• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

মোকতাদির চৌধুরীর আবিষ্কার: অদ্বিতীয় শেখ কামাল


সাদাত উল্লাহ খান
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১, ০৬:১১ পিএম
মোকতাদির চৌধুরীর আবিষ্কার: অদ্বিতীয় শেখ কামাল

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। কিন্তু বাস্তবে আওয়ামী লীগ নাই। যাবতীয় প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড এখন আমলাদের হাতে। সরকার যত বেশি আমলা নির্ভর হয়েছে তত বেশি রাজনীতিবিদরা ক্ষমতা ও জনগণ থেকে দূরে সরে গেছে।  দেশের আনাচেকানাচে মুজিব কোট ব্যবহারকারীর দাপট দৃশ্যমান হচ্ছে। দেশে করোনাকালে জনগণ যখন গৃহবন্দি তখনই সরকার ত্রাণকার্যের দায়িত্ব ৬৪ জেলায় ৬৪ জন আমলার হাতে তুলে দেয়। এমন সিদ্ধান্ত ভ্রান্ত, জনগণকে ভ্রান্ত বার্তা দেয়, আমলাদের দাপট বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়—রাজনীতিবিদদের বাহ্যত ও কার্যত করা হয় হেয়—অসহায়। এটা গণতন্ত্রের জন্য কোন শুভবার্তা বহন করে না। ঔপনিবেশিক শাসন ও শোষণের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। অনেক রসিক সমালোচক ও বিশ্লেষক বলেন দেশে এখন রাজনৈতিক কাক, কোকিল ও শকুনের ভিড়ে সত্যিকার দেশপ্রেমিক, অসাম্প্রদায়িক, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ আসল আওয়ামী লীগ অনুবীক্ষণ অথবা দূরবীক্ষণ কোন যন্ত্র দিয়েই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।  কেন আজ রাজনীতির এমন অবস্থা? সাহস করে কেউ কি বলবেন? দেশের রাজনীতিবিদরা কেন এখন কথা বলেন না? লিখেন না? পুরানো একটা প্রবাদ বারবার প্রাসঙ্গিক হয়ে জাতির সামনে দেখা দেয়: অন্ধ হলে প্রলয় বন্ধ হয় না।

এমন এক অবস্থায় দেশে শিক্ষা, সংস্কৃতি, জ্ঞানবিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতি ও জনকল্যাণে নিবেদিত একজন রাজনীতিবিদ হলেন জনাব র.আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে, বিশেষ করে বর্তমানে এমন বিনয়ী, শিক্ষানুরাগী এবং লেখক - সাহিত্যিকবান্ধব রাজনীতিবিদ বাস্তবিক অর্থেই বিরল। রাজনীতিবিদ ও লেখক—চিন্তাবিদ হিসেবে জনাব মোকতাদির চৌধুরী একজন ব্যতিক্রম। প্রকৃত রাজনীতিবিদরা এখন রাজনীতিতে যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা প্রয়োগ করতে পারছেন না। ফলে সত্যিকার জনবান্ধব নেতৃত্ব যথার্থ অবস্থানে গিয়ে দেশ ও জনগণকে সেবা দানে আত্মনিয়োগ করতে পারছেন না। তারপরও সহজাত দেশপ্রেম, সাহস ও প্রতিভা বলে দেশ ও সংস্কৃতির সেবা করে চলেছেন জনাব মোকতাদির চৌধুরী। তাঁকে যারা কাছ থেকে দেখেছেন, তাঁর সাথে আন্তরিকভাবে মেলামেশার সুযোগ পেয়েছেন এবং  তাঁর দ্বারা সরাসরি উপকৃত হয়েছেন—তাদেরই কেউ কেউ জনাব চৌধুরী সম্পর্কে দু’চার কথা বলেছেন।

মানুষ, বিশেষ করে কবি-সাহিত্যিকরা কেন জনাব মোকতাদির চৌধুরীকে ভালবাসেন? কারণ যারাই তাঁর কাছে এসেছেন—তাঁর কথায়, আদরে-আপ্যায়নে, ব্যবহারে, বাক্যে ও সমাদরে সবাই বিমোহিত হয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক ও কর্মজীবনে যারাই সারা দেশে মেলামেশার সুযোগ পেয়েছেন সবাইকে তিনি পরম ভালবাসায় আপন করে গ্রহণ করেছেন। হয়তো এই আলোকেই কবি আবু হাসান শাহরিয়ার বলেন একজন বহুরৈখিক মানুষ, শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়ারই নয়, ঢাকার কবি— লেখকেরও প্রিয় মানুষ মোকতাদির চৌধুরী।

জনাব মোকতাদির চৌধুরী সম্পর্কে অনেকে কথা বলেছেন ও লিখেছেন। তাদের কথা থেকেও অনেকে জানতে পারবেন আসলে জনাব চৌধুরী কেমন চরিত্রের ও ব্যক্তিত্বের মানুষ। সকল মানুষতো আর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ব্যক্তিগতভাবে জানার সুযোগ পান না। তাই ইতিহাস, স্মৃতিকথা, আলোচনা-সমালোচনা ও অন্যদের অভিজ্ঞতা থেকেও জানা যায়। বাহির থেকে জানা আর ভেতর থেকে জানার মধ্যেও ফারাক থাকে।  জনাব মোকতাদির চৌধুরীর বাল্যবন্ধুদের একজন হলেন আজিজুল হক। তাই আজিজুল হক একেবারে বাল্যকাল থেকে  মোকতাদির চৌধুরীকে খুব কাছ থেকেই দেখেছেন, মিলেছেন, মিশেছেন এবং নানাবিধ বিষয়ে আলাপ - আলোচনা করেছেন।  তাঁর কথায় ও লেখায় আমরা জনাব মোকতাদির চৌধুরীর সংস্কৃতি, রুচি ও চরিত্র সম্পর্কে ভেতরের চিত্র জানতে পারি। জনাব আজিজুল হক বলেন: বলিষ্ঠ ব্যক্তিত্বের অধিকারী ও সৎ চরিত্রবান, সুশিক্ষিত মানুষ হিসেবে মোকতাদির সবার জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে—এ কথা হলফ করে বলা যায়। কোনো মানুষ যখন অন্যের অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে, চরিত্রে ও সংস্কৃতিতে প্রতীক হয়ে দাঁড়ান—এর পেছনে নিশ্চয় কোন না কোন কারণ থাকে।

জনাব মোকতাদির চৌধুরী কেন অনুকরণীয় ও অনুস্মরণীয় মানুষ হলেন  প্রসঙ্গে জনাব আজিজুল হক বলেন : প্রথাগত রাজনীতিবিদদের মতো রবিউল রাজনীতিকে নিজের স্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ব্যবহার না করে গণমানুষের সেবা করার উদ্দেশ্য হিসেবে করেছে। শিক্ষা বিস্তারে তাঁর দৃশ্যমান অগ্রগতি অন্য সবার জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে। আমাদের সমাজ এখনও অপরিপক্ব। তাই যথাযোগ্য ব্যক্তি যথাযোগ্য সমাদর ও সম্মান পান না। যদি সমাজ সমাদর ও সম্মান জানাতে ব্যর্থ হয় তবে রাষ্ট্রও তাই। বর্তমানে বাংলাদেশে রাষ্ট্রও যথাযোগ্য জ্ঞানীকে যথাযথ সম্মান ও মর্যাদা দিতে পদে পদে ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে।

সমাজে ও রাষ্ট্রে জ্ঞানীগুণী তৈরি করতে হলে অবশ্যই সমাজে ও রাষ্ট্রের জ্ঞানীগুণীদের যথাযোগ্য সম্মান ও সমাদর জানাতে হবে। সমাদর ও সম্মান জ্ঞাপনের বিষয়ে জনাব মোকতাদির চৌধুরী একজন আদর্শ ও প্রতীক।  জনাব চৌধুরী একজন বহুমাত্রিক ব্যক্তি। এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক মো. মোখলেছুর রহমান খান বলেন: তাঁর পড়াশুনা কেবল একাডেমিক এবং পুঁথিগত নয়, বরং তাঁর ছাত্রত্ব আজীবনের। এ কারণে তিনি বহুভাষাবিদ। বাংলা, ইংরেজি, আরবি, উর্দু, ফারসি ইত্যাদি বেশ কয়েকটি ভাষায় সুপণ্ডিত। ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতিতে যুক্ত থেকেও তিনি পাঠজগত থেকে কখনো বিছিন্ন হননি। অধ্যাপক মো. মোখলেছুর রহমানের কথার আলোকে বলা যায় — এমন বহুভাষাবিদ ও পণ্ডিত ব্যক্তি কতজন বাংলাদেশের  রাজনীতিতে বহাল আছেন?

জনাব মোকতাদির চৌধুরীর সহজাত বৈশিষ্ট্য ও অভিজ্ঞতা তাঁকে কল্যাণধর্মী ও জনবান্ধব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে ধীরে ধীরে গড়ে তুলেছে।  তাঁর রাজনৈতিক চরিত্র কী? জবাবে বলা যায়, তিনি হলেন অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনায় সমৃদ্ধ মানুষ।  তাঁর মেধা,  শ্রম ও সাধনার সমন্বিত প্রয়াসে তিনি একজন গণমানুষের নেতা হিসেবে উদিত হয়েছেন। তাঁর রাজনৈতিক পথচলা কখনো সহজসরল ছিল না এবং এখনো দুস্তর।

জনাব মোকতাদির চৌধুরীর দক্ষতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে  সাংবাদিক অজয় দাশগুপ্ত বলেন : তিনি যে কোনো  দায়িত্ব পালনে দৃঢ়সংকল্প, কোনো বাধা এলে তা অপসারণের পথ খুঁজে নিতে জানেন। জনাব চৌধুরীর সাহসী ও গণমুখী রাজনীতি প্রসঙ্গে এস. আর. এম. ওসমান গনি সজীব বলেন:  বাংলাদেশের আর কোন সংসদ সদস্য এতটা জবাবদিহিতার রাজনীতি করেন বলে আমাদের জানা নেই। ভূমিদস্যুতা, টেন্ডারবাজি, দলীয়করণ, রাহাজানি, রাজনৈতিক সংঘাত, সামাজিক দ্বন্ধ তিনি শুন্যের কোটায় নিয়ে আসতে প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তিনি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার যে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তা সত্যিই অনুকরণীয়।

জনাব মোকতাদির চৌধুরী নানা কারণে বাংলাদেশের প্রচলিত রাজনীতিবিদ থেকে আলাদা। আমরা জানি মানুষের কর্ম ও সৃজনই আসল পরিচয়। জনাব চৌধুরী শিক্ষা-দীক্ষা, মূল্যবোধ ও ন্যায়নীতির দিক থেকে আলাদা একটা অবস্থান সৃষ্টি করেছেন। তাঁর দূরদর্শী দৃষ্টিভঙ্গি ও প্রগতিশীল কল্যাণ চেতনা তাঁর কর্ম ও সৃজনশীলতাকে বেগবান করেছে। আর মানুষের প্রতি ভালবাসা, সমাজের কল্যাণ ও শিক্ষার প্রসারে নিরন্তর কর্মই তাকে আজ সংকটের সময়েও জনগণের প্রিয় নেতা হিসেবে জনমানসে পাকাপোক্ত আসন প্রদান করেছে। একজন আদর্শ নেতার জন্য  এটা বড় পুরস্কার।

 

জনাব মোকতাদির চৌধুরীর কর্ম ও জীবন কেন এবং কিভাবে আমাদের সমাজের জন্য, সাহিত্যের জন্য এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য সহায়ক হতে পারে সে সম্পর্কে অধ্যক্ষ মকবুল আহাম্মদ-এর বক্তব্য উল্লেখযোগ্য। অধ্যক্ষ মকবুল আহাম্মদ বলেন : জন্মগতভাবেই মোকতাদির চৌধুরী প্রতিভাবান।  তাঁকে প্রতিভার বরপুত্র বললেও অত্যুক্তি হবে না। একবার প্রতিভা যাকে স্পর্শ করবে ব্যর্থতার গ্লানি তাকে ছুঁতে পারবে না। প্রতিভা শব্দটির অর্থ হলো — স্বভাবজাত অসামান্য বুদ্ধি, প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব, তাৎক্ষণিক উদ্ভাবনী শক্তি, অপূর্ব নির্মাণশক্তিসম্পন্ন প্রজ্ঞা। অভিজ্ঞতাজাত সঞ্চিত জ্ঞানকে মুহূর্তে ব্যবহার করার ক্ষমতাই প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব। অপরদিকে অসাধারণ বুদ্ধির দ্বারা স্বভাবজাত শক্তির ব্যবহার করে মানবকল্যাণে আবিষ্কারের নিরন্তর চেষ্টা, নতুন নতুন তত্ত্ব ও তথ্যের প্রায়োগিক প্রয়াস হলো প্রতিভা। প্রতিভা আর প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব — এ দুটি গুণের সমন্বয় ঘটলে সৃষ্টি হয় পরশপাথর। মোকতাদির চৌধুরী একটি পরশপাথরের নাম।

