সারাবিশ্বেই ট্রান্সজেন্ডার একটি বিতর্কিত ইস্যু । বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। রক্ষণশীল সমাজ হওয়াতে এ নিয়ে বিতর্কও কম নয়। বেশিরভাগ মানুষই ট্রান্সজেন্ডার ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে অমিল সম্পর্কেও সচেতন নন। আবার অনেক বায়োলজিক্যাল পুরুষ নিজেকে নারী হিসেবে রূপান্তর করে নিজেদের ‘ট্রান্সজেন্ডার নারী’ হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন বা করছেন। মানবাধিকার কর্মী বা নারীবাদীরাও তাদের এমন পরিচয়কে এক রকমভাবে মেনে নিয়েছেন। কিন্তু ট্রান্সজেন্ডারদের নারী ক্যাটাগরিতে ফেলে দিলে কি নারীর প্রতি অবিচার করা হয় না?
যেমন ধরুন, খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডাররা এরপর সহজে নারীদের হারিয়ে নিজেরা বিজয়ী হবেন। তাদের দেহে টেস্টোস্টেরন হরমোনের মাত্রা স্বাভাবিক নারীদের থেকে বেশি থাকায়, পেশীশক্তিতে এগিয়ে থাকেন। ফলে খেলার মাঠ তো বটেই, এমন কি যেসব পেশায় শারীরিক কিছু যোগ্যতা বিবেচিত হয়, যেমন সেনা কর্মকর্তা, পাইলট ইত্যাদি পেশাতেও ট্রান্সজেন্ডাররা শুধুমাত্র শারীরিক কারণে নারীদের থেকে অনেক এগিয়ে যাবেন। পুরুষ থেকে ট্রান্সজেন্ডারে রূপান্তরিত হয়ে তারা আরও সহজে সাফল্য লাভ করতে পারবেন। নারীদের স্থান হবে আরও সংকুচিত। চাকরি ক্ষেত্রেও নারী কোটায় তারাও বিশেষ সুবিধা পাবেন। কিন্তু এটা কি হওয়া উচিত?
এ ছাড়াও পাবলিক টয়লেট ব্যবহারের কথাই যদি বলি, ট্রান্সজেন্ডাররা কোনটা ব্যবহার করবেন? নারীদেরটা নাকি পুরুষদের? নারীরা কি ট্রান্সজেন্ডারদের সাথে এই শেয়ারিং এ নিরাপদবোধ করবেন? এটা প্রমাণিত যে, ট্রান্সজেন্ডার নারী বলে দাবি করলেও ঠিকই তাদের দেহে পুরুষাঙ্গের অস্তিত্ব রয়ে যায়। সেক্ষেত্রে একই টয়লেট শেয়ারিং হবে নারীদের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।
ট্রান্সজেন্ডারদের জন্য তাই টয়লেট ও পেশাগত ক্ষেত্রে কোটা আলাদাভাবে রাখা দরকার। নারীরা এতদিন শিশু ও প্রতিবন্ধীদের সাথে বাসের সিট ও অন্যান্য অনেক কিছু শেয়ার করে আসছে। এখন তো ট্রান্সজেন্ডারদের সাথেও শেয়ারের অবস্থা শুরু হতে যাচ্ছে!
সম্পত্তি বণ্টনের ক্ষেত্রেও ট্রান্সজেন্ডার ইস্যুটি নতুন বিতর্কের জন্ম দিচ্ছে। কোনো নারী যদি রূপান্তর হয়ে ট্রান্সজেন্ডার পুরুষে পরিণত হন, তবে সম্পত্তি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে ভাইয়ের সমান সম্পত্তি পাওয়ার অধিকার রাখলেও তা হবে, নারীর অধিকারের প্রতি বৈষম্যমূলক। এক্ষেত্রে নারীর প্রাপ্য সম্পত্তির পরিমাণ আরও কমে যাবে। হয়তো অনেক নারী শুধুমাত্র সম্পত্তির জন্যেও রূপান্তর হয়ে যেতে পারেন। যা পরবর্তীকালে নারীর জন্য জটিলতা সৃষ্টি করবে।
এ ছাড়া ট্রান্সজেন্ডার নারীরা নিজেদের নারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান। যদিও দেখা গেছে, তাদের দেহে টেস্টোটেরন হরমোনের মাত্রাও বায়োলজিক্যাল নারীদের চেয়ে বেশি, আবার পুরুষাঙ্গও ঠিকই রয়ে যায়। এর পরেও তারা কেন নারী পরিচয়ে পরিচিত হতে চান এবং নারীরা অবলীলায় এ আবদার মেনে নিচ্ছেন? মানুষ হিসেবে মানধিকার ভোগ করার পূর্ণ অধিকার তাদেরও রয়েছে। কিন্তু এ অধিকার ভোগ করতে গিয়ে তারা যেমন মানুষের অসচেতনতার সুযোগ নিয়ে হিজড়া জনগোষ্ঠীদের অসহায়ত্ব পুঁজি করছেন, আবার নারীদের ওপর ভর করতে চাইছেন। নারী একটি আলাদা সত্ত্বা। ট্রান্সজেন্ডার হচ্ছে ট্রান্সজেন্ডার। আলাদা সত্ত্বা হিসেবে ট্রান্সজেন্ডাররা নিজেদের অধিকার ভোগ করুক, নারীর ওপর ভর করে নয়। এ ব্যাপারে সবারই সচেতনতা দরকার। ট্রান্সজেন্ডাররা নিজেদের শুধুই ট্রান্সজেন্ডার হিসেবে পরিচয় দিক।
লেখক : শিক্ষক ও লেখক