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী আবহাওয়ার।
দুই প্রধান মেয়র প্রার্থীকে ঘিরে উত্তাপ বদল হয়েছে, হচ্ছে। বিএনপি ভোটে নেই। কিন্তু হাতি নিয়ে যিনি মাঠে নেমেছেন, তিনি নারায়ণগঞ্জ বিএনপির ‘ব্র্যান্ড’ নেতা। অতএব বিএনপির নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে বা পেছনে তার সঙ্গে আছেন। অন্যদিকে নৌকার প্রার্থী যিনি, তিনি দুইবারের মেয়র। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা তার সঙ্গে থাকবেন, সেটাই স্বাভাবিক, কিন্তু ভোটের মাঠের খবর ছিল দলের মধ্যে গোত্র আছে। সেখানে বিরোধের উত্তাপ আছে। প্রচারণার সেই উত্তাপের আঁচ পাওয়া গেছে প্রার্থীদের উচ্চারণে। অনেকটা খোলাসা করেই কথা বলেছেন প্রার্থীরা। মনে হচ্ছিল গোত্র বিরোধ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে লাভবান করবে। কিন্তু ভোটের মাঠে গোত্র জিইয়ে রাখতে চায়নি কেন্দ্র। দলীয় কর্মী ও ভোটাররা অনুভব করলেন হাওয়া বুঝি বদলাল।
ভোটের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন। নারায়ণগঞ্জে মেয়র প্রার্থীরা নিজেদের প্রচারণা, সংবাদ সম্মেলনে তেমনটাই করছেন। কাউন্সিলর প্রার্থীরাও তাই করছেন, কিন্তু তাদের কথা গণমাধ্যমে তেমন আসে না। অথচ স্থানীয় সরকার নির্বাচন বা এই নগর নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে ভোটার সরবরাহ করেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। কারণ, ওয়ার্ডে একটি ভোটও জয়-পরাজয়ে বড় ভূমিকা রাখে। ভোটাররাও প্রার্থীদের মুখচেনা বলা যায় অনেকটা। তাই মুখ রক্ষার্থেও অনেকে ভোট দিতে আসেন। কাউন্সিলরকে ভোট দিয়ে মেয়রের ব্যালটেও সিল মেরে যান একটা। কিন্তু গণমাধ্যমসহ সবাই মেয়রকেন্দ্রিক, আলো ওখানেই ফেলে রাখেন।
নির্বাচনী প্রচারণার শেষক্ষণও মেয়র প্রার্থীরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং অভিযোগের জবাব নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। স্থানীয় এই নগর নির্বাচনে প্রধান দুই পক্ষ (যদিও এক পক্ষ দৃশ্যমান নয় ) জাতীয় রাজনীতির ঢঙে কথা বলে যাচ্ছে। মেয়র নির্বাচনে সব নগরেই এই আচরণ লক্ষণীয়। কিন্তু আমরা দুই প্রার্থীকে অভিযোগ করা ও খণ্ডানোর বাইরে গিয়ে নগরের সংকট নিয়ে কথা বলতে কমই দেখলাম।
নগরের সংকট, নগরবাসীর দাবি নিয়ে আলোচনার চেয়ে, প্রার্থীদের ঘিরে স্থানীয় রাজনীতির বাঁকবদলই থেকেছে গণমাধ্যমের শিরোনামে। একই সঙ্গে ভোটাররাও নজর রাখছিলেন সেই বাঁকবদলের দিকে। কাউন্সিলর, মেয়র প্রার্থীদের কাছে তাদের চাওয়া-পাওয়ার ফর্দটা স্পষ্ট নয়। সিটি করপোরেশন নিজ খেয়ালে যেটুকু বরাদ্দ রাখে নাগরিকদের জন্য, তাই আসবে বরাতে। এ নিয়ে তাই তাদের বাড়তি চাওয়া নেই। তবে আপাতত তাদের একটি চাওয়া বেশ জোরালো, সেটি হলো ভোট হোক শান্তিপূর্ণভাবে। উৎসবমুখর হোক ১৬ জানুয়ারির নারায়ণগঞ্জ।
নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ ফুরিয়ে যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন তাদের বড় আয়োজনের শেষ নির্বাচন। ‘সব ভালো যার শেষ ভালো তার’—এই প্রবাদটির সদ্ব্যবহার তারা করবেন, এমন প্রত্যাশাও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন আড্ডায় ধ্বনিত হচ্ছে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট