• ঢাকা
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সাকিব : সাফল্য ও সমালোচনার প্রতীক


মানজুর মোরশেদ
প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৩, ১০:৩০ এএম
সাকিব : সাফল্য ও সমালোচনার প্রতীক

তিনি অবশেষে গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি অর্জন করলেন। বিষয় বিবিএ। যেদিন ডিগ্রিটা অর্জন করলেন, ঠিক তার পরদিন হলেন বাংলাদেশ বিমানের শুভেচ্ছাদূত। তার ক্রিকেটীয় মেধা অতুলনীয়, কিন্তু ব্যবসায়ী হিসেবে দূষণীয়! শেয়ার, হোটেল, কাঁকড়া, কসমেটিকস, স্বর্ণ—যে ব্যবসায়ই নেমেছেন, সেখানেই ফেল মেরেছেন, বিতর্কিত হয়েছেন! সবচেয়ে বড় কথা, ব্যবসার রীতিনীতি লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। তবে তিনি কতটুকু দায়ী, সেটি অবশ্য তদন্তসাপেক্ষ বিষয়। লোকে বলে সফল মানুষের নাকি শত্রুর অভাব হয় না! তবে এবার তিনি সম্মান ডিগ্রি অর্জন করেছেন, এবার দেখা যাক ব্যবসা ও পণ্য ব্র্যান্ডিংয়ে যেভাবে তার সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছে এত দিন, সেটি তিনি রুখতে পারেন কি না!

তিনি সিলেটে ওয়ানডে সিরিজ খেলছেন। এর মাঝেই একবার ঢাকায় এসে ডিগ্রি নিয়ে গেলেন প্রথম ওয়ানডের পর, আর দ্বিতীয়বার আসছেন দ্বিতীয় ওয়ানডের পর বিমানের শুভেচ্ছাদূত হতে। তো এই যে খেলার মাঝে ব্র্যান্ডিংয়ের কাজে তিনি বের হন, তাতে ক্রিকেট সাংবাদিকদের ঝামেলা একটু বাড়ে বৈকি! কোথায় গেলেন, কোথায় যাচ্ছেন, সেই খবর রাখতে হয় আরকি। নিঃসন্দেহে সাকিব দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটার, কিন্তু তার দলের বাকি আর কাউকে এভাবে সিরিজের মধ্যে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা যায় না! সাকিব মানেই যেন আলোচনা অথবা সমালোচনা। মাঠের সাফল্য ছাড়া তাকে ঘিরে ইতিবাচক আলোচনা খুব কমই হয়! তবে এর মাঝেই তার যে বিশাল ফ্যানবেজ রয়েছে, তারা আবার সাকিবের সব কাজকেই সমর্থন করে যান! তারকাখ্যাতির সুফল সর্বাংশে কাজে লাগান তিনি।

যারা ব্যক্তি সাকিবকে চেনেন, তারা জানেন মানসিকভাবে কতটা শক্তিশালী তিনি। বাইরের কোনো কিছুরই প্রভাব তার কাজেকর্মে টের পাওয়া কঠিন। একদিন সমালোচিত হবেন, তো পরদিনই সাফল্যে উদ্ভাসিত! মানে আলোচনায় তিনি থাকবেনই থাকবেন। স্পোর্টস সাইকোলজি বলে, একজন স্পোর্টসম্যান বা উইম্যানের সাফল্যের পেছনে কাজ করে চিন্তা, আবেগ ও শারীরিক সাড়ার মিথস্ক্রিয়া। তবে এটা নাকি একেকজনের জন্য একেক রকম হয় ফোকাসের কারণে। আর এখানেই ব্যক্তি চরিত্র হয়ে ওঠে নিয়ামক। এখানেই সাকিব অনন্য খেলার মাঠে। তবে তিনি পিছিয়ে পড়ছেন তার ব্যবসায়ী চরিত্রের ব্যর্থতার কারণে। ফিজিবিলিটি স্টাডি, হোমওয়ার্ক, আর ঠিকঠাক টিমওয়ার্কের ঘাটতি স্পষ্ট ব্যবসায়ী সাকিবের পরিকল্পনায়। মানুষ ঠেকেও শেখে, এখন সাকিব কি সেই পথ ধরবেন?

ক্যারিয়ারের শেষলগ্নে এসে প্রতিনিয়ত রেকর্ডবুক সচল করে রেখেছেন। চলতি সিরিজে ওয়ানডেতে ৭ হাজার রান ও ৩০০ উইকেটের বিরল ক্লাবে যোগ দিয়েছেন, যেখানে আছেন কেবল সনাথ জয়াসুরিয়া ও শহীদ আফ্রিদি। এখানেও বাকি দুজনের চেয়ে অনেক উজ্জ্বল সাকিব, তার ব্যাটিং ও বোলিং গড় অন্তত তাই বলে। গত ৫-৬ বছরে মাঠের বাইরের বেশ কিছু ইস্যু, আর কিছু খামখেয়ালিপনায় অনেক ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি, ক্যারিয়ার শেষে সেটা একটা আক্ষেপ হয়েই থাকবে তার ভক্তদের কাছে। তা তিনি স্বীকার করেন আর না-ই করেন! হয়তো আর ৩-৪ বছর খেলবেন, কিন্তু এ সময়েও তার সঙ্গেই থাকবে স্পটলাইট—এ এখন সবাই জানেন। সাকিব এমন একটা জায়গায় চলে গেছেন যে তার আবদার অন্যায্য হলেও মেনে নিতে হয় বিসিবিকে, ওই মরুভূমির বালুতে উটের মুখ লুকানোর মতো! এড়িয়ে যাওয়া অথবা কেউ দেখেনি, কেউ শোনেনি। কথায় বলে, যে গরু দুধ দেয়, তার লাথি খাওয়াও নাকি ভালো!

লেখক : সাংবাদিক।

Link copied!