• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ঈদের আলিঙ্গনে দূর হোক সংকীর্ণতা


তুষার আবদুল্লাহ
প্রকাশিত: মে ২, ২০২২, ০৫:৫৯ পিএম
ঈদের আলিঙ্গনে দূর হোক সংকীর্ণতা

মানুষের কষ্টের আয়ু কত দীর্ঘ? প্রিয়জনকে আলিঙ্গনে না বাঁধা পর্যন্ত মানুষ কষ্ট বয়ে বেড়ায়। প্রিয় মানুষটির বুকে মাথা রাখলে কিংবা নিজ করতলে তার হাতটি ডুবিয়ে নিলে, মানুষের কষ্ট উড়ে যায়। মানুষ অযুত দুঃখের মাঝেও আনন্দে ভেসে যাওয়ার উপলক্ষ এবং উপায় খোঁজে। ঈদ বা যেকোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠান আনন্দযজ্ঞের সেই উপায়। শুধু বাংলাদেশ নয়, এই গোলকের সব মানুষই বিগত দুই বছর বিষাদে আচ্ছন্ন ছিল।পুরো পৃথিবী বিষাদমুক্ত হয়েছে বলা যাবে না। তবে এই মুহূর্তে অন্তত আমরা অদৃশ্য জীবাণুর কৃপায় আছি। কোভিডকাল চলে গেছে সেই দাবি করা যাবে না। আপাতত মুখোশ খুলে নিশ্বাস নিতে পারছি। সেই নিশ্বাসে উৎসবের সৌরভ।

ঘরে ফেরা বলতে কী বোঝায়, জানি না। সেই ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি পত্রিকার পাতায় শিরোনাম—ঈদে ঘরে ফিরছে মানুষ। যে শহর মানুষের রোজগারের, সেখানে তার শরীর থাকে, প্রাণ ও মন থাকে না। সবারই মনঘর আছে। সেই মনঘর গ্রামে রেখে আসা। কিংবা কোনো ছোট শহরে। আজকাল সব শহরই তিলে তিলোত্তমা। ঢাকার জেরক্স বা ফটোকপি বলা যায়। সেই শহরও রোজগারের। সেখান থেকেও মানুষ তার মনঘরে ফেরে। অথচ আমরা ভাবি শুধু রাজধানীর মানুষেরাই ঘরে ফেরে। হয়তো ঘরের ফেরার প্রতীকী হিসেবে আমরা এমনটা বলি। এই যে আমরা মহানগরের যে মানুষেরা ঢাকা ছাড়ছি না, তারা কি ঘরে ফিরব না?

করোনাকালে আমাদের কারোরই হয়তো ঘরে ফেরা হয়নি। অদৃশ্য অণুজীব আত্মা থেকে আত্মাকে দূরে রেখেছে। একই ঘরে পরস্পর পরস্পর থেকে ছিলাম যোজন দূরে। ফলে উৎসবের উচ্ছ্বাসের কোনো প্রতিধ্বনি শোনা যায়নি গত দুই বছর। কাজ হারানো, স্বজন হারানো মানুষেরা ঈদে বিষাদে ডুবে থাকলেও, কতিপয় ঠিকই বিপণিবিতান আলো করে রেখেছিল। উৎসবে তাদের খাবারের আয়োজন সামাজিক মাধ্যমে বিস্বাদ ছড়িয়েছে। বায়োস্কোপ পেরিয়ে শ্রমজীবী মানুষদের নিয়ে নাটক, টেলিফিল্ম কম হয়নি। মজুরি পরিশোধে টালবাহানা। ছুটি নিয়ে রহস্যের মধ্যে মানুষ ঘরে ফেরার দুর্ভোগে শরিক হয়েছিল। হয়তো কেউ ফিরতে পেরেছিল ঘরে। আবার শূন্য হাতে ঘরে ফেরা, কারও জন্য আরও বেদনার হয়েছে।

এবারের ঘরমুখো যাত্রাপথে পথে সৌরভ ছড়াচ্ছে। মুঠো, থলে ভর্তি ভালোবাসা। চোখে উচ্ছ্বাস। হৃদয় আলিঙ্গনাবদ্ধ হতে উন্মুখ। দুই বছর একপ্রকার নির্বাসনেই ছিলাম আমরা। সেখান থেকে মুক্তি। কিন্তু মুক্তির পর জীবনে ফেরার লড়াই চলছে এখন। ব্যক্তিজীবন থেকে, রাষ্ট্র সর্বত্র এই লড়াই চলছে। স্বাভাবিকত্বে ফেরার এই লড়াইয়ে নতুন নতুন সংকট এসে সামনে দাঁড়াচ্ছে। ব্যক্তি তার হারানো কাজ, আয় ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায়। রাষ্ট্রকে দুর্নীতি, অনিয়ম, অগণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িক, অদৃশ্য ও দৃশ্যমান পক্ষকে সামাল দিতে হচ্ছে। এর মধ্য দিয়েই আমরা বাংলা নববর্ষ উদযাপন করেছি। বাজারে টাকার ঘূর্ণিতে গতি এসেছে। ঈদে সেই গতি আরও তীব্র হয়েছে।

উপহার দেওয়ার চেষ্টায় সবাই। উপহার জোগাড় করতে পারেননি যে মা, বাবা, কিংবা যে সন্তান বাবা-মায়ের জন্য উপহার কিনতে পারেনি, যাদের বাড়ি থেকে পোলাও, মাংস, সেমাইয়ের সুঘ্রাণ আসবে না, তাদের ঘরেও ঈদ আসবে। কারণ বহুদিন পর উৎকণ্ঠা, , ভয় ও সংশয়মুক্ত হয়ে একে অপরকে আলিঙ্গন করার সুযোগ পাচ্ছে। দীর্ঘশ্বাস সেটাও থাকছে বরাবরের মতো। যে খুশির গান দিয়ে ঈদ উৎসবে শুরু, ‘ ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ, আপনাকে আজ বিলিয়ে দে শোন আসমানী তাগিদ’। এই মর্মাথে আমরা এখনো পৌঁছাতে পারিনি। বরং বাড়ছে উৎসব আয়োজনে সংকীর্ণতা। তারপরও এবারের ঈদের আলিঙ্গন ও ভালোবাসা প্রসারিত হোক।

 

লেখক: সাংবাদিক

Link copied!