• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
বিষাদ কাব্য

কালান্তরের সন্ধি বিচ্ছেদ ‘টাইটান’


ওমর ফারুক শামীম
প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০২৩, ০৪:৪৫ পিএম
কালান্তরের সন্ধি বিচ্ছেদ ‘টাইটান’

আটলান্টিকের শীতল জলের তলদেশে ১৯১২ সাল থেকে সগর্বে বসে আছে ‘টাইটানিক’। যেটির সঙ্গে আজও এক অদৃশ্য মোহ আটকে আছে মানুষের। তাই টাইটানিক ঘিরে এখনো নানা কৌতূহল আর স্বপ্ন থেকে গেছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মনে মনে। টাইটানিকের সৃষ্টি, ভ্রমণ ও নিমজ্জনের কাহিনি ঘিরেও রয়েছে হাজারো গল্প। যেসব গল্প রূপকথাকেও হার মানায়। সে জন্যই সাগরতলের টাইটানিক এবং ওপরের মানুষের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক স্থাপনের নাম হয়েছে ‘টাইটান’। যেন শতাব্দীর উদরে ধীরে ধীরে জন্মেছিল এই টাইটান। টাইটানিকের সঙ্গে মানুষের নতুন যোগাযোগে টাইটান শুরু করেছিল তার নিয়মিত অভিযাত্রা। বেশ কয়েকবার সফলও হয়েছে। উত্তর আটলান্টিকের সাড়ে ১২ হাজার ফুট গভীরে গিয়ে মানুষ দেখে এসেছে ১৯১২ সালের টাইটানিক ২০২৩ সালে কেমন আছে। গত রোববার শেষ অভিযাত্রায় সাগরতলে জলের প্রবল চাপে টাইটানিকের কাছেই বিস্ফোরণে ধ্বংস হয় ডুবোযান টাইটান।পরে জানা যায় ওই বিস্ফোরণে ডুবোজাহাজের আরোহীদের কেউই বেঁচে নেই। ইতিহাসের গল্পে ফের সমার্থক হয়ে যায় টাইটানিক আর টাইটান।

১৯১২ সালের ১৫ এপ্রিল পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আর বিলাসবহুল টাইটানিক জাহাজটি আইসবার্গে ধাক্কা খেয়ে দুর্ঘটনায় পতিত হয়। সলিলসমাধি হয় ভ্রমণে যাওয়া দেড় হাজার মানুষের। সেদিন উত্তর মেরু থেকে দক্ষিণ মেরু পর্যন্ত গর্বের ওই টাইটানিক ও এর আরোহীদের জন্য কেঁদেছিল পৃথিবীর মানুষ। এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর টাইটানের জন্যও ফের একইভাবে কাঁদল পৃথিবী। টাইটানকে হারানোর ঘটনাটি স্বজন হারানোর বুকমোচড়ানো ব্যথা নয়, এটি কালান্তরের বন্ধন ছিঁড়ে যাওয়ার মতো এক বড় সন্ধি বিচ্ছেদ। যে জন্য আরও একবার বেদনায় নীল হয়েছে পৃথিবীর সব জল।

সময়ের সঙ্গে বেদনার এই শোক কাটিয়ে উঠব আমরা। তারপরও টাইটানিকের কাছে যাবে মানুষ। যেখানে ঘুমিয়ে আছে লাইফ জ্যাকেট খুলে প্রবীণ দম্পতির বুক জড়িয়ে মৃত্যুকে বরণ করার গল্প। যেখানে আছে প্রিয় সঙ্গীকে বাঁচাতে না পারার করুণ আর্তনাদ। বেদনার যে নীল জলে আজও ভাসছে প্রেমিকার গায়ের গন্ধ।

আমরা আশাবাদী বিজ্ঞান বিকাশের অগ্রদূতেরা আগামীর জন্য আরও বেশি শক্তিশালী ডুবোযান তৈরি করবেন। আমরা তখন অনায়াসে বিচরণ করব সাগরতলে। এই পদক্ষেপ নিতেই হবে, কারণ পৃথিবীর বিরাট এক ঐশ্বর্যের মোহ বসে আছে সাগরতলে। এ ছাড়া রয়েছে মানবসভ্যতা টিকিয়ে রাখার আরও নানা প্রয়োজন।

বিজ্ঞানীরা বলেন, সাগর-মহাসাগরের তলদেশে রয়েছে অনেক সম্পদ। যা স্থলভাগে বাস করা মানবজাতির ভবিষ্যতের জন্য অনেক প্রয়োজন। আকাশ-মহাকাশ ভেদ করে গ্রহ-নক্ষত্র ঘুরে আসা মানুষ মহাসাগরের তলদেশেও একদিন সফল হবে, এটিই আমার বিশ্বাস। পরিশেষে আত্মার শান্তি কামনা করছি টাইটানের অভিযাত্রী সুলেমান দাউদ, শাহজাদা দাউদ, স্টকটন রাশ, পল-হেনরি নারগোলেট, হ্যামিশ হার্ডিংসহ টাইটানিক দুর্ঘটনায় প্রয়াতদের জন্য।

 

লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

Link copied!