• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

সমর্থকদের জন্য একটা বিজ্ঞাপন দিতে পারেন সাকিবরা


অঘোর মন্ডল
প্রকাশিত: আগস্ট ৩১, ২০২২, ১১:৫০ এএম
সমর্থকদের জন্য একটা বিজ্ঞাপন দিতে পারেন সাকিবরা

সাকিব আল হাসান ইদানীং অনেক হাস্যকর বিজ্ঞাপনেও অংশ নিচ্ছেন। যেসব বিজ্ঞাপনের ভাষা ঠিক বাংলাদেশ দলের অধিনায়কের সঙ্গে যায় না। তবে তিনি কোন পণ্যের মডেল হবেন, কোনটা তার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে মানানসই—এসব বিষয়ে জ্ঞান দেওয়া পেশাদারত্বের বাউন্ডারি লাইন অতিক্রম করে যাওয়া।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত না নিলে কী হতো? বাংলাদেশ-আফগান ‘মহাযুদ্ধ’টা হয়তো দেখা যেত। হয়তো দেখা যেত না। তবে ম্যাচ হারের শোকে দেশের মানুষকে এত ক্লিষ্ট মনে হতো না। আবার হয়তো তা-ও না। এই মানুষগুলোই হয়তো বলতেন, ‘টস জিতে কেন আগে ব্যাটিং নিল!’ আসলে হারলে হাড়িকাঠে একজনেরই প্রাণ যায়। তিনি অধিনায়ক।

তাই সাকিব এবং তার দল মিলে দেশের ক্রিকেট সমর্থকদের উদ্দেশে একটি বিজ্ঞাপন দিতে পারেন। সেটা প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া দুই জায়গায়ই, ‘আপনারা আমাদের একনিষ্ঠ শুভানুধ্যায়ী। আপনাদের সমর্থনের ওপর সব সময় আমরা ভরসা রাখি। কিন্তু মাঝেমধ্যে আপনারা আমাদের ওপর ভরসা রাখতে পারেন না। কারণ, আমরা আপনাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারি না। তবু ধন্যবাদ, আমাদের পাশে থাকার জন্য। সামনে যেসব জয় অপেক্ষা করছে, তার জন্য শুভেচ্ছা চেয়ে রাখছি।’

দেশের মানুষ ক্রিকেট ভালোবাসেন। ক্রিকেটারদের শ্রদ্ধা করেন। কিন্তু সেই ভালোবাসার মূল্য তারা খুব কমই পান। যে কারণে রাগ-ক্ষোভ-হতাশাটা তাদের একটু বেশি। আফগানিস্তান বাংলাদেশকে হারিয়েছে ৭ উইকেটে, ৯ বল বাকি থাকতে। সেটা বাংলাদেশের ১২৭ রান তাড়া করে। আজ থেকে বহু বছর পর কেউ যদি স্কোরকার্ড ওল্টাতে ওল্টাতে ম্যাচটা ভাবতে বসেন, তিনি অবলীলায় উপসংহার টেনে দেবেন, খুব সহজ জয় পেয়েছিল আফগানরা। বিষয়টা কিন্তু একপর্যায়ে মোটেও তা ছিল না। অল্প পুঁজি নিয়েও জয়ের সম্ভাবনাকে বাঁচিয়ে রেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শেষ দিকে আফগানদের ক্যালকুলেটিভ ব্যাটিংয়ে ক্লিনিক্যাল ফিনিশ করল তারা। আর বাংলাদেশ দল এবং সমর্থকরা সেই গড়পড়তা আক্ষেপের কথাই বলতে শুরু করলেন—আর ১৫-২০টা রান বেশি করতে পারলেই হতো!

হতো হয়তো। আবার হয়তো না। তবে এটা ঠিক, বাংলাদেশ দলের টপ মিডল অর্ডার যেভাবে তছনছ হয়ে গেল; ‘মুজিব’ নামের এক আফগান ক্ষেপণাস্ত্রে। তাতে বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং সামর্থ্য নিয়ে প্রশ্ন জাগছে। সেটা আগে বা পরে যখনই ব্যাট করুন না কেন। এই দলটার ব্যাটারদের গড় স্ট্রাইক রেট এক শর নিচে তাদের কাছে খুব বড় রান আশা করা ঠিক না। মুশফিক-মাহমুদউল্ল্যাহ অভিজ্ঞ। কিন্তু তারা এখন অস্তাচলে। আর নাইম শেখ-মেহেদী, মিরাজ-আফিফ-মোসাদ্দেকরা এখনো নিজেদের জায়গাটা দলে পাকা করার রাস্তাটা খুঁজে পাচ্ছেন না! আফগান বোলারদের ঔদ্ধত্যের সামনেই তারা কুঁকড়ে গেলেন। অন্যদের সামনে কী করবে কে জানে!

তবে হ্যাঁ, এশিয়া কাপের সুপার ফোরে জায়গা করে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের জন্য সমীকরণটা সহজ করে দিয়েছে আফগানরা। শুধু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটা জিতলেই হবে। সেই ম্যাচটাকেই ‘পাখির চোখ’ করুক বাংলাদেশ। ওই ম্যাচের জয়টাই হতে পারে বাংলাদেশের এশিয়া কাপের সুপার ফোরের হাইওয়েতে চলার লাইসেন্স।

আফগানদের বিপক্ষে হারটা দুঃখের। মর্মান্তিক। তারপরও আফগান মডেলেই খেলে লঙ্কানদের হারিয়ে, সুপার ফোরে উঠতে পারে বাংলাদেশ। আফগানদের দেখেও বাংলাদেশের শেখা উচিত, কীভাবে ওরা দিনে দিনে উন্নতি করছে। আর একটা ম্যাচ হারে এশিয়া কাপে বাংলাদেশের স্বপ্নের ‘দাফন’ হয়ে গেছে,তা তো নয়! শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগে হাল ছাড়ার কিছু নেই। ওরা তো আর অপ্রতিরোধ্য নয়।

তবে হ্যাঁ, আধুনিক ক্রিকেটে কোচের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে। সেটা এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ মিস করছে। তা সেই কোচের নাম রাসেল ক্রো হোক বা রাসেল ডমিঙ্গো হোক। কারণ, টিম যখন চাপে থাকে, তখন টিমের পাশে দাঁড়ান কোচ। বাংলাদেশ যে হেড কোচ ছাড়াই এশিয়া কাপ খেলছে। আধুনিক ক্রিকেটে এ-ও এক নতুন মডেল!

লেখক :সিনিয়র জার্নালিস্ট ও কলাম লেখক

Link copied!