• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

ফিলিস্তিন যুদ্ধ কোন দিকে


আফরিদা ইফরাত
প্রকাশিত: জানুয়ারি ১, ২০২৪, ১২:০০ পিএম
ফিলিস্তিন যুদ্ধ কোন দিকে
ফিলিস্তিন যুদ্ধ কোন দিকে

ফিলিস্তিনের পক্ষে যুদ্ধ করার জন্য ইয়েমেনের ২০ হাজার মানুষ প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানিয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সানা। এর মধ্যে তারা যুদ্ধের জন্য সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেছেন। তারা ‘আল আকসা তুফান’ নামের একটি সামরিক প্রশিক্ষণ কোর্স সম্পন্ন করেছেন। যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত ইয়েমেনের এ নাগরিকরা দেশটির হাজ্জাহ প্রদেশে কুচকাওয়াজে অংশগ্রহণ করেন। সে সময় তারা ফিলিস্তিনের পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষে বহু আগে থেকেই ইয়েমেনের মিলিশিয়া বাহিনী হুতিদের জড়িয়ে পড়ার অনুমান করছিলেন অনেকে। গাজায় যুদ্ধ পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে পড়ছে। তবে সংকটকালে ইয়েমেনের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি যে কারোরই ধারণার বাইরে ছিল।

অক্টোবর থেকেই বেশ কয়েকবার এই যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা ছিল। তখন থেকেই অনেকে ধারণা করেছেন, যদি তা হয় তাহলে ইয়েমেনের হুতিরাও হামাসকে সাহায্য করবে। হুতিদের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের ঘন ঘন সংঘর্ষের কথা নতুন কিছু নয়। ২০২২ সালের অক্টোবরে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। আর এই ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি পরিস্থিতি নিশ্চিত হয়। কিন্তু এই শান্তিচুক্তিকে পুরোপুরি নিখুঁত বলা যাবে না। বিশেষত ইসরায়েলে হামাস চলতি বছর ৭ অক্টোবর হামলা করার পর হুতিরা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠার আভাস দেয়। মূলত এই যুদ্ধে সৌদি আরব ও  যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিহত করার জন্যই তারা এমন উদ্যোগ নেয়। হুতিরা ইতিমধ্যে লোহিত সাগরে মার্কিন নৌবহর লক্ষ্য করে মিসাইল ছুড়েছে। শুধু তা-ই নয়, তারা বাণিজ্যিক নৌবহরেও হামলা করেছে। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে হুতিরা জাপানি নাবিক পরিচালিত একটি জাহাজ দখল করে। বাহামিয়ান পতাকা থাকলেও হুতিদের দাবি ওই জাহাজটি ইসরায়েলের। হুতিদের প্রতিনিধিদের একজন জানিয়েছেন, গাজায় মানবিক তাগিদে পণ্য, খাবার ও ওষুধ বহন করবে না যেসব ইসরায়েলি জাহাজ, সেসব জাহাজেই হামলা করা হবে। হুতিদের এই অবস্থানের কারণে লোহিত সাগর অঞ্চলে ইতিমধ্যে সংকটাবস্থা আরও গাঢ় হতে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র লোহিত সাগর এবং ভূমধ্যসাগর এলাকায় সামরিক তদারকি বাড়াতে শুরু করেছে। ইয়েমেনের হুতিদের এই অবস্থান গাজার প্রতি সমর্থন জানিয়েই, তা নিয়ে কোনো সংশয় নেই। কারণ বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা করলে ইয়েমেনে পণ্যদ্রব্যের দাম বাড়তে পারে। বিশেষত ইয়েমেনে অধিকাংশ খাদ্যপণ্যই আমদানি করা হয়। সে ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের এই অঞ্চলের পরিস্থিতিও কিছুটা নাজুক হতে শুরু করেছে।

গাজায় ইয়েমেনের সহযোগিতামূলক আচরণের পেছনে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থের বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া যায় না। কারণ ২০১৪ সাল থেকে দেশটিতে গৃহযুদ্ধ চলছে। হুতিরা ইয়েমেনের দক্ষিণাংশে নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টাও চলতি বছর শুরু করেছে। হুতিদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া শক্তিদের মধ্যে সমন্বিত হওয়ার মনোভাবের অভাব এবং গ্রহণযোগ্যতা কম থাকায় সংকট রয়ে গেছে। হুতিদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে হুতিদের নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রেও তাদের সঠিক নিয়ন্ত্রণের অভাব রয়েছে। হুতিরা সংখ্যায় বেশি না। সংখ্যায় বেশি না হওয়ায় তাদের খুঁজে বের করাও একটি চ্যালেঞ্জ। গাজায় ইয়েমেনের হুতিদের সরাসরি অংশগ্রহণের ফলে যুক্তরাষ্ট্রও এই যুদ্ধে নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখতে পারবে না। অবশ্য নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখাও তাদের পক্ষে কঠিন। এর মূল কারণ হলো, হুতিদের নিয়ন্ত্রণের জন্য তাদের আরও জটিল সামরিক কৌশলের আশ্রয় নিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের স্পেশাল এনভয় টিমোথি লেন্ডারকিং মূলত আন্তর্জাতিক ম্যারিটাইম নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে কাজ করছেন। তিনি ইয়েমেনের হুতি ও সৌদি আরবের সম্মিলিত জোটের বিষয়টি স্বীকার করে নেন। তার ধারণা ইয়েমেনের হুতি এবং সৌদি আরবের মধ্যে একধরনের চুক্তিও সম্পন্ন হতে পারে। সৌদি আরবের সঙ্গে হুতিদের চুক্তি সম্পন্ন হলে তারা আন্তর্জাতিক পরিসরে স্বীকৃতি পাওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবে। হুতিদের সামরিক কার্যক্রমের বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। কারণ তারা যদি অভ্যন্তরীণ সমর্থন আদায় করে তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের নিয়ন্ত্রণও অনেকটা হাতছাড়া হওয়ার পর্যায়ে চলে যাবে। গাজার প্রতি তাদের সমর্থনও তখন যুদ্ধকে নতুন মাত্রা দেবে। হুতি পরিচালিত আল মাসিরাহ টেলিভিশনে হুতিদের নেতা আবদুল মালিক আল হুতি বলেন, “প্রতিরোধে আমরা আমাদের ফিলিস্তিনি ভাইদের পক্ষে অবস্থান করছি। যুক্তরাষ্ট্র সামরিকভাবে যদি এই যুদ্ধে কোনোভাবে পক্ষপাতমূলক আচরণ করে, তাহলে আমরা মিসাইল ও ড্রোনের মাধ্যমে জবাব দেব।” যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সরাসরি সমর্থন না দিলেও যুদ্ধাস্ত্র সরবরাহ করে সহযোগিতা করছে। ইসরায়েলের হামলায় ইতোমধ্যে ২ মিলিয়নের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। প্রাণহানির সংখ্যাও কম নয়। যুদ্ধপরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কোনো পক্ষেরই উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি। তবে ইয়েমেনের মানুষের গাজা যুদ্ধে যোগ দেওয়ার বিষয়টি ইতোমধ্যে নানা জল্পনা-কল্পনার সৃষ্টি করেছে। যুদ্ধের পরিণতি কোন দিকে যাবে, সেটি দেখার বিষয়। তবে ইয়েমেন যদি যুক্ত হয়ে পড়ে তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাত-সহিংসতা আরও বাড়বে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি যুদ্ধে পড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কাও এড়িয়ে যাওয়ার নয়।

লেখক : সংবাদকর্মী

Link copied!