যতই দিন যাচ্ছে, ততই দেশে ধর্ষণ, সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পরিমাণ বাড়ছে। কন্যাশিশু থেকে ছেলে শিশু, কিশোরী থেকে বৃদ্ধা, কেউই বাদ পড়ছে না ধর্ষণের শিকার থেকে। সম্প্রতি ধর্ষণ মহামারি আকার ধারণ করেছে। ধর্ষণ কেন মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়েছে, তার কারণ অনুসন্ধান জরুরি। অপরাধবিজ্ঞানী, সমাজকর্মীরা গভীর অনুসন্ধান, গবেষণা করলে হয়তো ধর্ষণের প্রকৃত কারণ বের করতে পারবেন। তবে, ধর্ষণের কিছু কারণ সাধারণ নাগরিকের খালি চোখেও ধরা পড়ে। যদিও এদের মধ্যে মতবিরোধ, বিভক্তি রয়েছে। একপক্ষ ধর্ষণের জন্য কেবল পুরুষকে দায়ী করছে, অন্যপক্ষ দুষছে নারীর পোশাককে। প্রথম পক্ষের অভিযোগে সিংহভাগ সত্যতা মিললেও দ্বিতীয়পক্ষের দাবি ষোলো আনাই অন্তঃসারশূন্য; এর কারণও স্পষ্ট।
কী সেই কারণ? ব্যাখ্যায় যাওয়ার আগে পুরুষের কর্তৃত্বপরায়ণতা, মানসিক বিকার ও সামাজিক অবস্থান নিয়ে আলোচনা করা যাক। ইতিহাস-রাজনীতিসচেতন নৃতত্ত্ববিদরা বলবেন, পৃথিবীর ইতিহাসে সংঘটিত যত যুদ্ধ, হত্যা, রক্তক্ষয় ও নৃশংস সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটেছে, তার বেশিরভাগই পুরুষের সৃষ্টি। নারী যেকোনো ধরনের হানাহানির বিপক্ষে ছিল। কিন্তু পেশীশক্তিতে তুলনামূলকভাবে নারী দুর্বল থাকায় পুরুষ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে সহজে। তবে, সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পুরুষের তুলনায় নারী দ্রুত সভ্য হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের প্রিন্স হেনরি ইনস্টিটিউটের গবেষকদের মতে, পুরুষের অসভ্য আচরণের জন্য দায়ী ‘এসআরওয়াই’ নামের এক ধরনের জিন। যার অস্তিত্ব কেবল ‘ওয়াই’ ক্রোমোজোমেই রয়েছে। এ কারণে সভ্যতার ভিত্তিপ্রস্তরে যে কৃষির অবদান, সেই কৃষির গোড়াপত্তন করেছিল যে নারী, সেই নারীকে কেবল পেশীশক্তির দাপটেই পুরুষরা দমিয়ে রেখেছে। একইভাবে সম্পদও করায়ত্ত করে নিয়েছে এই পুরুষরা।
পেশীশক্তি-সম্পদ যার করায়ত্ত, তার পক্ষে অত্যাচারী হয়ে ওঠা সহজ। হয়ে ওঠা সম্ভব ক্ষমতাবান। সেই ক্ষমতা অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, সামাজিক ও রাজনৈতিক। বাস্তবেও তাই ঘটেছে। একদা যে সমাজ ছিল মাতৃতান্ত্রিক, কালক্রমে সেই সমাজেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে পুরুষতন্ত্র। কেবল নিজেদের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে থেমে যায়নি পুরুষ, ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে আগ্রাসী। এই ক্ষমতাবান হয়ে ওঠার পেছনে ব্যবহার করেছে চাতুর্যের পাশাপাশি নিজেদের তৈরি নৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক নীতিমালা। এর ফলে সমাজ চলেছে তাদের তৈরি নিয়ম-কানুনেই। সেখানে বাইরের কোনো শক্তি এসে ভাঙন ধরাতে পারেনি। ধারণা করা যায়, পুরুষরা নিজেদের মধ্যে যুগে-যুগে নানা কারণে কলহে লিপ্ত হলেও নারীর ওপর কর্তৃত্ব আরোপের ক্ষেত্রে সর্বযুগে, সর্বদেশে, সর্বসমাজে ছিল