টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মাদকতায় ডুব দেওয়ার কত অনুষঙ্গ আর উপকরণ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে সিডনিজুড়ে। বড় বড় ব্যানার আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে। সেন্ট্রাল রেলস্টেশন থেকে সিডনি হারবার, অপেরা হাউস—সব জায়গায় বিশ্বকাপের আহ্বান। কিন্তু সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের কাছাকাছি যেতেই অন্য রকম এক শিহরণ জাগতে বাধ্য আপনার শরীরে। যদি আপনি বিশ্বকাপ নয়, ক্রিকেট ভালোবাসেন।
কী নেই এখানে! শত বছরের পুরোনো ঐতিহ্যের প্যাভিলিয়নের দিকে যাওয়ার আগে একদিকে দাঁড়িয়ে রিচি বেনো। অন্যদিকে স্টিভ ওয়াহ। আরেক গেটের পাশে স্যার ডনের ত্রিশ দশকের টিমের অন্যতম সেরা ব্যাটার স্টান ম্যাককাবে। ১৯৩০ থেকে ১৯৩৮ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ৩৯ টেস্ট খেলেছেন। উইজডেন যাকে অস্ট্রেলিয়ার অন্যতম সেরা ব্যাটারের স্বীকৃতি দেয়।
আর রিচি বেনো! তার সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। এই লেগ স্পিনার অলরাউন্ডার খেলা ছাড়ার পর নতুন এক সভ্যতার জন্ম দেন ক্রিকেট ধারাভাষ্যে। কিন্তু স্টিভেন রজার্স ওয়াহ? অস্ট্রেলিয়ার সর্বকালের অন্যতম সফল অধিনায়ক। যিনি অস্ট্রেলিয়াকে বিশ্বকাপ এনে দিয়েছেন ’৯৯ সালে। টানা ১৬টি টেস্ট জিতিয়েছেন। ১৬৮ টেস্ট খেলা স্টিভ তার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলেছিলেন নিজের মাঠ এসসিজিতে। যে টেস্ট দেখতে মাঠে বসেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার, সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী জন হাওয়ার্ড। ৮০ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ এবং সিরিজ দুটোই বাঁচিয়েছিলেন স্টিভ। এই এসসিজিতেই অস্তরাগের ছটায় কী উজ্জ্বল বিদায় ছিল স্টিভের।
এই এসসিজিতেই ক্লাইভ লয়েড তাঁর জীবনের শেষ টেস্ট খেলেছিলেন। সিডনির উইকেটের টার্নারে হার দিয়ে শেষ হয়েছিল লয়েডের ক্যারিয়ার! যিনি নিজের হাতেই ওয়েস্ট ইন্ডিজকে গড়ে তুলেছিলেন অপ্রতিরোধ্য হিসেবে। ব্রায়ান লারা এই সিডনিতেই খেলেছিলেন তার ২৭৭ রানের ক্ল্যাসিক্যাল ইনিংস।
সেই এসসিজিতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম সেমিফাইনাল। পাকিস্তান মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ডের। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপ ভেন্যুগুলোর মধ্যে একমাত্র এসসিজিতে ড্রপইন পিচ নয়। ক্রিকেট ইতিহাসের ছাত্রদের জানা এই উইকেটটা তুলনামূলক একটু স্লো। অস্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ক্রিকেট সাংবাদিক ম্যালকম কন সিডনি প্রেসবক্সে বসে জানালেন, পাকিস্তানের ব্যাটারদের জন্য আদর্শ উইকেট এটা। তাহলে কি পাকিস্তান এই সেমিফাইনালে ফেবারিট? অস্ট্রেলিয়ার নামী এবং অভিজ্ঞ এই ক্রিকেট সাংবাদিককের জবাব, “ওটা ভাবলে বড় ভুল করবে পাকিস্তান।” নিউজিল্যান্ড দারুণ ভারসাম্যপূর্ণ দল। দারুণ ক্রিকেট খেলছে। ওদের মধ্যে কাপ জয়ের খিদেও বেশি দেখছি। নিজেদের মাটিতে মাসখানেক আগে পাকিস্তানের কাছে তিন জাতি টুর্নামেন্ট হেরেছে। নিউজিল্যান্ডারদের স্মৃতি অতটা দুর্বল নয়। ওরা মরণ কামড় দিতে চাইবে মেলবোর্নে ফাইনাল খেলার জন্য।
সেমিফাইনাল এসসিজিতে। দুই দলই বাড়তি অনুপ্রেরণা পাচ্ছে। এখানেই নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার সামনে ২০১ রানের টার্গেট দিয়ে ৮৯ রানে ম্যাচটা জিতেছিল কেন উইলিয়ামসের নিউজিল্যান্ড। পাকিস্তান এখানে হারাল সাউথ আফ্রিকাকে। দূর থেকে দাঁড়িয়ে নিউল্যান্ডের প্র্যাকটিস দেখতে দেখতে সাউথ আফ্রিকার সাবেক পেসার ডেল স্টেন বললেন, “খেলাটা রাতের আলোয়। তারপর এখানে কুয়াশা বড় ফ্যাক্টর হবে না।”
কিন্তু টস? টস জিতলে যেকোনো দলই আগে ব্যাট করে নিতে চাইবে। সিডনিতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে এবার। সে কারণে উইকেট আরও একটু স্লো। উইকেট যা-ই হোক, টি-টোয়েন্টিকে ঘিরে ক্রিকেট মেলার আয়োজন কিন্তু জমজমাট মনে হচ্ছে ক্রিকেট ইতিহাসের এই পীঠস্থানে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট