• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

কোচ তো বদল হলো, ক্রিকেটার লাগবে না?


মানজুর মোরশেদ
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২২, ০৮:০৫ পিএম
কোচ তো বদল হলো, ক্রিকেটার লাগবে না?

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট যেন মরুভূমির মরীচিকা, অন্তত বাংলাদেশের জন্য। কি দারুণ শুরু ছিল সেই ২০০৬/০৭ সালে শুরুর দিনগুলোতে! প্রথম চার ম্যাচের তিনটিতেই জয়! এরমধ্যে আফতাব-আশরাফুলের অসাধারণ দু’টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৬ উইকেটের জয় ছিল ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে, হট ফেবারিট ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেই দিনগুলোতে এদেশের ক্রিকেট সমাজের অনেককেই বলতে শুনেছি- ‘ফরম্যাট যত ছোট হবে বাংলাদেশের জন্য ততই সুবিধা’। 

আসলে ঐ ওয়ানডে মানসিকতায় আধার খোঁজা স্বভাব, তবে পাশা উল্টাতে সময় লাগেনি! পরের ১২ ম্যাচে টানা হারে প্রকাশ পায় টাইগারদের টি-টোয়েন্টি দীনতা! সাকিবের আবির্ভাবও সেই কালে, আইপিএলও খেলেছেন তিনি; তবে গত ১৬ বছরে তিনি টি-টোয়েন্টিতে অন্তত টাইগারদের দিকনির্দেশক হতে পারেননি! অর্থাৎ এই ফরম্যাটে স্বভাবজাত টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার, সেই উৎপল আজও পায়নি বাংলাদেশ- যে একাই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। বল হাতে মোস্তাফিজ ২০১৬ আইপিএলে ১৬ ম্যাচে ১৭ উইকেট নিয়ে নজর কেড়েছিলেন, হয়েছিলেন এমার্জিং প্লেয়ার অব দ্যা সিজন। তাঁর দল সানরাইজার্স হায়দ্রবাদকে চ্যাম্পিয়ন করতেও রেখেছিলেন বিশেষ ভূমিকা। সেই কাটার মাস্টারও দিনে দিনে নির্বিষ হয়েছেন, কখনও কখনও হয়েছেন পরাজয়ের কারণ। যার ফল বাংলাদেশ যেন এই ফরম্যাটের জলঢোঁড়া, যে আসলে নির্বিষ!

আইপিএল, বিগব্যাশ, পিএসএল সহ অন্যান্য ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ যেখানে কালে-কালে কলেবরে, মানে টাকা-কড়িতে বড় হয়েছে, সেখানে বিপিএল যেন বার্ষিক পিকনিক! একরকম করে সেরে ফেললেই হলো। প্রতিটা বিশ্ব টি-টোয়েন্টির আসরে ভরাডুবির পর ঘুম ভাঙ্গানিয়া গান গেয়েছেন বিসিবির দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা, কিন্তু সেই গান এত বেসুরো ছিল- তাতে ঘুম আর ভাঙ্গেনি।গত বছর অক্টোবরে আমিরাতের মাটিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দল যখন চরমভাবে ব্যর্থ হলো, তখন বিসিবি সভাপতি বলেছিলেন- তিন ফরম্যাটে তিনটি আলাদা দল থাকবে, প্রচুর ক্রিকেটার লাগবে তাঁর! কিন্তু যোগান আসবে কোত্থেকে? পাইপলাইনে থাকলে তো আসবে! ৯ মাস পরও তাই হা আর হুতাশ! ঐ তথাকথিত বুড়োদের নিয়েই টানাটানি, তামিম অবসর নেয়ায় ‘মেক শিফট ওপেনার’ খুঁজতে হয়রান ম্যানেজমেন্ট। ভারত গত কয়েক মাসে ৭/৮ জনকে ওপেনিং পজিশনে খেলিয়ে এখন শ্যাম রাখি না কুল রাখি মধুর সঙ্কটে! রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, মায়াঙ্ক আগারওয়াল, ঈষান কিষান, শিখর ধাওয়ান, শুভমান গিল- যেই খেলছেন সেই চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন আরেকজনকে। অথচ তারাও ব্যর্থ হয়েছিল সবশেষ আসরে! মনে পড়ছে গত আসরে ভারতীয় দলে সুযোগ না পেয়ে রবীচন্দ্রন অশ্বিনের মত অলরাউন্ডারও নির্বাক হয়ে গিয়েছিলেন, টুইটারে উদ্ধৃতি লিখেছিলেন-‘প্রতিটি সুড়ঙ্গের শেষে আলো থাকে, আর এটি যারা বিশ্বাস করে সেটি তারাই কেবল দেখতে পায়’! আসলে সেটি দেখার জন্যও তো হৃদয় লাগে, বুঝবার ক্ষমতাও লাগে। বাংলাদেশের ক্রিকেট প্রশাসকরা এমন একটি আবহ তৈরি করতে পারেননি, যেখানে আর্ন্তজাতিক মানে এদেশের কোন প্রতিথযশা ক্রিকেটার নিজে সুযোগ না পেয়ে সামাজিক মাধ্যমে এমন একটি অবস্থান প্রকাশ করতে পারে!