একাট্টা। এখনো আছে। এই একাট্টার সুযোগে অন্যান্য সম্পদের পাশাপাশি নারীকেও তারা পণ্য-সম্পদ মনে করা শুরু করে। এই মনোভাবের কারণে নারীর নিজস্ব অভিমত প্রকাশ ও জীবনযাপনের পথে নানামুখী বিধি-নিষেধের দেয়াল তোলে তারা। নারীকে স্ব-স্ব মর্জিমতো চলার সুযোগ দেয় না। এই তথাকথিত ‘সভ্য সময়ে’ও নারীকে চলতে হয় কর্তৃত্বপরায়ণ পুরুষের তৈরি নিয়মে। আর কতিপয় বিকৃত পুরুষ তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য দেখায় পেশীশক্তি ও শৌর্যবীর্যের ক্ষমতা। সেই শৌর্যবীর্যের ক্ষমতা দেখায় যৌন-লালসা চরিতার্থ করার জন্য ধর্ষণে লিপ্ত হয়ে।
যৌনবিজ্ঞানী ও সাধারণ শারীরিকভাবে সক্ষম ব্যক্তি মাত্রই স্বীকার করবেন, ধর্ষণে যৌনসুখ ধর্ষক পায় না। প্রকৃতপক্ষে বিকৃত পুরুষ ধর্ষণে লিপ্ত হয় যৌনসুখের জন্য নয়, তার ক্রোধ, প্রতিহিংসাপরায়ণতা দেখানোসহ লালসা চরিতার্থ করতে। তাই ক্রোধান্ধ ধর্ষকদের কেবলই আইন করে দমানো পুরোপুরি সম্ভব নয়। সমাজ থেকে ধর্ষণ দূর করতে হলে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক. যৌনবিষয়ে পারিবারিক শিক্ষা, দুই. প্রাথমিক শিক্ষাঙ্গন থেকেই যৌনসচেতনতামূলক পাঠ যুক্ত করা, তিন. ছেলে শিশু, মেয়ে শিশুর অভিভাবক ও নারীর ব্যক্তিগত সচেতনতা, চার. সামাজিক আন্দোলন এবং পাঁচ. আইনের পাশাপাশি গণসচেতনতামূলক প্রচারণা।
এই কথা অনস্বীকার্য যে, পরিবারই হচ্ছে শিশুর প্রথম পাঠশালা। তাই যেকোনো শিক্ষার শুরু পরিবার থেকে হলে তার ভিত্তি মজবুত হয়। তার মানসগঠনে সেই শিক্ষা প্রতিফলিত হয় সবচেয়ে বেশি কার্যকরভাবে। তাই শিশুকে যৌনবিষয়ে বয়সভিত্তিক ধারণা দিতে পরিবারের অগ্রজদের দায়িত্ব নিতে হবে। যৌনতার গুরুত্ব, ভালো-মন্দ দিক, এর পাত্র-পাত্রীর বয়স ও সময় সম্পর্কে শৈশব থেকে সচেতন করে তুলতে হবে। যেভাবে পাপ-পুণ্য-ধর্মীয়-নৈতিক জ্ঞানসহ অন্যান্য শিক্ষা পরিবার থেকে দেওয়া হয়, যেভাবে যৌনশিক্ষাও দিতে হবে।
তবে যত সহজে শিশুকে যৌনশিক্ষা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে, বিষয়টি তত সহজ নয়। এজন্য পরিবারের সদস্যদের হতে হবে সংবেদনশীল, আন্তরিক ও সতর্ক। একটুখানি অসতর্কতা বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। বিপথে ধাবিত করতে পারে শিশুকে। তাই যৌনবিষয়ে ধারণা দেওয়ার জন্য পরিবারের সদস্যদের বয়স, শিশুর সঙ্গে তার সম্পর্কের ধরন বিবেচনা করতে হবে আগে। এক্ষেত্রে পরিবারের বয়স্ক-প্রবীণ সদস্যদের দায়িত্ব নিতে হবে। তারা নিজেদের অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা ও উপস্থিতকালের বাস্তবতার আলোকে শেখাবেন। এই শিখনপদ্ধতি যেন সাধারণ আর দশটি বিষয়ের মতো না হয়, এতে যেন সর্বোচ্চ সতর্কতায় ন্যায়-অন্যায়-নৈতিকতা সম্পর্কে শিশুমনে ধারণা জন্মে।