এই পরশপাথরের অনেক রাজনৈতিক কর্মের মধ্যে সৃজনশীল কর্মও আছে। তাঁর উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে আছে:

১. বঙ্গবন্ধু  স্বাধীনতা এবং বিবিধ প্রসঙ্গ।

২. ইসলাম, সন্ত্রাসবাদ, রাজনীতি ও প্রশাসন।

৩. সময়ের কথকতা।

৪. দুরারোগ্য সময় এবং গণতন্ত্রের অভিযাত্রা।

৫. জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান : জীবন ও কর্ম।

৬. ইসলামের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল (মদিনা সনদ, হুদাবিয়ার সন্ধি এবং বিদায় হজে¦র ভাষণ)।

৭. স্বাধীনতা গণতন্ত্র ও সময়ের কথা।

৮. অন্য আলোয় জাতির জনক।

৯. পার্বত্য শান্তিচুক্তি : বর্তমান ও বাস্তবতা।

১০. বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনীতি।

১১. বাংলাদেশ : গণতন্ত্র কোন পথে।

১২. সময়ের সাহসী সন্তান।

তিনি ‘সময়ের সাহসী  সন্তান’ নামক বইটি বঙ্গবন্ধুপুত্র অদ্বিতীয় শেখ কামালকে নিয়ে লিখেছেন। এই প্রসঙ্গে আমি বলতে চাই ’৭৫ এর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর থেকে আজ পর্যন্ত অন্যায়, অবিচার ও অবহেলার শিকার শেখ কামাল। অথচ শেখ কামাল হলেন একজন অসাধারণ প্রতিভা ও পরশপাথর। বাঙালি এখনো তাঁকে যথার্থভাবে চিনতে পারেনি। জনাব মোকতাদির কৃতিত্ব এখানেই তিনি শেখ কামাল সম্পর্কে সর্বপ্রথম একটা পূর্ণাঙ্গ বই লিখে জাতির সামনে হাজির করেছেন। আমি জোরের সাথে বলতে চাই জনাব মোকতাদির চৌধুরীর রাজনৈতিক জীবনে সর্বশ্রেষ্ঠ আবিষ্কার হল অদ্বিতীয় শেখ কামাল।

আমরা শেখ কামালকে কতটুকু জানি? তিনি সমাজে পরিচিতি অর্জন করেছেন একজন ক্রীড়াবিদ, ক্রীড়া সংগঠক, সেতারবাদক, অভিনেতা, নাট্য সংগঠক, সংগীত সংগঠক, ক্রিকেটার, বাস্কেটবল, বলিবল খেলোয়াড়, মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনীতিবিদ ইত্যাদি নানা উপাধিতে।  এসবই সত্য। বাস্তব। এসবের বাইরেও তাঁর একটা মৌলিক শিক্ষাগত পরিচয় আছে। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক  সম্মান ও স্নাতকোত্তর উপাধি লাভ করেছেন। আমরা এখানে দেখব শেখ কামালের ব্যক্তিজীবনে, সংস্কৃতিতে, রাজনীতিতে এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে সমাজবিজ্ঞান কেমন প্রভাব বিস্তার করেছে। তিনি বিয়ে করেছিলেন সুলতানা কামাল খুকিকে।