পর্যাপ্ত ক্রিকেটার নেই, আর তাই ঐ রাম-শ্যামই ভরসা! ব্যর্থতার খোলস ছাড়তে- এখন কোচিং স্টাফে বদল এনে দেখতে চাইছে বিসিবি। ভারতীয় কোচ শ্রীধরণ শ্রীরামকে আনা হচ্ছে, তাঁর পজিশন ‘টেকনিক্যাল কনস্যালটান্ট’; এখন দেখতে হবে এশিয়া কাপে হেড কোচ হিসেবে কে যায়? এরজন্য ২২ আগস্ট পর্যন্ত সময় নিচ্ছেন বিসিবি সভাপতি। যেভাবে মুশফিকুর রহিম আর মেহেদী মিরাজকে মেক শিফট ওপেনার বানানোর টিপস দিয়ে যাচ্ছেন জেমি সিডন্স, তাতে তিনিই আবার মেক শিফট হেড কোচ বনে যান কিনা সেই গুঞ্জন প্রবল! নাকি আবার ছুটি থেকে ফিরে রাসেল ডোমিঙ্গো সব সমীকরণ নিজের দিকে নিয়ে যাবেন? দল এখন তিন ফরম্যাটেই খারাপ করছে- এ এক অস্থির সময় বাংলাদেশ দলের জন্য। মাঠ ও মাঠের বাইরে কোন কিছুই আর সাজানো-গোছানো নেই। ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে সম্প্রতি টিম ডিরেক্টর খালেদ মাহমুদের অভিব্যক্তি- ‘ওখানে যে কোন পজিশনে যে কাউকে খেলতে হবে’! আসলে ঐ ব্যাটিং অর্ডারের মত বাংলাদেশ ক্রিকেটেও হ-য-ব-র-ল চলছে; এখানে কে যে কী ভূমিকায়, কী তাঁর কাজ- তা কেউ জানে না!

শেষ করবো কপিল দেবকে স্মরণে এনে! ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক সম্প্রতি ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ নিয়ে যা বলেছেন তা শিরোধার্য। তিনি বলছেন ক্রিকেট আসলে একদিন ইউরোপীয় ফুটবল পরিকাঠামোর মত হয়ে যাবে, ঐ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ওপর ভর করে। ক্রিকেটের আকাশে এই টি-টোয়েন্টি বস্তুত রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের বাস্তবতা, যা অবিশ্বাস্য তবে উপেক্ষা করার মত অবস্থায় নেই ক্রিকেট বিশ্ব! এর জৌলুশ নেই ঠিক আছে, তবে আছে সর্বগ্রাসী রূপ। যে রূপের সাগরে দারুণ নৌকা বাইছে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যোগ দিচ্ছে পাকিস্তান-দক্ষিণ আফ্রিকা-আরব আমিরাতও। বাংলাদেশ পরিকল্পনাহীন, একবাক্যে! টি-টোয়েন্টির সংস্কৃতি ও বিন্যাস নিয়ে না ভাবলে নিরুদ্যম এক দল হয়েই থাকবে বাংলাদেশ। যার প্রভাব পড়বে বাকি দুই ফরম্যাটেও।

 

লেখক: বিশেষ প্রতিনিধি, যমুনা টেলিভিশন

Link copied!