পরিবারের পর শিশুর প্রথম প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষালাভের স্থান প্রাথমিক বিদ্যালয়। তাই পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও যথাযথ গুরুত্বের সঙ্গে শেখাতে হবে। পাঠ্য বইয়ে যৌনতা, নারী-পুরুষ সম্পর্কের ধারণা সংবলিত পাঠ যুক্ত করতে হবে। এই পাঠে যৌনতার ব্যবহার, এর ফল, নারী-পুরুষের সম্পর্কের ধরন, নারীর প্রতি সম্মানবোধের বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে হবে শিশুমনের উপযোগী ভাষায়। তবে, তা যেন রগরগে হয়ে না পড়ে। এতে যেন ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার মতো ভাবগাম্ভীর্য বজায় থাকে।
পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের যৌনশিক্ষা দেওয়ার সময় তাদের বয়ঃসন্ধিকালকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এই সময় তাদের সঠিক নিরাপদ উপায়ে শারীরিক-মানসিক পরিবর্তন, জৈবিক চাহিদা সম্পর্কে বোঝাতে হবে। সন্তান জন্মের পদ্ধতি, কারণ ও উপায় সম্পর্কে বোঝাতে হবে। পাশাপাশি যৌনসম্পর্কের উপযুক্ত বয়স, শারীরিক ও আর্থিক যোগ্যতা, সামাজিক ও নৈতিক বিধি-নিষেধ সম্পর্কেও দিতে হবে ধারণা। যেন তারা যৌনতার উপযুক্ত সময়, আত্মসংযম ও আত্মমর্যাদার বিষয়ে সহজে শিখতে পারে। স্বাভাবিক যৌনমিলনের সুফল ও ধর্ষণের কুফল সম্পর্কে তাদের সার্বিক ধারণা দিতে হবে। একইসঙ্গে ধর্ষণের শাস্তি বিষয়ে শৈশব থেকেই সচেতন করে তুলতে হবে। পাঠক্রম তৈরিতে যৌন-মনোবিদ ও অপরাধবিজ্ঞানীদের সহায়তা নিলে বিষয়টি দ্রুত ও বেশি কার্যকর করে তোলা সম্ভব।
উল্লিখিত দুটি বিষয় শিশুর মানসগঠনের জন্য। এই দুটি ধাপ ধর্ষণ প্রতিরোধে ততটা কার্যকর নাও হতে পারে। এজন্য ধর্ষণ প্রতিরোধে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে সবার আগে দরকার নারীর ব্যক্তিগত সচেতনতা। নারীকে সচেতন হতে হবে সম্পর্ক তৈরিতে। কেবল হৃদয়াবেগ কিংবা অন্ধবিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে তারা যেন কারও সঙ্গে সম্পর্কে না জড়ায়। প্রশ্ন উঠতে পারে, ধর্ষণের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার যোগসূত্র কী? উত্তরের জন্য খুব বেশি গবেষণার প্রয়োজন নেই। ধর্ষণের ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে। পূর্বপরিচিত কিংবা প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে যত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, অতর্কিত হামলা চালিয়ে তুলে নিয়ে, চলন্ত বাসে কিংবা নির্জন স্থানে অপরিচিত লোকের মাধ্যমে তত ঘটেনি। অর্থাৎ ধর্ষকরা সাধারণত পূর্বপরিচিত হয়। অপরিচিতের সংখ্যা খুবই কম। সেখানে সাধারণত ধর্ষক পূর্বপ্রস্তুতি নিয়ে পরিকল্পিতভাবে অগ্রসর হয়, কিন্তু ভুক্তভোগী বিষয়টি আগে থেকে টের পায় না। তার টের পাওয়ার সুযোগ থাকে না। এই ধরনের ধর্ষকদের টার্গেট থাকে ছেলে শিশু, মেয়ে শিশু কিংবা চলন্ত বাস বা নির্জন স্থানে একলা চলা কোনো নারী। এই ধরনের ঘটনা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য স্থান ও সময় অনুযায়ী অভিভাবক ও নারীকে সতর্ক থাকতে হবে। কোন পথে কোন সময়ে কোন বাহনে নারী চলাচল করবে, কেন করবে; এসব বিষয়ে তার সচেতনতাই ৯০ ভাগ বিপদ থেকে বাঁচাতে পারে।