শেখ কামাল বাল্যকাল থেকে মিশুক ছিলেন। তাঁর জন্ম ১৯৪৯ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় হলেও পড়ালেখা করেছেন ঢাকায়। ঢাকার সেগুন বাগিচায় ডনস্ স্কুলে পড়ালেখা করেছেন, শাহীন স্কুল থেকে ১৯৬৭ সালে এসএসসি এবং ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেন। আর একই বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং ভারতে যুদ্ধ প্রশিক্ষণ শেষে মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। যুদ্ধ চলাকালে তিনি মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল আতাউল গণি ওসমানির এডিসি (এইড-দ্য-ক্যাম্প) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যুদ্ধ শেষে সামরিক বাহিনী থেকে অবসর নিয়ে আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখায় ফিরে আসেন। অন্যান্য কাজের হাজারো কর্মব্যস্ততার মাঝেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক পড়ালেখা অব্যাহত রাখেন। ইতিমধ্যে তাঁর খ্যাতি ও কর্মপরিসর বিস্তৃতি লাভ করে আর তাঁর মাথায় নানাবিধ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও দেশগঠনমূলক চিন্তা প্রসার লাভ করে। ১৯৭৪ সালে তিনি সমাজবিজ্ঞানে সম্মান শেষ পরীক্ষা পঞ্চম স্থান অর্জন করেন। আর ১৯৭৫ সালে এম.এস.এস. পরীক্ষা শেষ করেন এবং মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন আগে ১২ আগস্ট (১৯৭৫) তারিখে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেন। শেখ কামালের মৃত্যুর পর পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ হয় এবং তিনি কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন।

শেখ কামাল সম্পর্কে র. আ.ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীর ভাষ্য, বর্তমান প্রজন্মের সামনে শেখ কামালের কথা ও ইতিহাস তুলে ধরতে হলে আমাদের বারবার তাঁর সহযোগী, সহযোদ্ধা এবং বন্ধুদের কাছেই ফিরে যেতে হয়। অবশ্য যাঁরা শেখ কামালের স্মৃতিকে শুধু হৃদয়ে ধারণ করেছেন তাঁদের কাছেই নয়, যাঁরা তাঁর স্মৃতিকে লিখিতভাবে প্রকাশ ও প্রচার করেছেন তাঁদের কাছে। তাঁদের মধ্যে  অন্যতম হলেন জনাব র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী। তিনি শেখ কামালের খেলাধুলার বিষয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে আলোচিত ব্যক্তিত্ব হচ্ছেন শেখ কামাল। আরোপিত নয়, নিজ গুণে তিনি এ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন। বাংলাদেশের আধুনিক ফুটবলের জনক বলা হয় তাঁকে। দেশের অন্যতম সেরা ক্রীড়া সংগঠন ‘আবাহনী’ তারই সৃষ্টি। বন্ধুদের নিয়ে ষাটের দশকের শেষার্ধে সূচনা করেছিলেন ‘আবাহনী ক্রীড়াচক্রে’র, যা আজ পরিণত হয়েছে এক বিশাল মহীরূহে। এই আবাহনীকে দিয়েই আধুনিক ফুটবলের সূচনা স্বাধীনতা উত্তর সময়ে। শুধু একজন সফল ও সৃষ্টিশীল সংগঠকই নন, তিনি নিজে একজন বড় মাপের ক্রীড়াবিদও ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১ম বিভাগে ক্রিকেট খেলতেন তিনি। আবাহনী ক্রীড়াচক্রের ক্রিকেট টিমেও তিনি অংশ নিয়েছেন। বাস্কেটবলও খেলতেন শেখ কামাল।  বাংলাদেশের ক্রীড়াজগতের আধুনিকায়ন, আবাহনী ক্রীড়াচক্র আর শেখ কামাল—এই তিন মিলে এক হয়ে আছে (র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সময়ের সাহসী সন্তান, ঢাকা, ২০১৬, পৃ. ৩২)।

সবাই জানেন শেখ কামাল একজন বিশিষ্ট ক্রীড়া প্রতিভা। আবাহনী ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে শেখ কামাল অমর হয়ে আছেন। শেখ কামাল হলেন বাংলাদেশের আধুনিক ফুটবলের প্রবর্তক। খেলাধুলার প্রতি তাঁর ছিল সহজাত আকর্ষণ। আগেই উল্লেখ করেছি জনাব র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী শেখ কামালের একজন আন্তরিক সহযোদ্ধা। শেখ কামাল সম্পর্কে তাঁর রয়েছে অনেক আন্তরিক স্মৃতি। তিনি বলেন, ‘সর্বোতভাবেই শেখ কামাল একজন চৌকশ যুবক ছিলেন। সেতারবাদক, ক্রিকেট খেলোয়াড়, নাট্যকর্মী, সাংস্কৃতিক সংগঠক ও ক্রীড়া সংগঠক হিসেবে তিনি প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। (র. আ. ম. উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী, সময়ের সাহসী সন্তান, ঢাকা, ২০১৬, পৃ. ৪১)

 

লেখক: সম্পাদক, প্রতি বুদ্ধিজীবী

 

Link copied!