মেয়ে শিশু হোক কিংবা ছেলে শিশু—তাদের গতিবিধি ও মেলামেশার ওপর অভিভাবকদের সতর্ক নজরদারি থাকা জরুরি। ছেলে শিশু কিংবা মেয়ে শিশুর প্রতি আত্মীয়-অনাত্মীয় যেকোনো বয়সী পুরুষের দৃষ্টি কেমন, দেখা হওয়া মাত্র আচরণ কেমন—এসব বিষয়ে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। বিশেষ করে স্পর্শজনিত আচরণের বিষয়ে কড় নজরদারি দরকার। একটুখানি অসচেতনতা, অসতর্কতা সারাজীবনের গ্লানি হয়ে উঠতে পারে।
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অপরাধপ্রবণতা রাতারাতি বন্ধ করা যায় না। আইন করেও না। কারণ আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার যেমন অভিযোগকারীর থাকে, তেমনি থাকে অভিযুক্তেরও। সেখানে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে সন্দেহাতীতভাবে অভিযোগ প্রমাণিত না হলে অপরাধের শাস্তি নিশ্চিত করা সবসময় সম্ভব হয় না। বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা, সাক্ষীর অভাব, প্রভাবশালীদের ভূমিকাসহ নানা কারণে ধর্ষণের ঘটনায় অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। ফলে ধর্ষণ ঠেকাতে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এই আন্দোলনের মূলমন্ত্র হবে, মেয়ে-ছেলে শিশু কিংবা নারী যেভাবেই থাকুক, তার চলার পথ কণ্টকাকীর্ণ করা যাবে না। নারীর পোশাক, চলাফেরাকে দোষারোপ না করে পরিবর্তন করতে হবে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি। তাকে মানতে হবে, প্রত্যেক মানুষ তার পারিবারিক-আর্থ-সামাজিক অবস্থান থেকে জীবনযাপনের পদ্ধতি বেছে নেয়। ব্যক্তির জীবনচলার পথ নিজের সঙ্গতি, রুচি, মর্জিমাফিক হয়। সেখানে পুরুষ যদি আপনার ইচ্ছায় চলতে পারে, নারীও পাবে সেই অধিকার ভোগ করার শতভাগ সুযোগ। সেই সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো শর্তারোপ করা যাবে না। যখন নারী-পুরুষ সবাই এই বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে উপলব্ধি করতে পারবে, তখন হয়তো ধর্ষণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হবে না, কিন্তু অনেকাংশেই কমতে থাকবে।
অপরাধবিজ্ঞানী, বিচারপ্রার্থীরা দীর্ঘদিন ধরেই ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে ধর্ষণের শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান করে অধ্যাদেশ জারিরে মাধ্যমে তাদের সেই দাবি পূরণও করেছে সরকার। এখন প্রশ্ন হলো, শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হলেই কি ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে? বিকারগ্রস্ত ও অপরাধপ্রবণ মানুষের প্রবৃত্তিতে পরিবর্তন ঘটে যাবে? না। গুটিকয়েক অপরাধপ্রবণ ব্যক্তি হয়তো ধর্ষণের আগে চিন্তা করবে কিংবা ভয় পাবে। বেশিরভাগই অন্য দশটি অপরাধের মতোই তাদের প্রবৃত্তির দাসত্ব করবে। হত্যার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড তো আগে থেকেই আছে। এরপরও তো হত্যাকাণ্ড ঘটে চলেছে। ধর্ষণের ক্ষেত্রেও তার ব্যত্যয় খুব কম হবে। তাই ধর্ষণ ঠেকাতে আইনের কঠোর প্রয়োগের পাশাপাশি দরকার গণসচেতনতামূলক প্রচারণা। কেমন সেই প্রচারণা?
আমরা নিশ্চয় ভুলে যাইনি—তিন দশক আগেও দেশে একেক দম্পতির ৬/৭টি করে সন্তান হতো। তারা অপরিকল্পিতভাবে সন্তান জন্ম দিতো। উচ্চশিক্ষিত কিছু দম্পতি ছিল ব্যতিক্রম। বর্তমানে সেই পরিস্থিতি আর নেই। এখন ধনী-দরিদ্র, শিক্ষিত-অশিক্ষিত নির্বিশেষে বেশিরভাগ দম্পতিই দুই সন্তানের বেশি নেয় না। এই সচেতনতা একদিনে আসেনি। এসেছে পরিবার পরিকল্পনাকর্মীদের নিরন্তর প্রচারণার ফলে। তারা বছরের পর গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে দ্বারে-দ্বারে ঘুরে-ঘুরে মানুষকে পরিকল্পিত পরিবারের গুরুত্ব বুঝিয়েছেন। মানবসন্তানকে কিভাবে বোঝা নয়, সম্পদের পরিণত করতে হয় তা বুঝিয়েছেন। এ-ও বুঝিয়েছেন, এক-দুই সন্তানকে কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করা সহজ হয়, তাও। যুগের পর যুগ ধরে পরিবার পরিকল্পনাকর্মীদের শ্রমে-ঘামে গ্রামে-শহরে সচেতন হয়েছেন স্বামী-স্ত্রী। গড়ে তুলেছেন পরিকল্পিত পরিবার।
এই কথাগুলো বলার একটাই উদ্দেশ্য। তাহলো, ধর্ষণ বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে ব্যাপকহারে প্রচারণা চালাতে। এই প্রচারণায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে পারেন ঈমাম-পুরোহিত-যাজক, শিক্ষক, জনপ্রতিনিধি, পরিবার পরিকল্পনাকর্মী, স্থানীয় সরকার ও প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংস্কৃতিক-এনজিওকর্মীরা। তারা মানুষের দ্বারে-দ্বারে ঘুরে-ঘুরে ধর্ষণবিরোধী মনোভাব গড়ে তুলবেন। ধর্মীয় উপাসনালয়ে, সভা-সেমিনার, শ্রেণিকক্ষে ধর্ষণের কুফল ও শাস্তি সম্পর্কে বোঝাবেন। তারা স্ব-স্ব অবস্থান থেকে ধর্মীয়-নৈতিক-সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তি তুলে ধরবেন। সমাজের সব স্তরের সচেতন, মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী মানুষের সমন্বিত উদ্যোগেই ধর্ষণ প্রতিরোধ সম্ভব। অসম্ভব ধর্ষণকে চিরতরে সমাজ থেকে বিদায় জানানোও। তবে, এর জন্য চাই সরকারি-বেসরকারি, ব্যক্তি উদ্যোগে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। একইসঙ্গে দরকার সচেতনতামূলক প্রচারণাও।
লেখক: কবি ও সাংবাদিক।